ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ক্রমশ প্রযুক্তি নির্ভরতা বাড়ছে নৌ-সেক্টরে

সাজেদা সুইটি, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৫
ক্রমশ প্রযুক্তি নির্ভরতা বাড়ছে নৌ-সেক্টরে

ঢাকা: সম্প্রতি বহুমাত্রায় ব্যস্ত হয়ে ওঠা নৌ-পরিবহন সেক্টরটি নিচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তির স্বাদ। যাত্রীসেবা, দ্রুত যোগাযোগ, মিতব্যয়ীতাসহ বেশ কিছু সুবিধা পেতে প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করছেন সংশ্লিষ্টরা।



নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলছেন, এ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তদারকিতে হচ্ছে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয়ে অটল প্রধানমন্ত্রী এ সেক্টরকে আধুনিক করে তুলছেন দ্রুতই। বাংলাদেশের মেরিন সেক্টরকে বিশ্বের বুকে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাতেই তার এতো পরিশ্রম।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সঙ্গে আলাপে সেক্টরটির সাম্প্রতিক প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সম্পর্কে জানা যায়।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, বছর শেষের প্রতিবেদন তৈরি হয়ে গেছে। সারাবছরে অর্জনের হিসেব-নিকেশ করা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই মন্ত্রণালয়ে জমা হবে সেগুলো। এদিকে, হিসেব বলছে, অর্জন অনেক। বিশেষ করে, বিগত বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে অর্জনের পাল্লা ভারি হয়েছে। এতে ভূমিকা রেখেছে নতুন যোগ হওয়া প্রযুক্তিগুলো।

ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেম (ভিটিএস)
ভিটিএস চালুতে সহযোগিতা দিয়েছে দেশের সেরা মোবাইল ফোন কোম্পানি গ্রামীণ ফোন। এ সিস্টেমে ৪২টি জাহাজের উপর কেন্দ্রীয়ভাবে নজরদারি সম্ভব হচ্ছে। জাহাজের গতিবিধি, কোথায় কোনটি চলাচল করছে, কোনটির অবস্থা কী, কোনো সহযোগিতা লাগবে কিনা, সমস্যায় পড়লে সহযোগিতা কিভাবে দেওয়া হবে- এসব দেখে-শুনে বোঝার সুযোগ পাচ্ছেন কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ। জাহাজগুলোর সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে।

ই-টিকেটিং সিস্টেম
যাত্রীসেবায় অনলাইনে ই-টিকেটিং ব্যবস্থা। সহজ.কম (sohoz.com) অনলাইনে যাত্রীদের গন্তব্যের টিকিট পাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।

র‌্যাপিড পাস
র‌্যাপিড পাসও মূলত ই-টিকিটিং। বিআইডব্লিউটিসি জাইকার (জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি) সঙ্গে এ বিষয়ক চুক্তি করেছে।

নৌ-সচিব শফিক আলম মেহেদী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোর দিচ্ছেন ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করতে। তিনিই এ কার্ডটির নাম ‘র‌্যাপিড পাস কার্ড’ রেখেছেন। পরীক্ষামূলকভাবে ডিজিটাল পদ্ধতির এ ম্যাগনেটিক কার্ড চলবে। হাতে লেখা কোনো টিকিটের প্রয়োজন থাকছে না এখন। যাত্রীদের কাউন্টারে এসে অপেক্ষাও করতে হচ্ছে না।

এতে স্লোগান দেওয়া হয়েছে- ‘ওয়ান কার্ড ফর অল পাবলিক ট্রান্সপোর্ট’। এ কার্ডের বাহক বিআইডব্লিউটিসি’র অন্য সব যানবাহনেও একই সুবিধা পাবেন। ব্যবহারকারীরা বিআইডব্লিউটিসি ও বিআরটিসি’র সব কাউন্টার থেকে এ কার্ড রিচার্জ করতে পারবেন। বিভিন্ন এটিএম বুথ থেকেও রিচার্জ করা যাবে।
 
ফেয়ার অটোমেশন সিস্টেম চালু হলে বিআইডব্লিউটিসি থেকে কম সময়ে টিকেট সংগ্রহ করতে পারবে। র‌্যাপিড পাস কার্ড/ প্রি-পেইড কার্ড ব্যবহারের কারণে নগদ টাকা সঙ্গে রাখার প্রয়োজন হবে না। বাস-ট্রাক মালিক যেকোনো সময় কার্ড সংক্রান্ত স্টেটমেন্টও দেখতে পারবে বলে জানান কর্মকর্তারা।

কোনো সিরিয়াল বা কালোবাজারির সুযোগ থাকছে না। থাকবে না কোনো দালাল, সময়ও নষ্ট হবে না এ সিস্টেমে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত জাইকার সিনিয়র প্রতিনিধি টাকু ইয়ামাবে এ প্রসঙ্গে বলেন, এ পদ্ধতিতে যাত্রীদের সময় ও শ্রম বাঁচবে। যাত্রী ও সেবাদাতা-উভয় পক্ষই এতে সুবিধা পাবেন।

ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম
কর্তৃপক্ষ বলছে, কাজলা টেকনোলজির মাধ্যমে এটি হচ্ছে, রমনা জোনসহ প্রোভাইডিং এরিয়ায়। আইপি (ইন্টারনেট ফোন উইথ ভিডিও কনফারেন্স) প্রধানমন্ত্রীর এটুআই প্রকল্পের অংশ। নৌ-সেক্টর এটি পেয়ে ‘সেটআপ’ করেছে।

জাহাজ-‘এমভি মধুমতি’ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেই উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। গতবছর এমভি-বাঙালি নামের জাহাজে সশরীরে আরোহন করে সারাদিন ভ্রমণ করেছেন তিনি। মোহনপুর মোহনায় গিয়ে জনসভাও করে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।
 
আইপি ফোন সারাদেশে যোগাযোগে খরচ কমিয়ে দিচ্ছে এবং বাংলাদেশকে গ্লোবাল ভিলেজে প্রবেশের সুযোগ করে দিচ্ছে।  

প্রযুক্তিতে বন্ধু যারা
কর্মকর্তারা বলছেন, প্রযুক্তির দিকে বাংলাদেশকে সবয়েচে বেশি সহযোগিতা যারা দিয়েছে, চীন তাদের অন্যতম।

এছাড়া জাপান, তুরস্ক, ফ্রান্স, ডেনিডা, ডেনমার্ক, আমেরিকা পাশে আছে, সহযোগিতা দিচ্ছে।

সেক্টরে ব্যবহৃত ফগ লাইট আমেরিকার সহযোগিতায় হয়েছে। ডিজিটাল রেকারও বিদেশি সহযোগিতায় এসেছে।

দেশেই হচ্ছে যন্ত্রাংশ
এক সময় বেশিরভাগ যন্ত্রাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। কিন্তু এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে এসব, করছে বিটাক। ইন্টারনাল প্রোডাকশনের মাধ্যমে সরবরাহ করা যাচ্ছে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে। বিটাকে হাইটেক সংযুক্ত হয়েছে আগেই।

কর্মকর্তারা জানান, এখনও সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাল বলা না গেলেও পরীক্ষামূলকভাবে এসব চলছে। সম্পূর্ণ ডিজিটাল হলে আরও উন্নয়ন হবে এসব ব্যবস্থায়, সেক্টরও আরও এগোবে।

তারা বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহারের উপযোগী করতে নৌ-যানগুলোকেও আরও আধুনিক করা হয়েছে। এগুলো এখন অনেক মজবুত করে গড়া হয়, কোনোটি ঠুনকো নয়। কারণ প্রতিযোগিতা বেড়ে গেছে।
 
এগুলোর ওয়্যারলেস সিস্টেম ভালোভাবে করা হয়েছে। মোবাইল টেকনোলজি ব্যবহার হচ্ছে।

কাজ বেড়েছে সবার
প্রযুক্তি এসে মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ যে কমিয়েছে, তা নয়।

কেউ কেউ বলছেন, কাজ বেড়েছে ১২/১৩ গুণও। জাতীয় কৌশল ও নীতিমালা, শুদ্ধাচার, বার্ষিক অর্জনের ফিরিস্তি, নাগরিক অধিকার, তথ্য পাওয়ার অধিকারসহ বিভিন্ন বিষয় মনে রাখতে হচ্ছে তাদের। এগুলোর অনেকখানি একদমই নতুন সংযুক্ত। প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেকোনো বিষয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় নিজেদের প্রস্তুত রাখছেন বলে জানান কর্মকর্তারা।

তবে আনন্দিত বিআইডব্লিউটিএ ব্যস্ত এখন নতুন জাহাজ গড়ায়। ১৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সশস্ত্র বাহিনীর সামনে বিশেষ জাহাজটি প্রদর্শিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৫
এসকেএস/এমএ/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।