ঢাকা: বিদেশ থেকে অবৈধপথে আনা ক্লোন (নকল) হ্যান্ডসেট ও আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুপমেন্ট আইডেন্টিটি) নম্বর নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
নিজেদের আড়াল করতে সন্ত্রাসীরা এসব হ্যান্ডসেট ব্যবহার করে হত্যার হুমকি, চাঁদা দাবিসহ নানা অপরাধ করছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, একাধিক সিন্ডিকেট বিদেশ থেকে ক্লোন হ্যান্ডসেট দেশে আনছে। এসব ক্লোন সেটে কোনো আইএমইআই নম্বর থাকে না। নকল আইএমইআই নম্বর নিয়ে বিক্রি করা হয় এসব হ্যান্ডসেট।
শুধু তাই নয়, সফটওয়্যার দিয়ে একটি আইএমইআই নম্বরকে নকল করে কয়েকশ’ নম্বর তৈরি করছেন সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
আর একই আইএমইআই নম্বর শত শত মোবাইল সেটে ব্যবহৃত হওয়ায় অপরাধীদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। পরে পুলিশ তদন্তে জানা যায়, আইএমইআই নম্বর ক্লোন করা মোবাইল হ্যান্ডসেট থেকে তাদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, মোবাইলে সংঘটিত একটি অপরাধের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে প্রথমে একটি আইএমইআই শনাক্ত করি।
পরে ওই আইএমইআই নম্বর ধরে বিস্তারিত তদন্তে গিয়ে দেখতে পাই, একই আইএমইআই নম্বরে একাধিক হ্যান্ডসেট দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে আসল অপরাধীকে শনাক্ত করতে বেশ জটিলতায় পড়তে হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের স্থলসীমান্ত ও বিমানবন্দর দিয়ে বিদেশ থেকে ক্লোন হ্যান্ডসেট দেশে আসছে। বিশেষ করে চীন ও ইন্দোনেশিয়া থেকে নকল হ্যান্ডসেট নিয়ে আসছে একাধিক সিন্ডিকেট।
চলতি বছরে শুল্ক বিভাগ, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে কয়েক হাজার নকল হ্যান্ডসেট জব্দ করেছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) দেওয়া তথ্য মতে, দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৩ কোটি। আর হ্যান্ডসেটের বার্ষিক চাহিদা দুই কোটির বেশি। হ্যান্ডসেটের এ বিপুল চাহিদাকে পুঁজি করে দেশের এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী আইএমইআই নম্বর নকল করে সেট বিক্রি করছেন।
বিটিআরসি’র কর্মকর্তারা জানান, হ্যান্ডসেট আমদানির জন্য সংস্থাটির অনুমোদন নিতে হয়। আমদানিকৃত প্রতিটি হ্যান্ডসেটের আইএমইআই নম্বর বিটিআরসিতে জমা দিতে হয়। কিন্তু এসব নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বিপুল সংখ্যক হ্যান্ডসেট বাজারে বিক্রি করছেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী।
হ্যান্ডসেট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে হ্যান্ডসেটের মোট চাহিদার ৬৫ শতাংশই আসে অবৈধ পথে। আর মার্কেটগুলোতে সাধারণত তিন ধরনের হ্যান্ডসেট পাওয়া যায়। সেগুলো হচ্ছে- ব্র্যান্ডের আসল হ্যান্ডসেট, ব্যবহৃত পুরনো হ্যান্ডসেট আর সম্পূর্ণ নকল বা ক্লোন হ্যান্ডসেট।
এসব ক্লোন হ্যান্ডসেট আমদানি বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও বিটিআরসিকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার দাবি জানান ব্যবসায়ীরা।
শরিফুল ইসলাম শরীফ নামের এক চাকরিজীবী বাংলানিউজকে জানান, ক্লোন হ্যান্ডসেটগুলো হুবহু আসল হ্যান্ডসেটের মতো দেখতে। একজন সাধারণ ক্রেতার পক্ষে তা চেনা সম্ভব নয়।
তাই ক্লোন হ্যান্ডসেট বন্ধে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে জোরালো ভূমিকা রাখার দাবি জানান তিনি।
বিটিআরসি’র সচিব মো. সরওয়ার আলম বাংলানিউজকে বলেন, নকল হ্যান্ডসেটগুলো অবৈধ পথে দেশে আসছে। সফটওয়্যার ব্যবহার করে আসল আইএমআই নম্বর নকল করে ওইসব হ্যান্ডসেটে সেগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এসব হ্যান্ডসেট ব্যবহার করে নানা অপরাধ করে যাচ্ছেন অপরাধীরা।
অবৈধ সিম বন্ধে চলমান রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শেষ হলে নকল আইএমআই নম্বর ব্যবহৃত হ্যান্ডসেট বন্ধে অভিযান শুরু করা হবে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে দেখভালের জন্য একটি আলাদা উইং গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, হত্যার হুমকি, চাঁদা দাবিসহ নানা অপরাধে ক্লোন হ্যান্ডসেট ও ক্লোন নম্বর ব্যবহার করছেন সন্ত্রাসীরা। এসব সন্ত্রাসীদের ধরতে পুলিশ কাজ করছে।
‘সম্প্রতি আনিসুজ্জামান স্যারকে হত্যার হুমকি দেন সন্ত্রাসীরা। পরে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা গেছে, ক্লোন নম্বর ব্যবহার করে তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে’ - বলেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৫
এনএ/জেডএস/এএসআর