ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রেলে অসন্তুষ্ট পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়!

আদিত্য আরাফাত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৫
রেলে অসন্তুষ্ট পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়!

ঢাকা: রেলওয়ের উন্নয়নে সরকারের জোর পদক্ষেপ  থাকলেও সে অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারছে না রেলপথ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।



পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বলছে, রেলের চলমান ৪৫টি প্রকল্পের গত প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অগ্রগতি অর্থাৎ বাস্তবায়নের হার মাত্র ‘৪ শতাংশ’। কিন্তু রেলপথ মন্ত্রণালয় দাবি করছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের হার ৪ শতাংশ নয়, ১১ শতাংশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হককে পাঠানো এক ডিও লেটারে (আধা সরকারিপত্র) প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এমন ‘অসন্তুষ্টি’র পরিপ্রেক্ষিতে  রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেন রেলমন্ত্রী।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফিরোজ সালাউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘গত প্রান্তিকে আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়নের হার ছিলো মূলত ১১ শতাংশ, এখন তা ১৫ শতাংশ। ’

প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গত বছর রেলপথ মন্ত্রণালয় তাদের বাজেটের ৯৯ দশমিক ৮ শতাংশ খরচ করতে পেরেছে। আমরা ভালো কাজ করছি, এগোচ্ছি...। ’

সূত্র জানায়, রেলওয়ের অধিকাংশ প্রকল্পের অগ্রগতি কাগজে-কলমে। আর তাই অগ্রগতি শূন্যের কোঠায় থাকাকে ‘শ্লথগতি’ এবং কিছু অগ্রগতি আছে এমন প্রকল্পকে ‘ধীরগতি’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে খোদ রেলপথ মন্ত্রণালয়।

দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, বছরের পর বছর রেলওয়ের প্রকল্প চলতে থাকায় প্রতিটি প্রকল্পের ব্যয় বেড়েই চলছে। অগ্রগতি না থাকায় নতুন করে প্রকল্পের অনুমোদন দিতে ব্যাপক পর্যালোচনা করছে পরিকল্পনা কমিশন।

এরই অংশ হিসেবে কিছু প্রকল্প ঝুলে আছে আবার কিছু ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে মন্ত্রণালয়ে।

রেলমন্ত্রীর কাছে পাঠানো ডিও’তে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেছেন, ‘২০১৫-১৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে আপনার মন্ত্রণালয় মোট ৪৫টি প্রকল্পের অনুকূলে ৫৪১০.৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে।   ইতোমধ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অতিক্রান্ত হয়েছে। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ কর্তৃক বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন কার্যক্রমের অগ্রগতি প্রতিবেদন মতে, গত প্রান্তিকে আপনার মন্ত্রণালয়/বিভাগের প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতি হার ৪ শতাংশ। ’

এ বাস্তবায়ন হার কোনোভাবেই সন্তোষজনক নয় উল্লেখ করে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণ চিহ্নিত করে তা দূরীভূত করার পরামর্শ দেওয়া হয় চিঠিতে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে অসন্তুষ্টি প্রকাশের পর সম্প্রতি রেলমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এক বৈঠকেও প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণ চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্টদের তা দূরীভূত করার নির্দেশ দেন মন্ত্রী।

ওই বৈঠকে উঠে আসে, আগের বছরের তুলনায় এবার বরাদ্দ বেশি হলেও কাজের অগ্রগতি কম। এ অবস্থায় মাঠপর্যায়ে প্রকল্পগুলোর কার্যক্রমের তদারকি বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এছাড়া অনিয়ম বা অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা, এমনকি অব্যাহতির নির্দেশনার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। কিন্তু রেলওয়ের আওতাধীন চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের গতি আশানুরূপ নয়।

মোট ৪৫টি প্রকল্পের মধ্যে বিনিয়োগ ৪০টি এবং টিএ (টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স) ৫টি।

এসব প্রকল্পের মধ্যে জিওবি (বাংলাদেশ সরকার) অর্থায়নে ১৪টি, জেডিসিএফ (জাপানি ঋণ মওকুফ সহায়তা তহবিল) অর্থায়নে ২টি, ভারতীয় এলওসি ঋণে ১১টি, এডিবি অর্থায়নে ১০টি, জাইকা’র ৪টি, ইডিসিএফ’র (কোরিয়ান ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড) ১টি এবং বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৩টি বাস্তবায়নাধীন।

এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ৩টি প্রকল্পের ব্যয় খাত সংশোধনের প্রয়োজন থাকায় অর্থ অবমুক্ত করা সম্ভব হয়নি।

আবার কয়েকটি প্রকল্পের অর্থ অবমুক্তির প্রস্তাবই করা হয়নি। কিছু প্রকল্পের অর্থ অবমুক্ত করা হলেও ব্যয় হয়নি। শুধু তাই নয়, কিছু প্রকল্পে ব্যয় হলেও বাস্তব অগ্রগতি হয়নি এবং ব্যয় কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে বা বাস্তব অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়নি।

পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট কিছু প্রকল্পে সাহায্যের শর্ত প্রযোজ্য থাকায় অর্থ ছাড় সম্ভব হয়নি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ভূমি অধিগ্রহণ কিংবা জমি হস্তান্তর ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ- এসব কাজ প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ভারতীয় এলওসির আওতায় বাস্তবায়নাধীন কিছু প্রকল্প অনুমোদন এবং কাজের চুক্তির পরও এক্সিম ব্যাংক সম্মতি দিতে দেরি করেছে। এতে কাজেও দেরি হয়েছে। এসব যুক্তি রেলওয়ের পক্ষ থেকে দেখানোর পর মন্ত্রণালয় বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, রেলওয়ের চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে রেলখাত অনেক দূর এগিয়ে যাবে। রেলের দৃশ্যমান উন্নয়নও তখন চোখে পড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৫
এডিএ/এমএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।