ঢাকা: পাসপোর্টের মেয়াদ ৫ বছর বাড়িয়ে ১০ বছর করার সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন করছে সরকার। ইতোমধ্যে মতামত মিলেছে অর্থ বিভাগের।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জ্যোর্তিময় দত্ত বাংলানিউজকে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়া গেছে। আগামী সপ্তাহে বৈঠক করে দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
গত আগস্ট মাসের শেষ দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাসপোর্টের মেয়াদ চলমান ৫ বছর থেকে ১০ বছরে বৃদ্ধির প্রস্তাব বাস্তবায়নে অর্থ বিভাগের মতামত চাওয়া হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর করার প্রস্তাব অনুমোদন দেন।
জনগণের ভোগান্তি এবং পাসপোর্ট অফিসের ওপর থেকে চাপ কমাতে পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর করার সিদ্ধান্ত নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে ১৫ বছর বা তার কম বয়সীদের ক্ষেত্রে এর মেয়াদ পাঁচ বছর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
১০ বছর মেয়াদের পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ফি নির্ধারণ করা হচ্ছে সাধারণ চার হাজার টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ভ্যাট ৬০০ টাকা। আর জরুরির ক্ষেত্রে ফি নির্ধারিত হচ্ছে ৮ হাজার টাকা। এর সঙ্গে ভ্যাট যোগ হবে ১ হাজার ২০০ টাকা। সব মিলিয়ে জরুরি পাসপোর্ট পেতে ব্যাংকে মোট জমা দিতে হবে ৯ হাজার ২০০ টাকা।
অপরদিকে পাঁচ বছর মেয়াদের পাসপোর্টের জন্য ফি নির্ধারণ করা হচ্ছে সাধারণ ৩ হাজার টাকা। এর সঙ্গে ৪৫০ টাকা ভ্যাট যুক্ত হয়ে মোট জমা দিতে হবে ৩ হাজার ৪৫০ টাকা। আর জরুরির ক্ষেত্রে জমা দিতে হবে ৬ হাজার টাকা এবং ভ্যাট ৯০০ টাকা। সব মিলিয়ে মোট জমা দিতে হবে ৬ হাজার ৯০০ টাকা।
অনেক আগে একটি পাসপোর্টের মাধ্যমে ১০ বছর ধরে বিদেশ ভ্রমণ করা যেতো। সেক্ষেত্রে পাঁচ বছর পর ফি দিয়ে পাসপোর্ট নবায়ন করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে ১০ বছর মেয়াদে সরকার যে এমআরপি প্রদান করতে যাচ্ছে, এতে নবায়নের কোনো প্রয়োজন পড়বে না। ১০ বছর পর নতুন করে পাসপোর্ট নিতে হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সাল থেকেই মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) ফি বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। ওই সময়ই বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের ইন্ট্রোডিউসিং অব মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট অ্যান্ড মেশিন রিডেবল ভিসা ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্প থেকে ফি বাড়ানোর একটি প্রস্তাব করে। ওই প্রস্তাবে প্রথম অবস্থায় রি-ইস্যু (পুনরায় জারিকৃত) পাসপোর্টের ফি বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। এরপর ধাপে ধাপে সাধারণ ও জরুরি এমআরপি’র ফি বাড়ানোর কথা বলা হয়।
এরপর সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ উপসাগরীয় দেশগুলোতে বাংলাদেশি কর্মীদের চাকরির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশি পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর করার সুপারিশ করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে একটি আধা সরকারি পত্রে (ডিও লেটার) এ সুপারিশ করা হয়।
ওই পত্রে বলা হয়, ‘যেকোনো দেশে ভিসা প্রদান/নবায়নের জন্য পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হয়। তাই পাসপোর্টটি সাড়ে চার বছরের আগেই নবায়নের প্রয়োজন পড়ে। ঢাকার সদর দফতর থেকে ছাপা হওয়া এবং পাওয়া মিলিয়ে প্রকৃতপক্ষে একটি বাংলাদেশি পাসপোর্টের কার্যকরী মেয়াদ কমবেশি ৪ বছর বলে গণ্য করা যায়’।
ওই চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘প্রায় ৮/৯ লাখ বাংলাদেশি নাগরিক সংযুক্ত আরব আমিরাতে কর্মরত আছেন। তবে আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা বন্ধ রয়েছে’।
‘ভিসা নবায়ন চালু থাকলেও কর্মী/পেশাজীবীদেরকে তাদের চাকরি নবায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিদেশি কর্মীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয়। দীর্ঘমেয়াদী ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি পাসপোর্টের এই সীমিত মেয়াদ একটি অন্তরায়। এতে অনেক পেশাজীবী ও শ্রমজীবী কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পাসপোর্টের মেয়াদ কম থাকায় অনেকেই চাকরি ক্ষেত্রে অন্য দেশের কর্মীদের থেকে পিছিয়ে পড়ছেন’।
অফিসিয়াল পাসপোর্ট অপব্যবহার রোধ
অন্যদিকে অফিসিয়াল পাসপোর্টের ব্যপ্তি কমানোর চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। এ লক্ষ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুই ধরনের পাসপোর্ট দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যারা অফিসিয়াল কাজে বিদেশ সফর করবেন তাদের দেওয়া হবে অফিসিয়াল পাসপোর্ট। এক্ষেত্রে পাসপোর্টের ওপর লেখা থাকবে ওসি (অফিসিয়াল)। আর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা ব্যক্তিগত সফরে যাবেন তাদের পাসপোর্টে লেখা থাকবে পিজি (পাসপোর্ট গভর্নমেন্ট)।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অফিসিয়াল পাসপোর্টের অপব্যবহারের কারণেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে দুই ধরনের পাসপোর্ট প্রদানের চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। কিন্তু দুই ধরনের পাসপোর্ট করা হলে অধিকাংশ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিসিয়াল পাসপোর্ট থেকে বঞ্চিত হবেন। এক্ষেত্রে তাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। সেজন্য অন্য উপায়ও খুঁজছে মন্ত্রণালয়।
বিষয়টি চূড়ান্ত হবে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে।
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অনেকে মিথ্যা অনাপত্তি দিয়ে সরকারি পাসপোর্ট নিয়েছেন। আর অনাপত্তির মাধ্যমে সরকারি আদেশ তৈরি করে অনেকে বিদেশ যাচ্ছেন। অনেকের ক্ষেত্রে দেশে ফেরত না আসার মতো ঘটনাও ঘটছে। এ পরিস্থিতি নিরসনে বর্তমানে অফিসিয়াল পাসপোর্ট দিতে পাসপোর্ট অধিদফতর অধিক যাচাই-বাছাই করছে।
পাশাপাশি এখন থেকে অফিসিয়াল পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশ যেতে জিও (সরকারি আদেশ) অনলাইনে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিচ্ছে। এতে অফিসিয়াল পাসপোর্ট নিয়ে কেউ বিদেশে যেতে চাইলে ওই সরকারি আদেশ ইমিগ্রেশন থেকে যাচাই করা যাবে। এতে অফিসিয়াল পাসপোর্টের অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব হবে।
এ প্রক্রিয়ায় সুফল মিললে এটিই বহাল থাকবে। সেক্ষেত্রে পিজি পাসপোর্ট প্রদান না করলেও চলবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৫
এসএমএ/এএসআর