ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নাইটগার্ড ঘুমান বাড়িতে, স্কুল পাহারায় ৩ কুকুর!

রনবীর ঘোষ কিংকর, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৫
নাইটগার্ড ঘুমান বাড়িতে, স্কুল পাহারায় ৩ কুকুর! ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চান্দিনা (কুমিল্লা): কাগজে-কলমে পদ নৈশপ্রহরী (নাইটগার্ড) কাম দফতরি। কিন্তু দফতরির কাজ করলেও নৈশপ্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন না দায়িত্বপ্রাপ্তরা।



এ অবস্থা কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ফলে এসব বিদ্যালয় রাতের বেলা থাকছে নিরাপত্তাহীন।

শনিবার (২৮ নভেম্বর) দিবাগত রাত ১০টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ২২টি বিদ্যালয় ঘুরে ২১টিতেই নৈশপ্রহরীর উপস্থিতি দেখা যায়নি।

এমনকি, রাত সাড়ে ১০টায় গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠে শুয়ে আছে তিনটি বেওয়ারিশ কুকুর। হাব-ভাব দেখে মনে হয় তারাই নৈশপ্রহরীর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

পাশের একটি মাছের প্রজেক্টে পাহারায় থাকা আবু সাঈদ বলেন, আমি এখানে প্রায় ছয়মাস ধরে পাহারার দায়িত্বে আছি। ওই বিদ্যালয়ে কখনও নৈশপ্রহরী দেখিনি।

রাত সাড়ে ১১টায় মধ্যমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়ে গিয়ে দেখা যায়, পুরো বিদ্যালয় এলাকা আলো ও লোকজনহীন। যেন ভূতুড়ে কোনো নগরী।

পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়া দুই স্থানীয় বাসিন্দা জানান,  এ বিদ্যালয়ে যে দফতরি কাম নৈশপ্রহরী আছেন, তা এলাকার কেউ জানেন না। স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের কারণে দেলোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তি ওই পদে নিয়োগ পেয়েছেন। তবে তিনি সকালে মোটরসাইকেল হাঁকিয়ে বিদ্যালয়ে আসেন, বিকেলে চলে যান। বিদ্যালয়ে ঝাড়– দেয় শিক্ষার্থীরা।

রাত সোয়া ১২টায় বরকইট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মূল ভবনের কলাপসিবল গেটে তালা ঝুলছে। তবে ভবনের প্রতিটি কক্ষের দরজা-জানালা খোলা। অফিস কক্ষ ছাড়া প্রতিটি কক্ষের লাইট জ্বলছে, ফ্যান ঘুরছে।

রাত ১২টা ৪০ মিনিটে চান্দিনা সদরের আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে প্রধান ফটকে তালা দেখা যায়। তবে নৈশপ্রহরী হিসেবে কাউকে দেখা যায়নি।

এরপর একে-একে কুটুম্বপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,  কেরনখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব বেলাশহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চিরাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পানিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রসুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডুমুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলিকামুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিদ্যালয় ঘুরে একই চিত্র দেখা যায়।

তবে মাধাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণিকক্ষে নৈশপ্রহরীকে ঘুমন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।

গত বছরের মাঝামাঝি থেকে চলতি বছর পর্যন্ত কয়েক দফায় সারাদেশের মতো চান্দিনা উপজেলার ৫৬টি বিদ্যালয়ে দফতরি কাম নৈশপ্রহরী নিয়োগ করা হয়। পরে দোল্লাই নবাবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাঁচধারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দফতরি কাম নৈশপ্রহরীকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের চাপে ও নিয়োগ দুনীর্তির মাধ্যমে এ পদে লোক নিয়োগ করা হয়েছে। ফলে প্রভাবশালীদের সমর্থন থাকায় তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন না।

এতে করে বিদ্যালয়গুলোতে ল্যাপটপ, প্রজেক্টর, সৌরবিদ্যুৎ বিভিন্ন মূল্যবান মালামাল থাকায় চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, নৈশপ্রহরী কাম দফতরিকে পরিচালনার সার্বিক দায়িত্ব স্কুলের প্রধান শিক্ষকের। এক্ষেত্রে তাদের গাফিলতি দেখলে ব্যবস্থা নেবো।

বাংলাদেশ সময়: ০১১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৫
এসআর/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।