ঢাকা: আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে অদক্ষদের হাতেই নির্বাচন ব্যবস্থাপনার হাল তুলে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যেখানে ভুল, বিড়ম্বনা আর অব্যবস্থাপনার কোনো শেষ নেই।
অদক্ষ কর্মকর্তারা মনোনয়নপত্র দাখিলের দুদিন পরও জানাতে পারেননি মেয়র পদে কয়টি দল প্রার্থী দিয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী কয়জন কিংবা মনোনয়নপত্র দাখিলকারীর সংখ্যাই বা কত।
এ নিয়ে কোনো তদারকিও নেই ইসির। শুক্র-শনিবার অফিস খোলা রেখে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েই দায় সেরেছে কর্তৃপক্ষ। ইসি সচিবালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নির্বাচন কমিশনার বা সচিব কেউ অফিস করেননি। আবার নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার সার্বিক তদারকিতে থাকা ইসির যুগ্ম সচিব জেসমিন টুলীও কেবল প্রতিদিন বিকেলের দিকে এসে ঘণ্টাখানেক অফিস করেন।
এই অবস্থায় জুনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে সহকারী সচিব রাজীব আহসান তার সহকারীকে নিয়ে গলদর্ঘম হলেও কোনো কূলকিনারা করতে পারেননি। এই কর্মকর্তা মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন বৃহস্পতিবার রাত তিনটা পর্যন্ত কাজ করেছেন। শুক্রবারও সকাল থেকেই অফিস করেছেন। সারাদিন কাজ করে মোট প্রার্থীর হিসাব শেষ করেন রাত ৯টায়। শনিবার (০৫ ডিসেম্বর) সকাল থেকে কাজ করে তিনি রাত ১২টা পর্যন্ত মোট কতটি দল প্রার্থী দিল, স্বতন্ত্র প্রার্থী কজন তার হিসাব মেলাতে পারেননি। আগের দিনের দেওয়া তথ্যের সংখ্যাতেও রয়েছে গড়মিল।
শুক্রবার রাজীব আহসান জানিয়েছিলেন মোট মেয়র প্রার্থী ১ হাজার ২২৩জন অথচ শনিবার সে সংখ্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২১৯ জন। এদিকে শুক্রবার জানিয়েছিলেন নির্বাচনে ১৪টি দল প্রার্থী দিয়েছে, শনিবার তা দাঁড়িয়েছে ২১টিতে। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন ৫০৯ জন।
এদিকে ৩ ডিসেম্বর ২৩৫টি পৌরসভায় ২৩৫ জন প্রার্থী দিয়েছে বলে ইসিকে জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। অথচ রাজীব আহসানের তৈরি করা প্রতিবেদনে এসেছে ২৩৯ প্রার্থীর নাম। আবার জাতীয় পার্টি ৯৩ জন প্রার্থী দিয়েছে জানালেও ইসির হিসাবে রয়েছে ৮২ জন মেয়র প্রার্থী।
অন্যদিকে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখা পরিচালনার জন্য উপ-সচিব মো. সামসুল আলম অফিস এলেও তিনি ঘুমিয়েই সময় পার করেছেন। আর সময় সময় রাজীব আহসানের কাছ থেকে সর্বশেষ কাজের অগ্রগতি সম্পর্কিত তথ্য নিয়েছেন। এই করে তিনি দুদিনই আগে ভাগেই অফিস ত্যাগ করেন।
শনিবার রাত ১০টার দিকে ইসি সচিবালয় ত্যাগ করার সময় সামসুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা অপেক্ষা করেন রাজীব আহসান তথ্য দেবে। কিন্তু রাজীব আহসানের কাছে তথ্য চাইতে গেলে রাত ১২টায় তিনি বলেন, যুগ্ম সচিব ছাড়া দেওয়া যাবে না।
ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখায় হঠাৎ করেই উপ-সচিব সামসুল আলমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আগে এ দায়িত্ব পালন করেন অভিজ্ঞ একজন উপ-সচিব। এছাড়া তার অধীনে কাজ করেন অভিজ্ঞ একজন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব। আর তার সহকারী হিসেবে যে কর্মকর্তা কাজ করেন তিনিও খুব অভিজ্ঞ ছিলেন।
কিন্তু তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কয়েক মাস আগে এদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর অভিজ্ঞদের অনেকটা দায়িত্বহীন করে রাখা হয়।
এ বিষয়ে ইসির একজন দায়িত্বশীল উপ-সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, সংসদ নির্বাচনের সময়ও কখনো এত অব্যবস্থাপনা হয়নি। সে সময়ও মনোনয়নপত্র দাখিলের পরের দিনই কয়টি দল, স্বতন্ত্র প্রার্থী কজন ইত্যাদি সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এখন অদক্ষদের হাতেই হাল তুলে দিয়েই নির্বাচন করছে ইসি।
রাজীব আহসানের তৈরি করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিএনপি ২৩৪জন, জাসদ ২৫ জন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ১ জন, ওয়ার্কার্স পার্টি ৯ জন, বিকল্পধারা ১ জন, জাতীয় পার্টি-জেপি ৯ জন, বিএনএফ ১ জন, এনপিপি ১৭ জন, পিডিপি ১ জন, খেলাফত মজলিস ৮ জন, এলডিপি ২ জন, বাসদ ১ জন, সিপিবি ৪ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৬১ জন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ৪ জন, ইসলামী ঐক্যজোট ৩ জন, বিজেপি ৮ জন ও ন্যাপ ১ জন প্রার্থী দিয়েছে।
দেশে প্রথমবারের মতো পৌরসভার মেয়র পদে দলীয়ভাবে ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর। কাউন্সিলর পদে আগের মতই নির্দলীয়ভাবে ভোটগ্রহণ করবে ইসি।
বাংলাদেশ সময়: ০৩২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৫
ইইউডি/এমজেএফ