ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩ আশ্বিন ১৪৩২, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

আইসিসিবিতে ‘সিকিউরিটি অ্যান্ড সেফটি’ এক্সপো শুরু

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৪০, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫
আইসিসিবিতে ‘সিকিউরিটি অ্যান্ড সেফটি’ এক্সপো শুরু

নিরাপত্তা ও সুরক্ষার আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে বিশ্ব আজ অনেক এগিয়ে। সেই ধারায় বাংলাদেশকে সংযুক্ত করে আরেক ধাপ এগিয়ে নিতে এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের মধ্যে ব্যবসায়িক নেটওয়ার্ক তৈরি করতে ঢাকায় শুরু হলো ‘ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড সেফটি এক্সপো ২০২৫’।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) প্রথমবারের মতো আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এই এক্সপোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

রেকর্ডেড ভিডিও বার্তায় আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

তিনি বলেন, ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি এক্সপো ২০২৫’ এবং ‘ইন্টারন্যাশনাল অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড ফায়ার এক্সপো ২০২৫’ বাংলাদেশের নিরাপত্তা খাতে একটি বড় উদ্যোগ। ৫০টির বেশি প্রতিষ্ঠান, শতাধিক ব্র্যান্ড এবং পাঁচশ’র বেশি প্রতিনিধি নিয়ে এই আয়োজন সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে সচেতনতা ও যোগাযোগ বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করবে।

ইলেকট্রনিক্স ও সাইবার সুরক্ষার ওপর দেশের অর্থনীতি ও জাতীয় সুরক্ষা নির্ভর করে মন্তব্য করে এই খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি বলেন, আমরা যতই অনলাইনে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হবো, ততটাই ব্যক্তিগত তথ্য নিরপত্তার ঝুঁকি থাকবে। তাই এই পারস্পরিক সম্পর্ককে জোরদার করতে সাইবার ও ইলেকট্রনিক্স খাতে সুরক্ষা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য গত মে মাসে আমরা ডাটা প্রাইভেসি সিকিউরিটি অ্যাক্ট করেছি। এর অধীনে সকলের নিরাপত্তা অক্ষুণ্ণ থাকবে। এটি একটি বড় খাত, তাই এ জন্য এই খাতে বিনিয়োগে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, এই ধরনের আন্তর্জাতিক আয়োজন আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। এটি শুধু প্রযুক্তি প্রদর্শন নয়, বরং এটি নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি, নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা এবং সরকারি-বেসরকারি খাতে অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম। সরকার দেশের  ইলেকট্রনিক ও সাইবার নিরাপত্তায় বিদেশি সুরক্ষা শিল্প খাতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একটি নিরাপদ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ কে এম আমিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ১৭ কোটিরও বেশি মানুষ বাস করে। এত মানুষের দেশে নিরাপত্তা সরঞ্জাম ও ইনস্টলেশন সেবার চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেশি। বর্তমানে এটিএম, আরএফআইডি ট্যাগ এবং সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। সরকার হাই-টেক পার্কে বিনিয়োগকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। দেশি ও বিদেশি উদ্যোক্তাদের আকর্ষণ করতে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এসব পার্কে আধুনিক সুবিধা যেমন উচ্চগতির ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকায় নিরাপত্তা সরঞ্জাম ইনস্টলেশনের জন্য এটি আদর্শ জায়গা হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিদেশি নিরাপত্তা ও সুরক্ষা প্রযুক্তি কোম্পানিকে হাই-টেক পার্কে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান।

স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) মহাসচিব মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বর্তমানে নিরাপত্তা একটি বহুমাত্রিক এবং সমন্বিত বিষয়, যেখানে সাইবার হুমকি, শারীরিক নিরাপত্তা এবং অবকাঠামোগত সুরক্ষা একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। এই এক্সপোর মাধ্যমে সরকার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং প্রযুক্তি খাতের অংশীজনদের এক প্ল্যাটফর্মে এনে নিরাপত্তাবিষয়ক উদ্ভাবন, বাস্তবভিত্তিক সমাধান এবং জ্ঞান বিনিময়ের সুযোগ তৈরি করছে। এই অভিজ্ঞতা আমাদের দেশে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের ডিজিটাল অগ্রযাত্রাকে টেকসই রাখতে হলে শুধু প্রযুক্তির উন্নয়ন নয়, সেই প্রযুক্তিকে সুরক্ষিত রাখার জন্যও সমান্তরালভাবে বিনিয়োগ ও নীতিগত প্রস্তুতি দরকার।

আয়োজক প্রতিষ্ঠান আই-স্টেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মধুসূদন সাহা বলেন, প্রযুক্তি নির্ভর এই যুগে নিরাপত্তা প্রযুক্তিও দ্রুত রূপান্তর ঘটাচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে ব্যবসা, শিল্প ও ব্যক্তিগত জীবনে। বাংলাদেশে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা খাতের স্থানীয় প্রস্তুতকারক, আমদানিকারক, সরবরাহকারী ও সাইবার নিরাপত্তা উদ্যোক্তাদের জন্য বৈশ্বিক প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হওয়া এখন সময়ের দাবি। ‘ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড সেফটি এক্সপো’ সেই প্রয়োজন পূরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে, যা দেশের নিরাপত্তা খাতকে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত করতে সহায়তা করবে।

আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সহ-সভাপতি মো. ওয়াহিদুল হাসান দিপু। তিনি বলেন, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) ১৯৮৭ সাল থেকে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রযাত্রায় এক নির্ভরযোগ্য পথপ্রদর্শক। জনস্বার্থ ও প্রযুক্তির মেলবন্ধনে বিসিএস সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ওশি ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন সাকি রেজওয়ানা, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।

এরপর অতিথিরা ফিতা কেটে ‘ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড সেফটি এক্সপো-২০২৫’ আসরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর উপস্থিত অতিথিবৃন্দ দর্শনীর স্টল পরিদর্শন করেন।

নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিয়ে আয়োজিত প্রদর্শনীটি যৌথভাবে আয়োজন করছে দেশের প্রযুক্তিপণ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আই-স্টেশন লিমিটেড, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যক সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) ও দুবাইয়ের  প্রযুক্তি কোম্পানি জিপিই এক্সপো (এফজেডই)। চলবে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, তিন দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে আরও থাকছে  ‘ইন্টারন্যাশনাল অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ ও ফায়ার এক্সপো (আইওএসএইচএফই)’। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সর্বশেষ নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিষয়ক  প্রযুক্তি পণ্য প্রদর্শন করবে। যেমন, কর্মস্থলের অগ্নি নির্বাপক নিরাপত্তা  প্রযুক্তি, নিরাপত্তা সরঞ্জাম, স্মার্ট মনিটরিং সিস্টেম, স্বাস্থ্য ও অগ্নি নিরাপত্তা  প্রযুক্তি, স্মার্ট সফটওয়্যার সল্যুশনস, সাইবার নিরাপত্তা ও সুরক্ষা প্রযুক্তির আধুনিক উদ্ভাবন, পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করা হবে। অত্যাধুনিক ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই), নিরাপত্তা ক্যামেরা এবং অন্যান্য  নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত সরঞ্জামাদি।

এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে ৫০টিরও বেশি দেশি-বিদেশি নিরাপত্তা কোম্পানি, শাতাধিক ব্র্যান্ড এবং পাঁচ শতাধিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ অংশ নিচ্ছেন।

এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।