ঢাকা: সাংবিধানিক সংস্থা হিসেবে নির্বাচন পেছানো, স্থগিত বা পুনঃতফসিলের এখতিয়ার রয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। তবে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন পেছানো উচিত হবে না বলেই মনে করছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর দেশের ২৩৬টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণের তফসিল ঘোষনা করেছে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা সংশোধন করে সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রচারণায় অংশ নেওয়ার ব্যাপারে দিয়েছে নিষেধাজ্ঞা। ফলে সংসদ সংদস্যরা (এমপি) প্রচারণায় যেতে পারছেন না।
এই অবস্থায় বিএনপি, জাতীয় পার্টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও কয়েকটি বামদল নির্বাচন পেছানোর দাবি জানিয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ কয়েকটি দল এমপিদের নির্বাচনী প্রচারণার সুযোগ সৃষ্টির দাবি জানিয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এরই মধ্যে দলগুলোর দাবি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়ার কথা জানিয়েছেন গণমাধ্যমকে। তিনি বলেছেন, আমরা দাবিগুলো নিয়ে সোমবার (৩০ নভেম্বর) আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব এবং তা তাদের জানিয়ে দেব।
এক্ষেত্রে নির্বাচন পেছানো উচিত হবে না বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে এমপিদের প্রচারণার সুযোগ রাখার পক্ষেও নন অনেকে।
এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের পরেও নির্বাচন করার এখতিয়ার রাখে ইসি। তবে সেটা দূর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির ক্ষেত্রে। দেশে এখন তেমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। তাই নির্বাচন পেছানো উচিত হবে না।
‘একইভাবে এমপিদের প্রচারণায় সুযোগও দেওয়া যাবে না। কেননা, স্থানীয় পর্যায়ে তারা খুবই প্রভাবশালী। ’
সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম হাফিজউদ্দীন খান বলেন, আইনে সীমাবদ্ধতা না থাকলে নির্বাচন পেছানো উচিত হবে না। তবে সুযোগ থাকলে পেছানো যেতে পারে। তবে এমপিদের প্রচারণায় সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না। এতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ব্যহত হবে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিপপ’র (জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ) চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচন পেছানোর দাবি জানানো দলগুলো নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান থেকে কথা বলছে। সেই অবস্থানের কারণে নির্বাচন পেছানো হলে তিনটি চ্যালেঞ্জর মুখে পড়বে ইসি। এগুলো হলো, জানুয়ারিতে আরও ৫০ লাখ নতুন ভোটারকে তালিকায় যুক্ত করতে হবে, এসএসসি পরীক্ষার মাঝে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে এবং অন্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোর সময়ও চলে আসবে।
‘এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করা খুবই কঠিন। তাই ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন পেছানোর সুযোগ নেই। ’
এদিকে নির্বাচন প্রচারণা বিধিমালা সংশোধন করে এমপিদের সুযোগ দেওয়াও উচিত নয় বলে মনে করেন এই নির্বাচন পর্যবেক্ষক। তার মতে, বর্তমান আচরণ বিধিমালাই সঠিক।
তবে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের মর্জির উপর নির্ভর করে, তারা কি করবে। তাদের এখতিয়ারে অনেক কিছুই আছে। নির্বাচন পেছানোর এখতিয়ারও রয়েছে।
এমপি পদ লাভজনক নয়, তাই প্রচরণায় তাদের সুযোগ থাকা উচিত। এজন্য ইসি চাইলে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা সংশোধন করে তাদের সুযোগ দিতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর দেশের ৩২৩টি পৌরসভার মধ্যে নির্বাচন উপযোগী ২৩৬টিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে আগামী ৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ।
বাংলাদেশ সময়: ২৩১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৫
ইইউডি/আরএইচ