ঢাকা: রাত একটা ছুঁই ছুঁই। হাসপাতালের গেটে এসে দাঁড়ালো সিএনজি চালিত একটি অটোরিকশা।
মহাখালীতে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সামনের ওই অটোরিকশা থেকে নামলো আরও এক কিশোর। দু’জন কোন রকমে বের করলো এক বৃদ্ধাকে। দুদিকে দুজন ধরে হেঁটে চললো জরুরি বিভাগের দিকে। শ্বাসকষ্টে আছেন ওই বৃদ্ধা। দুই কিশোর বহন করতে পারছিলো না, তাই এক কর্মচারী হুইল চেয়ার এগিয়ে দিলেন। নেওয়া হলো জরুরি বিভাগে, চেয়ারে বসা অবস্থাতেই অক্সিজেন। কিছুটা স্বস্তি পেল কিশোর দুজন।
রোগীর অবস্থা দেখে ভর্তির পরামর্শ দিলেন দায়িত্বরত এক চিকিৎসক। এক স্টাফ বললেন, ফ্রি-বিছানা নেই। ভর্তি করাতে হলে ভাড়া বিছানা নিতে হবে।
একটি কাগজের দিকে আঙুল উঁচিয়ে ওই স্টাফ বললেন, ঐ দেখ, প্রতিদিন ২৭৫ টাকা, ১০ দিনের অগ্রিম ভাড়া ২৭৫০ টাকা। সব সময় ১০ দিনের অগ্রিম ভাড়া জমা রাখতে হবে।
এবার প্রশ্ন- ভর্তি করাবে কিনা? তাদের দুজনের কাছে একটি মাত্র এক হাজার টাকার নোট, মিরপুর-১৪ নম্বর থেকে সিএনজি ভাড়া ২০০ টাকা, বাকি ৮০০ টাকা নিয়ে নানীকে ভর্তির আবদার করছিলো দুই কিশোর।
হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্টাফ নাছোড় বান্দা, অগ্রিম টাকা না হলে ভর্তি করাবেন না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শও দিলেন ওই দুই কিশোরকে।
কী করবে? উপায়ান্তু না পেয়ে বার বার ফোন করছে দুই কিশোর। টাকা নিয়ে আসতে গেলেও লাগবে কমপক্ষে আধাঘণ্টা। ওদিকে তাদের নানীকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন দেওয়া শেষ করে চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়েছে।
সংবাদের সন্ধানে বাংলানিউজের রিপোর্টিং ও ফটো বিভাগের দুই কর্মী আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন বক্ষব্যাধি হাসপাতালে। এই দৃশ্য দেখে কাছে গিয়ে জানতে চাইলে ওই স্টাফ বলেন, বিশ্বাস নাই। বিছানা ভাড়ার টাকা না দিলে পকেট থেকে তো আর আমরা দিতে পারবো না! সুর মেলালেন চিকিৎসক।
নাছোড় বান্দা হাসপাতালের স্টাফ, জানা গেল নাম তার অনন্ত। এক কিশোর তার মায়ের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিলেও ১০ দিনের অগ্রিম টাকা ছাড়া ভর্তি করাতে কিছুতেই রাজি নন অনন্ত। বিকাশের মাধ্যমে টাকা দিতে চাইলেও ব্যবস্থা নেই।
জানানো হলো, ভাড়া-বিছানা একটি খালি আছে, অন্য কেউ এলে বুকিং হয়ে যাবে। আর একটি ফ্রি-বিছানা খালি আছে, টিবি (যক্ষ্মা) শাখায়। কিন্তু তার নানীর যক্ষ্মায় আক্রান্তের ভয়ও দেখানো হলো। খালি থাকা একটি ভাড়া-বিছানা না যক্ষ্মা শাখার ফ্রি-বিছনা নেবে- তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় দুই কিশোর।
আরেকজন চিকিৎসক পরামর্শ দিলেন এই রোগীকে যক্ষ্মা শাখার বিছানায় ভর্তি করানো যাবে না, ক্ষতি হবে।
ফারুক নামের আরেক চিকিৎসক জানালেন, হাসপাতালের নিয়মের ব্যাপারে দিনের বেলা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
দুই চিকিৎসক ও ওই স্টাফের প্রশ্ন- আপনাদের সাংবাদিকদের প্রবেশের অনুমতি কে দিয়েছে?
জোরাজুরি আর অনুরোধের পর অনন্ত জানালেন, অন্তত পাঁচ দিনের ফি দিলেও ভর্তি করানো যাবে।
বাধ্য হয়ে আবারও ফোন করে সম্পর্কের এক মামাকে টাকা নিয়ে আসতে বললো কিশোররা। ততক্ষণে রাত দুইটা। তাদের মামা আসছেন টাকা নিয়ে, এই খবরে ভর্তির প্রক্রিয়া তখন চলমান।
টাকা আগে, না গুরুতর রোগীর ভর্তি আগে? এই প্রশ্নের উত্তর নিজেদের মধ্যে খুঁজতে লাগলো উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক শ্রেণি পড়ুয়া ওই দুই কিশোর। কেনই বা এমন নিয়ম সরকারি এ হাসপাতালে?
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৫
এমআইএইচ/এমজেএফ