মাগুরা: রোববার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৫। মাগুরা মুক্ত দিবস।
৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসররা মাগুরা থেকে ফরিদপুর হয়ে ঢাকার দিকে পালাতে শুরু করে। ৭ ডিসেম্বর ভোরে শ্রীপুর বাহিনীর অধিনায়ক আকবর হোসেন মিয়ার নেতৃত্বে মুক্তি বাহিনী বিজয়ের বেশে শত্রুমুক্ত মাগুরা শহরে প্রবেশ করে। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন শ্রীপুর বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড মোল্লা নবুয়ত আলী।
সকাল ১০টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা গোটা শহরের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি গ্রহণ করে। মুক্তিকামী মানুষের মিছিলে পরিণত হয় মাগুরা শহর। জেলার সর্বত্র পতপত করে উড়তে থাকে স্বাধীন দেশের মানচিত্র খচিত পতাকা। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে মাগুরা মুক্ত হয় পরদেশী শত্রুর হাত থেকে।
মাগুরার মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান- ২৬ মার্চের পরপরই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মাগুরা শহরের পি.টি.আই ভবন, ওয়াপদা ভবন, সরকারি হাইস্কুল, সরকারি কলেজে, আনসার ক্যাম্পে ঘাটি স্থাপন করে রাজাকার ও পিচ কমিটির সহযোগিতায় ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতন শুরু করে।
অত্যাধুনিক অস্ত্রেসজ্জিত পাকিস্তানি সেনারা মাগুরায় পৌঁছালে মুক্তিযোদ্ধারা শহর ছেড়ে মাগুরার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা মাগুরার শ্রীপুর, বিনোদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে একাধিক বীরোচিত যুদ্ধ করে শ্রীপুর ও শৈলকুপা থানা দখল করে।
মুক্তিযুদ্ধের বেশিরভাগ সময়ই মাগুরার শ্রীপুর এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকা ছিল মুক্তাঞ্চল। এ বাহিনী মাগুরার সীমানা ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকায় একাধিক সফল অপারেশন পরিচালনা করে। এ সময় একাধিক সম্মুখ যুদ্ধে আকবর মিয়া-নবুয়ত মোল্লার নেতৃত্বে শ্রীপুর বাহিনী, মহম্মদপুরে ইয়াকুব আলীর নেতৃত্বে ইয়াকুব বাহিনী, সদরের হাজিপুর বাহিনী ও শহর কেন্দ্রিক আব্দুল মাদের খন্দকারের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা পাকিসেনা ও রাজাকারদের রীতিমত পর্যুদস্ত করে তোলে। এরই ধারাবাহিকতায় ৭ ডিসেম্বর মুক্ত হয় তৎকালীন মাগুরা মহাকুমা।
মাগুরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে জানান- ৭ ডিসেম্বর যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মাগুরা ইউনিট নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল সাড়ে ১০টায় নোমানী ময়দানে পতাকা উত্তোলন, শহরে বর্ণাঢ্য র্যালি ও সৈয়দ আতর আলী লাইব্রেরি চত্বরে আলোচনা সভা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৫
পিসি/