ঢাকা: আপিল মামলার রায়েও মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এ আপিল মামলার রায় দেওয়া হবে আগামী ০৬ জানুয়ারি।
রায়ের দিন ধার্য হওয়ার পর অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, যে চারটি হত্যা-গণহত্যা ও ধর্ষণের দায়ে ট্রাইব্যুনালের রায়ে নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোতে সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকবে বলে আমরা আশাবাদী। বিশেষ করে একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড সীমাহীন অপরাধ বলে উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সর্বোচ্চ শাস্তিই এ অপরাধের একমাত্র সাজা। ফাঁসি ছাড়া এর অন্য কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, নিজামী আলবদরের নেতা ছিলেন। আলবদররাই বুদ্ধিজীবী হত্যা করেছে, এটাও প্রমাণিত। এর আগে আলবদর নেতা মুজাহিদ ও কাদের মোল্লারও ফাঁসি কার্যকর হয়েছে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়েই। তাই ফাঁসির রায় বহাল থাকবে বলেই ধারণা করছি।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এসকে সিনহা) নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ রায় দেবেন। অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্কের জবাবে আসামিপক্ষে যুক্তিখণ্ডন করেন নিজামীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এর মধ্য দিয়ে ১১তম কার্যদিবসে শেষ হলো আপিল মামলাটির শুনানি।
এর আগে সোমবার (০৭ ডিসেম্বর) যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। অন্যদিকে গত ৩০ নভেম্বর থেকে ০২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন কার্যদিবসে আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এস এম শাহজাহান।
এ আপিল মামলার শুনানি শুরু হয় গত ০৯ সেপ্টেম্বর থেকে। ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ছয় কার্যদিবসে ট্রাইব্যুনালের রায়সহ মামলার নথিপত্র উপস্থাপন শেষ করেন আসামিপক্ষ।
আসামিপক্ষ বলেন, অপরাধ সংঘটিত হলেও নিজামী সে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নন। এরপরও কোনো অভিযোগে যদি আদালত দোষী সাব্যস্ত করেন, তাহলে তাকে যেন চরম দণ্ড দেওয়া না হয়, সে বিষয়ে আদালতে আরজি জানান তারা।
নিজামীর বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং হত্যা-গণহত্যাসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ৮টি অর্থাৎ ১, ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৮ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয় ট্রাইব্যুনালের রায়ে।
প্রমাণিত চারটি অর্থাৎ সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়িসহ দু’টি গ্রামে প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে গণহত্যা ও প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ (২ নম্বর অভিযোগ), করমজা গ্রামে ১০ জনকে গণহত্যা, একজনকে ধর্ষণসহ বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ (৪ নম্বর অভিযোগ), ধুলাউড়ি গ্রামে ৫২ জনকে গণহত্যা (৬ নম্বর অভিযোগ) এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (১৬ নম্বর অভিযোগ) দায়ে নিজামীকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।
অন্য চারটি অর্থাৎ পাবনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা কছিমুদ্দিন হত্যা (১ নম্বর অভিযোগ), মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে পাকিস্তানি সেনা, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র (৩ নম্বর অভিযোগ), বৃশালিখা গ্রামের সোহরাব আলী হত্যা (৭ নম্বর অভিযোগ) এবং রুমী, বদি, জালালসহ সাত গেরিলা যোদ্ধা হত্যার প্ররোচনার (৮ নম্বর অভিযোগ) দায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
৫ ও ৯ থেকে ১৫ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এসব অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি। এগুলোও ছিল হত্যা-গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এবং বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের উস্কানি ও প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ।
বাংলাদেশ সময়: ১১১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৫
ইএস/ এএসআর