শিবগঞ্জের (বগুড়া) হরিপুর থেকে: বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর)। ঘড়ির কাটায় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা।
দুর্বৃত্তের ছোড়া গুলিতে মসজিদের মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন মোয়াজ্জেম হোসেন, মাওলানা শাহিনুর, আবু তাহের ও আফতাব আলী। এ সময় অন্য মুসল্লিরা প্রাণে বাঁচতে মসজিদের ভেতরের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেন। অবশ্য কয়েকজন মুসল্লি হাতে বাটাম তুলে নেন। কিন্তু এরই মধ্যে দুর্বৃত্তরা ৪০ সেকেন্ডের অপারেশন শেষে মসজিদের প্রাচীর টপকে পালিয়ে যায়।
শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) বেলা ১০টার দিকে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কিচক ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামে সরেজমিনে গেলে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা হলে এসব তথ্য ওঠে আসে।
এ ঘটনায় আহতদের মধ্যে মসজিদের মোয়াজ্জিন মোয়াজ্জেম, ইমাম মাওলানা শাহিনুর ও মুসল্লি আবু তাহেরকে উদ্ধার করে দ্রুত বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শজিমেক) পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মোয়াজ্জেম হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে ঘটনার পর থেকে এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত পুরো ঘটনাস্থল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘিরে রেখেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী সদর, কিচক ও আটমুল এলাকায় শিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদ-ই-আল মোস্তফা জামে মসজিদের অবস্থান। কিচক-আলিয়াহাট আঞ্চলিক সড়কের পাশ থেকে একটি গলি পথে মসজিদটিতে প্রবেশ করতে হয়।
মসজিদটির ভেতরে প্রবেশ করার জন্য তিনটি কাঠের দরজা রয়েছে। এছাড়া ভেতরে উত্তর-দক্ষিণ পাশে চারটি করে মোট আটটি জানালা রয়েছে। এসব জানালায় কাচ লাগানো রয়েছে। তবে বেশির ভাগ সময় মসজিদে প্রবেশ করার জন্য দক্ষিণ পাশের একটি মাত্র দরজা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এই দরজা ব্যবহার করে দুর্বৃত্তরা মসজিদে নামাজরত মুসল্লিদের ওপর গুলি চালায়। মসজিদের একটি পিলারের গায়ে ৫টি গুলির চিহৃ রয়েছে। এছাড়া মসজিদের মেঝেতে রক্তের দাগ লেগে রয়েছে।
শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকতার হোসেনের নেতৃত্বে একটি ফরেনসিক দল আলামত পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। এর আগে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৭টি গুলির খোসা উদ্ধার করেছে। তবে তদন্ত ছাড়া কোনো কিছু সঠিক করে বলা যাবে না বলে পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান।
মাহফেজ উদ্দিন, ফারুক হোসেন, ফরহাদ, সোনা মিয়া, আব্দুর রশিদ, এরফান আলীসহ একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বাংলানিউজকে জানান, মুসল্লির বেশ ধরে মসজিদের দক্ষিণ দরজার সামনে তিনজন অজ্ঞাত যুবক অবস্থান নিয়েই মসজিদের ভেতরে অবস্থানরত মুসল্লিদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। যাদের প্রত্যেকের বয়স ২০-২২ বছর হবে। তবে মসজিদের বাইরের কোনো দুর্বৃত্ত ছিল কী-না তারা তা জানাতে পারেন নি।
তারা আরো জানান, মাগরিব নামাজ শেষ করে মুসল্লিরা বিভিন্ন দোয়া দরুদ পড়ছিলেন। এরই মাঝে এশার নামাজের সময় এসে যায়। সে অনুযায়ী মুসল্লিরা এশার নামাজ শুরু করেন। বেশ কিছু মুসল্লির নামাজও তখন শেষ পর্যায়ে।
ঠিক সেই মুহুর্তে গুলির শব্দ। দুর্বৃত্তরা এসব গুলি নামাজরত মুসল্লিদের ওপর চালায়। এসময় মসজিদের ভেতর ১৫-২০জন মুসল্লি অবস্থান করছিল। তখন সবাই জীবন বাঁচাতে মসজিদের ভেতরে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। অনেকেই মসজিদের মেঝেতে শুয়ে পড়েন। আবার কেউ কেউ গুলি থেকে বাঁচতে কোনায় কোনায় অবস্থান নেন।
কিন্তু দুর্বৃত্তরা এই কাজটি করতে সর্বোচ্চ ৪০ সেকেন্ডের মত সময় নেয়। এরপরই তারা মিশন শেষ করে মসজিদের গলিপথ ব্যবহার না করে প্রাচীর টপকে পালিয়ে যায় বলে এসব প্রত্যক্ষদর্শী জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৫
এমবিএইচ/বিএস
** মোয়াজ্জেমের খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি