পদ্মাপাড় (মাওয়া) থেকে ফিরে: বিশ্বের অন্যতম বড় সেতুর কর্মযজ্ঞ চলছে বাংলাদেশে। পদ্মা বহুমুখী সেতু-সরকারের সবচেয়ে অগ্রাধিকার প্রকল্প এবং মেগা প্রজেক্ট।
সেকেন্ডে ১ লাখ ৪০ হাজার ঘন মিটার পানি প্রবাহ:
ঢাকা শহরে সারাদিন যতো পানি লাগে মাত্র ২০ সেকেন্ডে পদ্মাসেতু দিয়ে সেই পরিমাণ পানি প্রবাহিত হয়। পানি প্রবাহের দিক বিবেচনায় বিশ্বে আমাজান নদীর পরেই এই প্রমত্তার স্থান।
পদ্মায় মাওয়া পয়েন্টে প্রতি সেকেন্ডে ১ লাখ ৪০ হাজার ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হয়- তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন পদ্মাসেতুর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী।
সে হিসেবে দেখা যায়, মাত্র ২০ সেকেন্ডে যে পানি পদ্মা নদী অতিক্রম করে তাতে পুরো ঢাকা শহরের একদিনের পানি সরবরাহ হয়ে যায়। পদ্মাসেতুর তল দিয়ে এই পানি প্রবাহিত হবে যা এক অনন্য বৈশিষ্ট্য এই সেতুটির জন্য।
১০ কিলোমিটার গভীরে পাথরের স্তর:
বাংলাদেশের বেশিরভাগ এলাকা পলি মাটির। হিমালয় থেকে শুরু করে মাটি ক্ষয় হতে হতে পানির সঙ্গে এসে সেটি বসে গিয়ে গঠিত হয়েছে বদ্বীপ। ভূবিজ্ঞানীদের মতে বাংলাদেশ এখনও বদ্বীপ হিসেবে নতুন। তাই পদ্মা নদীর ১০ কিলোমিটার নিচে রয়েছে পাথরের স্তর। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য নদী ও নদীর ওপর সেযব সেতু আছে সেগুলোর কোনোটিরই পাথরের স্তর এতো নিচে নয়। এ কারণে ৪০০ মিটার গভীরে পাইল নিয়ে যাওয়া হবে। বিশ্বের অন্যান্য সেতু তৈরির সময় নদীর এতো তলদেশে যেতে হয়নি। কিন্তু পদ্মাসেতুতে এতোটাই তলদেশে যেতে হবে, যা বিরল।
বিশ্বের সর্বোচ্চ শক্তির হেমার:
পদ্মাসেতুর পাইল নদীর তলদেশে নিতে যে হেমার লাগবে সেটি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী হাতুড়ি (হেমার- Hammer)। পৃথিবীর কোথাও আর কোনো সেতুতে এমন শক্তিশালী হেমার ব্যবহৃত হয়নি। এই হেমারটি জার্মানি থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় তৈরি করে নিয়ে আসা হয়েছে। যা শুধু এই সেতুর জন্যই তৈরি।
পদ্মাসেতুর মতো বড় ও লম্বা পাইল আর কোনো সেতুতে ব্যবহার হতে দেখা যায়নি। এর পাইল এতো গভীরে যাচ্ছে যে- ভেতরে এটি ৪০ তলা ভবনের সমান হবে।
এক পাথর এক টন:
পদ্মাসেতুর আরেক বড় চমক হচ্ছে এক টন ওজনের পাথর। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই পাথর ব্যবহৃত হবে পদ্মাসেতু প্রকল্পে। এতো বড় পাথর এর আগে দেশের কোনো অবকাঠামো নির্মাণে ব্যবহৃত হয়নি। এ পাথর ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্য থেকে (পাকুর পাথর) আমদানি করা হবে। এসব পাথরের এক একটির ওজন প্রায় এক টন। মাত্র ১৫টি টুকরো পাথরে ভরে যাবে একটি বড় ট্রাক।
মন্ত্রীর রেকর্ড:
পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশের সেতু বিভাগ। সেতু বিভাগ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে। সেই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মাত্র দেড় বছরে সেখানে গিয়েছেন প্রায় ২০০ বারের কাছাকাছি। এটিই বাস্তব সত্য। বাংলাদেশে আর কোনো সেতু বা প্রকল্পের কাজে কোনো মন্ত্রীর এতো নজরদারি দেখা যায়নি।
সবচেয়ে বড় কারখানা:
কাগজে কলমে না হোক- বিশ্বের সবচেয়ে বড় কারখানা বলা যায় পদ্মাসেতুর ফেব্রিকেশন ইয়ার্ড। যেখানে প্রস্তুত হচ্ছে সেতুর পাইল আর স্পেন। এই ইয়ার্ডের আয়তন ৩০০ একর। এর একদিকে স্টেল প্লেট ঢুকছে অন্যদিকে পাইল হয়ে তা বের হচ্ছে। এরপর রেললাইনে করে সেটি পড়ছে পদ্মায়।
এতো সব বৈচিত্র্য-অনন্য ও শ্রেষ্ঠত্ব নিয়েই ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে বাঙালির স্বপ্নের পদ্মাসেতু। যার পূর্ণ বাস্তবরূপ কেবলই খানিক সময়ের অপেক্ষায়।
বাংলাদেশ সময়: ০০০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৫
এসএ/আইএ