ঢাকা: ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সামনের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকা কয়েকজন রিকশাওয়ালা ও খেটে খাওয়া মানুষ নজর কাড়লেন। কাছে গিয়ে দেখা গেল, তারা দেয়ালে সাঁটানো বিভিন্ন সংবাদপত্র পড়ছেন।
দৃশ্যটি দেখামাত্র যে কারো সকালের নাস্তার টেবিলে সংবাদপত্র পড়ার পুরনো স্মৃতিই ভেসে উঠবে। এদের নাস্তার টেবিল নেই, তবে সংবাদ যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সেটা তারা অনুধাবন করেন।
দেশ-বিদেশের নানা ঘটনা প্রতিনিয়তই সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে। কেউ হয়ত তা টেলিভিশনে দেখছেন, কেউবা আবার পড়ে নিচ্ছেন সংবাদপত্র কিংবা অনলাইন নিউজ পোর্টাল। তবে মাধ্যম যাইহোক সাধারণত আমাদের ধারণা সংবাদপত্রের পাঠক হবে শিক্ষা-দীক্ষায় অগ্রসর সচেতন জনগোষ্ঠী। কিন্তু রিকশাওয়ালা, হকার কিংবা পথশিশু ভিড় করে সংবাদপত্র পড়ছে, এটা কিছুটা হলেও নতুনই লাগলো।
সমাজের চোখে অশিক্ষিত-অসচেতন অংশের প্রতিনিধিরা সকালে জীবিকার জন্য বের হয়ে সংবাদপত্র পড়ছেন। এই দৃশ্য সম্ভাবনা এক বাংলাদেশের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
পত্রিকা যে তারা নিয়মিতই পড়েন এটা আরও স্পষ্টভাবে বোঝা গেল, চল্লিশোর্ধ্ব রিকশাচালক শহীদ মিয়ার রংপুরের আঞ্চলিক ও শুদ্ধ বাংলা মিশ্রিত ভাষায়। তিনি বললেন, ‘দেইখলাম হামার এরশাদ সাহেব কমিশনারকে (নির্বাচন কমিশনার) বকা দিছেন। আবার আমেরিকায় নাকি সন্ত্রাসীরা গুলি করে দশ বারো জনকে মারছে। ’
তবে সংবাদপত্র কিনে পড়ার মতো আর্থিক সঙ্গতি এখনও যে তার বা তাদের হয়নি এটা বোঝা গেল শহীদ মিয়ার পরের বাক্যেই। ‘এহেনথেই তো পড়লাম আবার কিনা লাগবি কেন?’- বললেন শহীদ মিয়া।
নুরুদ্দীন নামের চৌদ্দ-পনের বছরের এক কিশোর বেকারি কর্মচারীও ছিল সংবাদপত্র পড়ুয়াদের ওই দলে। সে প্রায়ই এখানে এসে দেশ-বিদেশের সংবাদ পড়ে যায়।
ডিআরইউ’র সামনে প্রতিদিন সকালের এই দৃশ্য ইতিবাচক মনে হয়। দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর একটা অংশ যেহেতু একটু হলেও পড়াশুনা করছে, শিখছে, বিশ্বটাকে জানার চেষ্টা করছে। সুতরাং দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এ কথা বলতে দ্বিধা আছে কি?
বাংলাদেশ সময়: ০১১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৫
এইচআর/টিআই