ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নারায়ণগঞ্জে গণপিটুনি

‘ডাকাত’ পরিচয় মানতে নারাজ এলাকাবাসী

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৫
‘ডাকাত’ পরিচয় মানতে নারাজ এলাকাবাসী ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মধ্যবাড়েরার পাড় থেকে ফিরে: ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মধ্যবাড়েরার পাড় বাদল মিয়ার মনিহারী দোকানের টিভির সামনে মানুষের জটলা।

নিজেদের গ্রামের দুই যুবক শওকত আলী (৩০) ও রুবেল মিয়া (২৮), নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় ডাকাতি করতে গিয়ে গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার পর থেকেই তারা নড়ছেন না টিভি সেটের সামনে থেকে।

 

প্রাণোচ্ছ্বল এ দুই যুবক ডাকাতি করতে পারেন, এটিও মানতে নারাজ স্থানীয় এলাকাবাসী। এরপরও তাদের ‘ডাকাত’ পরিচয়ের ঘটনায় তারা স্তম্ভিত। একই সঙ্গে শোকস্তব্ধ।

তাদের ভাষ্যে, নিহত শওকত ও রুবেল এবং আহত সজীব একসঙ্গে চলতেন ঠিকই। কিন্তু তাদের ‘ডাকাত’ সম্বোধন করে মিডিয়ায় শিরোনাম করায় তারা মর্মাহত।

বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে ওই এলাকায় গেলে স্থানীয়রা এমন দাবি জানান।

সেখানেই একটি মোটর বাইকে বসে মুঠোফোনে অনবরত কথা বলে যাচ্ছিলেন আহত সজিবের বড়ভাই ময়মনসিংহের আনন্দনমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম জসিম।

তিনিও তার ভাই ও বন্ধুদের ডাকাত বলায় ক্ষুব্ধ। তার মতে, কারও না কারও প্ররোচনায় তারা হয়তো সেখানে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। কিন্তু অস্ত্রের মুখে নিরাপত্তা প্রহরীকে জিম্মি করে চাল লুটের ঘটনা ঘটানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তারা ষড়যন্ত্রের শিকার।

স্থানীয়রা জানান, ওই গ্রামের শওকত আলীর বাবার নাম শহর আলী। ময়মনসিংহ নগরীর সুরক্ষা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্যাথলজিস্টের কাজ করতেন শওকত। আর রুবেল বাবা আব্দুল হাই গ্রামের পাড়ার মোড়ে চায়ের দোকান চালান। বড়ছেলে রুবেল বাবার দোকানেই থাকতেন। পাশাপাশি মৌসুমী ফলের ব্যবসা করতেন।

বুধবার দিনগত রাতে সদর উপজেলার চুরখাই এলাকার মিজান নামে এক বন্ধুর ফোনে সাড়া দিয়ে শওকত বাড়ি থেকে বের হন। এরপর শওকতের ডাকে রুবেল ও সজিব বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান, এমন দাবি তাদের পরিবারের।

শওকত আলীর পাশের বাড়িতেই থাকেন রুহুল আমিন (৪০)। তিনি জানান, মাস দুয়েক আগে শওকতের বাবা মারা যান। তাদের অভাব-অনটনের সংসার। প্যাথলজিস্টের চাকরি করে সংসার চালাতেন। কারও না কারও প্ররোচনায় তারা সংঘবন্ধ হয়েই নারায়ণগঞ্জে গিয়েছিলেন। কিন্তু ডাকাতি করার মতো মানুষ ওরা নন।

‘টিভিতে খবর দেইখ্যা আমরা সবাই হতভম্ব। বিশ্বাসই হচ্ছে না। এলাকায় তো অগোর খারাপ কোনো রেকর্ড নাই’। বলছিলেন শওকতের চাচা মাইনুদ্দিন (৪৫)।

তার ভাষ্যে, এইটা কারও না কারও চাইল হতে পারে। এই চাইলেই ওরা ধরা খাইছে। জীবন গেছে।

একই রকম মত স্থানীয় ক্যাবল ব্যবসায়ী মো. ইউসুফের (২৮), ওরা কেউ পড়াশুনা করে নাই। সংসারে অভাব আছে। কিন্তু ডাকাতি করতে পারে এইটা বিশ্বাস করতে পারতাছি না। সাধারণ এইসব পোলাপান ডাকাতি করবো কেমনে? লোভ দেখাইয়া কেউ হয়তো অগোরে ব্যবহার করছে।

পাশেই দাঁড়ানো বাসের হেলপার হারুন অর রশিদ (২০) বলেন, ওরা তো কেউ বেকার না। কাম-কাজ করেই ভাত খাইতো। অগোর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও নাই। ডাকাতি করার মতো সাহস নাই ওদের।

এ ঘটনায় আহত সজিবের ভাই জাহিদুল ইসলাম জসিম বলেন, তাজা কয়েকটি প্রাণ এভাবে ঝরে গেলো। গোটা এলাকাবাসী মর্মাহত। আমরা এ ঘটনায় মামলা করবো।  

** গণপিটুনিতে ৮ ডাকাত নিহতের ঘটনায় মামলা

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৫
এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।