ঢাকা: কাগজের মূল্য বৃদ্ধিতে সরবরাহ ঠিক না থাকা ও নিম্নমানের কাগজ এবং ‘নিষিদ্ধ নোটবই’ ছাপানোর কাজে ছাপাখানাগুলো ব্যস্ত থাকায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রাথমিকের পাঠ্যবই উপজেলা পর্যায় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে বছরের প্রথম দিন সারা দেশের সব খুদে শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া বিলম্বিত হতে পারে।
প্রকাশকেরা বলছেন, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে প্রতি টন কাগজ ৩-৫ হাজার টাকা বেশি দরে কিনতে গেলেও ঠিকমতো সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। আবার অনেক সময় নিম্নমানের কাগজও সরবরাহ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় বিলম্বিত হচ্ছে ছাপার কাজ। ক্ষতি পোষাতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা।
এরপরও ডিসেম্বরের মধ্যেই উপজেলা পর্যায়ে বই পৌঁছে যাবে বলে আশা করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন এনসিটিবি জানায়, ২০১৬ শিক্ষাবর্ষে ৪ কোটি ৪৪ লাখ ১৬ হাজার ৭২৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৩৩ কোটি ৩৯ লাখ ৬১ হাজার ১২৪টি বই ছাপানো হবে। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরের জন্য ১০ কোটি ৮৭ লাখ ১৯ হাজার ৯৯৭টি পাঠ্যবই ছাপানোর কথা।
তুলনামূলক কম মূল্যে দেশীয় প্রকাশকরা জোট বেঁধে যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে ছাপা শুরুর উদ্যোগ নেন। ২২টি প্রতিষ্ঠান কম মূল্যে ছাপার কাজ শরুর চিন্তা করলেও কাগজের মান ঠিক থাকবে কি-না- এ শঙ্কায় আপত্তি তোলে বিশ্বব্যাংক। পরবর্তীতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের উদ্যোগে বিষয়টি নিয়ে সমঝোতা হয়। সেপ্টেম্বরের শুরুতে ছাপা শুরু হয় প্রাথমিকের বই।
বিশ্বব্যাংকের অযাচিত শর্তে গতবারের তুলনায় দুই মাস পর ছাপার কাজ শুরু করার পর এখন প্রকাশকেরা দুই সমস্যায় পড়েছেন বলে জানান বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির চেয়ারম্যান শহীদ সেরনিয়াবাত।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, টেন্ডার নেওয়ার সময় যে মূল্য ছিল, গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে কাগজের দাম তার চেয়ে টনপ্রতি ৩-৫ হাজার টাকা বেশি নিচ্ছেন মিল মালিকরা। এতে লোকসানের শিকার হচ্ছি আমরা। ঠিকমতো কাগজ সরবরাহও পাচ্ছি না।
দ্বিতীয়ত, ছাপাখানাগুলো ‘নোটবই’ ছাপার কাজে ব্যস্ত। নিম্নমানের কাগজে নোটবই ছাপানো এবং ছাপাখানার শ্রমিকরা এসব নোটবই ছাপানোর কাজে উচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়ায় প্রাথমিকের বোর্ড বইয়ের কাজ কম করছেন।
‘কিছু’ বই গেছে জানিয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র পাল বাংলানিউজকে বলেন, ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে মাঠ পর্যায়ে সকল বই পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তারা।
এখন পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে ২৫ শতাংশের বেশি বই পৌঁছে গেছে দাবি করলেও শহীদ সেরনিয়াবাত বলেন, আশা করছি নির্ধারিত সময়ে আবশ্যিক বইগুলো পৌঁছে দিতে পারবো। আর অপশনাল বইগুলো একটু দেরিতে গেলেও সমস্যা নেই।
এদিকে কাগজের দাম বৃদ্ধি ও সরবরাহ ঠিকমতো না থাকায় মাঝে মধ্যে প্রাথমিকের বই ছাপার কাজ বন্ধ থাকছে বলে জানান এসআর প্রিন্টিং প্রেসের মালিক মোহা. শাহজালাল।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, গত কয়েকদিন চট্টগ্রামে গিয়ে কয়েকটি মিলের সঙ্গে দেন-দরবার করা হয়েছে। উপস্থিত থাকলে তারা ভালো কাগজ দেন। আর না থাকলে কাগজের মান ভালো থাকে না।
৫৪-৫৭ হাজার টাকা টন ধরে ছাপার কাজ শুরু করলেও বর্তমানে বেড়ে ৬৪ হাজার টাকা পর্যন্ত কাগজ কিনতে হচ্ছে প্রকাশকদের। কাগজের মানও তারা ঠিক রাখছেন না বলেও দাবি করেন শাহজালাল। প্রাথমিক স্তরের ৪ কোটির বেশি বই ছাপানো হয়ে গেছে বলে দাবি করেন তিনি।
সরকারের দুই মন্ত্রী দু’দফা ছাপাখানা পরিদর্শন করে নির্দেশ দিলেও ডিসেম্বরের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই পৌঁছে দিয়ে নতুন বছরের শুরুর দিন সকল শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
গত ২৮ অক্টোবর বই ছাপানোর কার্যক্রম পরিদর্শন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ওই সময় উপজেলায় প্রাথমিকের বই পৌঁছে মাত্র ১ শতাংশ।
এর আগে ১১ নভেম্বর দু’টি ছাপাখানায় আকস্মিক পরিদর্শনে এলে মন্ত্রীকে জানানো হয়, ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে বই পৌঁছে যাবে। তবে সে সময় কতোটুকু বই পৌঁছেছে তা জানানো হয়নি।
একদিকে কাগজের উচ্চমূল্য, অন্যদিকে নিম্নমানের কাগজ সরবরাহে বিলম্ব হলেও সময়মতো বই সরবরাহে মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি’র চাপের মধ্যে রয়েছেন প্রকাশকেরা।
এ অবস্থায় সময়মতো বই পাঠাতে ক্ষতি পোষাতে সরকারের কাছে প্রণোদনার দাবি তোলেন বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির চেয়ারম্যান শহীদ সেরনিয়াবাত।
পাশাপাশি ডিসেম্বর পর্যন্ত নোটবই বা সহায়ক বই ছাপানোর কাজ বন্ধ রাখার জন্য ছাপাখানাগুলোকে অনুরোধ করেন সমিতির চেয়ারম্যান।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৫
এমআইএইচ/এএসআর