ঢাকা: ভূমিকম্প, মাটির ক্ষয় সহ যে কোন আঘাত প্রতিরোধ করে টিকে থাকবে পদ্মা সেতু। একশ’ বছরেও কিছু হবে না এই সেতুর।
সেতুর শক্তি অটুট রাখতে বাঁকা করে নদীর তলদেশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে পাইল। এছাড়া গাড়ি ও মালবাহী দ্বিতল রেলের ভার বহনে সক্ষম করার জন্য নদীর ১২০ মিটার গভীরে পিলারের গোড়া পুঁতে দেয়া হবে। যা একটি ৪০ তলা ভবনের সমান।
পদ্মা সেতুর মূল পাইলিং ড্রাইভ শুরুর প্রাক্কালে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এমনটি জানিয়েছেন সেতুর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান ও দেশের খ্যাতিমান ভূতত্ত্ববিদ ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী।
১২ ডিসেম্বর শুরু হচ্ছে পদ্মা সেতুর মূল পাইল ড্রাইভিংয়ের কাজ, যার সূচনা করবেন সেতুর স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সম্প্রতি রাজধানীর ফার্মগেট-এ এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির (এপিইউ) নবনির্মিত ভবনে পাইল ড্রাইভ নিয়ে কথা বলেন জামিলুর রেজা চৌধুরী।
পানি প্রবাহের দিক থেকে দক্ষিণ আমেরিকার আমাজানের পরেই পদ্মা নদীর অবস্থান। পদ্মায় প্রতি সেকেন্ডে এক লাখ ৪০ হাজার ঘন মিটার পানি প্রবাহিত হয়।
ব্রিজের নকশায় প্রণয়ণকালেই এমন হিসেব করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ১০০ বছরে পদ্মায় কত পানি যেতে পারে সেটা বিবেচনায় নিয়ে দেখা গেছে, মাত্র ২০ সেকেন্ড যে পানি পদ্মা নদীতে প্রবাহিত হয় তাতে পুরো ঢাকা শহরের একদিনের পানি সরবরাহ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ এলাকা পলি মাটির। হিমালয় থেকে শুরু করে মাটি ক্ষয় হতে হতে পানির সাথে এসে সেটা বসে গিয়ে গঠিত হয়েছে এই ব-দ্বীপ।
জিওলজিস্টদের ধারণা এটা এখনও ব-দ্বীপ হিসেবে নতুন। এই ব-দ্বীপকে ‘ইয়াং ডেল্টা’ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।
‘পদ্মা সেতু বিশ্বের অনন্য বৈশিষ্ট্যের একটি সেতু হবে এর তলদেশের গভীরতার কারণে’ মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলেন, পদ্মা নদীতে ১০ কিলোমিটার নিচে পাথরের স্তর। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য নদী ও নদীর উপর সেতু নির্মাণের সময় পাথরের স্তর পেতে এত নিচে যেতে হয় না। তাই এখানে পাইল ড্রাইভিংয়ে দুটি হ্যামার কাজ করবে।
এই হ্যামার শুধুমাত্র পদ্মাসেতুর জন্য জার্মানি থেকে তৈরি করে নিয়ে আসা হয়েছে। এত শক্তিশালী হ্যামার বিশ্বের আর কোথাও ব্যবহৃত হয়নি।
এ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর ভার ধারণ ক্ষমতা অনেক বেশি হবে। এর উপর যেমন সড়ক হবে তেমনি হবে রেললাইন। এই রেললাইন মালবাহী দ্বিতল ওজনের।
তিনি বলেন, পাইল নিয়ে আমাদের অনেক গভীরে যেতে হচ্ছে সেই গভীরতা হলো ৪০০ মিটার।
তাই সেতুর খুঁটিগুলো এসব ভার বহনে সক্ষম হবে। ৪১টি স্প্যান বসে সেতু হবে। স্প্যানগুলো বসবে ৪২টি খুঁটির উপর আর প্রত্যেক খুঁটির নিচে ৬টি করে
পাইল থাকবে।
অনেকেই বলছেন এখনও পদ্মাসেতুর মূল ব্রিজের কোন কাজ দেখি না-এমন প্রশ্ন নিজেই তুলে তিনি বলেন, এত বড় সেতুর জন্য অনেক কিছু মোবিলাইজেশন প্রয়োজন। সেটা এক বছর ধরে হয়েছে। বিশাল কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড হয়েছে। পাইল তৈরি শুরু হয়েছে। অনেক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে হয়েছে। একেক জায়গার মাটির একেক ধরণ থাকে সেজন্য বেশ কয়েকটি মাটি পরীক্ষার কাজও চলছে।
তবে এখন নদী তীরের যে পাইল ড্রাইভ শুরু করবেন প্রধানমন্ত্রী- এতেই কিন্তু শুরু হয়ে গেলো ব্রিজের গড়ে ওঠা।
বাংলাদেশ সময়: ০০১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৫
এমএস/এসএ/আরআই