শরীয়তপুর: শরীয়তপুরে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মা ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। এ অবস্থায় তাদের অপারেশন থিয়েটারে রেখে পালিয়ে গেলেন চিকিৎসক, নার্সসহ ক্লিনিকের স্টাফরা।
বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটায় শরীয়তপুর নার্সিং হোম নামে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটে।
রোগীর স্বজনরা জানায়, বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার মডেরকান্দি গ্রামের দুবাই প্রবাসী জসিম ভূঁইয়ার স্ত্রী ময়না বেগমকে (৩০) শরীয়তপুর নার্সিং হোমে ভর্তি করেন তার স্বজনরা। ১২ হাজার টাকা চুক্তিতে বেলা আড়াইটার সময় ময়না বেগমের অপারেশন শুরু করেন ক্লিনিকের মালিক ডাক্তার এম, এ দাউদ। অপারেশন শুরুর আধাঘণ্টা পর ডাক্তার ও নার্স অপরেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে আসেন। এ সময় রোগীর স্বজনরা রোগীর অবস্থা জানতে চাইলে রোগীকে ঢাকায় নেওয়া লাগবে বলে ক্লিনিক থেকে পালিয়ে যান ডাক্তার এম,এ দাউদ ও ক্লিনিকের স্টাফরা।
এ সময় রোগীর স্বজনরা বাধা দিলে তাদের মারধরও করেন স্টাফরা। খবর পেয়ে পালং থানার পুলিশ এসে ক্লিনিকের সামনে থেকে একজনকে আটক করে।
নিহত ময়না বেগমের স্বামী জসিম ভূঁইয়া বর্তমানে দুবাই প্রবাসী। প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি দুবাই রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার সময় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, নিহত ময়না বেগমের মা মজিদা বেগম, বাবা হাশেম রাঢ়ি, শ্বশুর রহমআলী ভূঁইয়া, ননদ ফরিদা বেগমসহ আত্মীয়-স্বজনরা ক্লিনিকে বসে আহাজারী করছেন।
তারা অভিযোগ করেন, ডাক্তার এম,এ দাউদ তাদের রোগী ও সন্তানকে মেরে পালিয়ে গেছে। এ সময় তারা এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
জানা গেছে, এম,এ দাউদ চোখের ডাক্তার হিসেবে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চাকরি করতেন। এ অবস্থায় তিনি বিভিন্ন ক্লিনিকে অন্তঃস্বত্ত্বাদের অপারেশন করতেন। চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর শরীয়তপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় সংলগ্ন একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে তিনি শরীয়তপুর নার্সিং হোম নামে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে সেখানে রোগীদের সিজার করতেন।
সাইনবোর্ডে লেখা চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন এবং সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ, কুষ্টিয়া।
স্থানীয়রা জানান, কুষ্টিয়া মডিকেল কলেজ নামে কোনো কলেজ নেই এবং তিনি সব সময় শরিয়তপুরে রোগীর অপারেশন করে থাকেন। তিনি কখনো কুষ্টিয়া যান না। ডাক্তার দাউদের বাড়ি যশোর জেলায়। এর আগে তার বিরুদ্ধে ভুল অপারেশনে একাধিক রোগী মারা যাওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
পালং থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রসূতি মা ও নবজাতককে মৃত অবস্থায় যেভাবে ফেলে রেখে গেছে, তাতে মনে হচ্ছে ভুল চিকিৎসায়ই রোগী ও তার সন্তান মারা গেছে। নবজাতকটিকে একটি ট্রেতে করে নোংরা স্থানে ফেলে রেখেছে যা অমানবিক। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৫
আরএ