সিলেট: সিলেটের চাঞ্চল্যকর শিশু আবু সাঈদ হত্যা মামলার রায় পড় শুরু হয়েছে।
সোমবার (৩০ নভেম্বর) দুপুর সোয়া তিনটা থেকে রায় পড়ছেন সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুর রশিদ।
মামলার চার আসামি বরখাস্তকৃত পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর রহমান পুতুল, সিলেট জেলা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাকিব, পুলিশের কথিত সোর্স আতাউর রহমান গেদা ও ওলামা লীগ নেতা মুহিবুর রহমান মাসুমকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।
শিশু আবু সাঈদ হত্যা মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শুরুর মাত্র নয় কার্যদিবসে রায় ঘোষণা দেশের আইন-আদালত ও বিচারের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারকাজ সম্পন্ন হওয়া সিলেটের শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যা ও খুলনায় শিশু রাকিব হত্যা চেয়েও এ মামলার বিচার দ্রুত শেষ হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
এর আগে রোববার (২৯ নভেম্বর) রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক সম্পন্নের পর রায়ের এ দিন ধার্য করেন আদালতের বিচারক। আর ঐতিহাসিক এ রায় ঘোষণার পর অত্র আদালতের বিচারক আব্দুর রশিদ অবসরে যাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।
রোববার অষ্টম কার্যদিবসে প্রথমে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আদালতের পিপি অ্যাডাভোকেট আব্দুল মালেক। পরে আসামিপক্ষের সাতজন আইনজীবী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
পিপি আব্দুল মালেক বলেন, সিলেটের অপর শিশু রাজন ও খুলনার খুলনার শিশু রাকিব হত্যার মামলার চেয়েও স্কুলছাত্র শিশু আবু সাঈদ হত্যার মামলার রায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে হচ্ছে।
হত্যা মামলার রায় ঘোষণা ও পরদিন ০১ ডিসেম্বর সর্বশেষ আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করে অবসরে যাবেন আদালতের বিচারক আব্দুর রশিদ।
আদালত সূত্র জানায়, শিশু সাঈদ হত্যা মামলায় ৩৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। গত ১৭ নভেম্বর অভিযোগ (চার্জ) গঠনের মাধ্যমে শিশু সাঈদ হত্যা মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। মাত্র ৮ কার্যদিবসে শেষ হয় সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক।
এর মধ্যে গত ২৬ নভেম্বর এ আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ৩৪২ ধারায় আসামিদের বক্তব্য পরীক্ষা ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়।
এদিন সর্বশেষ সাক্ষ্য দেন আলোচিত এ মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) তারেক মাসুদ, চার্জশিট দাখিলকারী তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার (ওসি-তদন্ত) মোশাররফ হোসেন ও কনস্টেবল দিলোয়ার হোসেন।
এর আগে ১৯ নভেম্বর প্রথম দিনে সাক্ষ্য দেন নিহত শিশু সাঈদের পিতা আব্দুল মতিন, মামা আশরাফুজ্জামান আযম, ফিরোজ আহমদ, প্রতিবেশী ওলিউর রহমান ও শফিকুর রহমান।
২২ নভেম্বর দ্বিতীয় কার্যদিবসে সাক্ষ্য দেন- নিহত আবু সাঈদের মা সালেহা বেগম, জয়নাল আবেদীন, হিলাল আহমদ, সিলেট মহানগরীর বিমানবন্দর থানার ওসি গৌসুল হোসেন, এসআই সমরাজ মিয়া ও কনস্টেবল আবুল কাশেম।
২৩ নভেম্বর নিহত সাঈদের প্রতিবেশী সেলিম আহমদ, আজির উদ্দিন, আব্দুল কুদ্দুছ, মোক্তাদির আহমদ জুয়েল, দেলোয়ার হোসেন, আব্দুল আহাদ তারেক ও আবুল হোসেন সাক্ষ্য দেন।
২৪ নভেম্বর সিলেট মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতের বিচারক শাহেদুল করিম, ২য় আদালতের বিচারক ফারহানা ইয়াসমিন, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক শামীমুর রহমান পীর ও সিলেটের জকিগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) রতন লাল দেব সাক্ষ্য দেন।
২৫ নভেম্বর সাক্ষ্য দেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক ডা. সামসুল ইসলাম, কোতোয়ালি থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান ও পরিদর্শক (এসআই) ফজলে আজিম পাটোয়ারি।
গত ১১ মার্চ নগরীর শাহ মীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আবু সাঈদ (৯) অপহৃত হয়।
অপহরণের তিনদিন পর ১৪ মার্চ নগরীর ঝর্ণারপাড় সোনাতলা এলাকায় পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর রহমান পুতুলের বাসার ছাদের চিলেকোঠা থেকে আবু সাঈদের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
২৩ সেপ্টেম্বর এ মামলায় চারজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন কোতোয়ালি থানার (ওসি-তদন্ত) মোশাররফ হোসেন।
চার্জশিটে অভিযুক্তরা হলেন, সিলেটের বিমানবন্দর থানার সাবেক কনস্টেবল এবাদুর রহমান পুতুল, সিলেট জেলা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাকিব, পুলিশের কথিত সোর্স আতাউর রহমান গেদা এবং ওলামা লীগ নেতা মাহিব হোসেন মাসুম। অভিযুক্তদের মধ্যে এবাদুর, রাকিব ও গেদা ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেন।
নিহত আবু সাঈদ সিলেট নগরীর রায়নগর শাহমীর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ও রায়নগর দর্জিবন্দ বসুন্ধরা ৭৪ নম্বর বাসার আব্দুল মতিনের ছেলে। তাদের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার এড়ালিয়াবাজারের খশিলা এলাকায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৫
এনইউ/এএসআর