ঢাকা: সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন দেশের সব থেকে বড় প্রকল্প পদ্মাসেতু। জার্মান প্রযুক্তির বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী হ্যামার পদ্মাসেতু প্রকল্পে অনেক আগেই এসেছে।
বাংলানিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানান পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী এখন এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ক্যাম্পাস ফার্মগেটে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় তুলে ধরেন পদ্মাসেতু প্রসঙ্গে নানা বিষয়।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এ প্রকৌশলী বলেন, পদ্মাসেতু তৈরিতে নদীশাসন ও ঢালাই কাজের জন্য ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্য থেকে পাকুর পাথর আমদানি করা হবে। এসব পাথরের এক একটির ওজন প্রায় এক টন।
কলিকাতার মেসার্স কৃষ্ণা ট্রেডার্স বাংলাদেশে এই পাথর রফতানি করবে এবং আমদানি করবে বাংলাদেশ ফাউন্ড্রি এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড।
কতটি পাথর ব্যবহার করা হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা সঠিক করে বলা মুশকিল। ভাঙন রোধে জিওব্যাগ ভর্তি বালু বস্তা ফেলা হচ্ছে পদ্মাসেতু প্রকল্পে। এর সংখ্যা ১০ লাখের উপরে, বড় পাথরের সংখ্যা প্রায় জিওব্যাগের সমপর্যায়ে হতে পারে। এর আগে বাংলাদেশে এত বড় ওজনের পাথর কোনো প্রকল্পে ব্যবহার করা হয়নি। বিশাল ট্রাকে সর্বোচ্চ ১০টি থেকে ১২টি পাথর বহন করা সম্ভব হবে। পাথর বহনের সুবিধার জন্য অবকাঠামোও উন্নত করতে হবে। ’
মূলসেতু, নদীশাসন ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ তিনটি ভাগে বিভক্ত পদ্মাসেতু প্রকল্পের কাজ। ১৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যের অতিরিক্ত নদীশাসন কাজ এগিয়ে চলেছে। মাওয়া প্রান্তে হঠাৎ নদী ভাঙনে পুরাতন ফেরিঘাট বিলীন হয়ে গেলেও পুরোদমে আবারও কাজ শুরু হয়ে গেছে। প্রকল্পের নিরাপত্তার স্বার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরামর্শে নদীতীরের ১৩’শ মিটার দৈর্ঘ্য জরুরি ভিত্তিতে রক্ষা করা হয়। এছাড়া স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধের নতুন কাজও সম্পূর্ণ হয়েছে। জরুরিভাবে কাজগুলো শেষ করতে ১৩১ কোটি টাকা খরচ হয়।
সকল বাধা বিপত্তি পেরিয়ে দ্রুত গতিতে নদীশাসনের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন। তবে সিনোহাইড্রো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পের মতো প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব করবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, সঠিক সময়ে নদীশাসনের কাজ শেষ হয়ে যাবে। যেভাবে নদীশাসনের কাজ এগিয়ে চলেছে তা দেখে অনেক ভালো মনে হচ্ছে। এর আগে সিনোহাইড্রা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব করেছে নানা কারণে। ফোর লেন প্রকল্পের জন্য সঠিক সময়ে মাটি পাওয়া যায়নি। মাটি সংগ্রহ করতে গিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় বলেছে ফসলি জমি নষ্ট করে মাটি দেয়া হবে না। অনেক সময় পরিবেশবাদীরাও বাধা দিয়েছে। কিন্তু পদ্মাসেতু প্রকল্পে এমন কোনো বাধা নেই। এটা স্বপ্নের প্রকল্প সবার প্রচেষ্টায় এগিয়ে চলেছে। ’
‘নদীশাসন কাজ দুই পাশে কম বেশি হবে। কারণ দুই পাশের কাদামাটির গুণাগুণ এক নয়। নদীশাসন বিরাট একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। মাওয়া সাইটে কাদামাটি বেশি কিন্তু জাজিরা সাইডে কম। নদী থেকে কাদামাটি কেটে ফেলে দেয়া হচ্ছে। এখানে প্রতিটি ৮শ’ কেজি ওজনের জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ’
সম্প্রতি ফুলে ফেঁপে ওঠা রাক্ষুসে পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে গিয়েছিল কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডের গুরুত্ত্বপূর্ণ অংশ। ইয়ার্ডের মূল ওয়ার্কশপের পশ্চিম পাশের প্রায় ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ৫০ মিটার প্রস্থের এলাকা বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তী বর্ষায় পদ্মাসেতু প্রকল্পে যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেই লক্ষ্যে আগাম ভাঙন রোধের জন্য ৩৬৯ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে ২০০৭ সালের ২০ আগস্ট ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়।
পরবর্তীতে প্রকল্পের নকশা পরিবর্তন, ভূমির পরিমাণ বৃদ্ধি, পরামর্শকের সংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে প্রথম সংশোধনে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। ভাঙনসহ অন্যান্য কারণে দ্বিতীয় সংশোধনে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের মধ্যে শেষ হবে স্বপ্নের পদ্মাসেতু প্রকল্প। সেতু বাস্তবায়িত হলে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ বেড়ে যাবে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হার।
বাংলাদেশ সময়: ০০০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৫
এমআইএস/আরআই