ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সৈয়দপুর থেকে মফিজুল সাদিক

‘হাম জিসকো চাহেঙ্গে! উসিকো ভোট দেঙ্গে’

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৫
‘হাম জিসকো চাহেঙ্গে! উসিকো ভোট দেঙ্গে’ ছবি: দিপু মালাকার/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে: একটি ভিন্নধর্মী পৌরসভা নীলফামারীর সৈয়দপুর। এখানে উর্দু ভাষাভাষি (বিহারি) মানুষের আধিক্য রয়েছে।

সংখ্যায় তারা একেবারে কম নন। পৌরসভার ২২টি ক্যাম্পে সংঘবদ্ধভাবে বসবাস করেন তারা। ক্যাম্পের বাইরেও রয়েছে প্রচুর বিহারির বসবাস। সব মিলিয়ে প্রায় ৩৮ হাজার বিহারি ভোটার রয়েছেন সৈয়দপুর পৌরসভায়।

তাই বাংলা ভাষার পাশাপাশি চলছে উর্দু ভাষায়ও প্রচার-প্রচারণা।
 
আগামী ৩০ ডিসেম্বরের পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই বিষয়টি নিয়ে চায়ের কাপ থেকে শুরু করে সব স্থানেই চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। পৌরবাসীর মুখে এখন এক সুর- যে প্রার্থী বিহারি ভোটারদের মন জয় করতে পারবেন তিনিই পৌরপিতা নির্বাচিত হবেন বিপুল ভোটে। পৌর মেয়রের চাবি বলতে গেলে এখন বিহারিদের হাতে।
 
তবে এখনও কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন তারা সে বিষয়ে কোনো ভোটার স্পষ্ট করে কিছুই বলেননি। বিহারিদের একজন নেতাও রয়েছেন। নেতার পছন্দের প্রার্থীকেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করে থাকেন তারা।
 
উর্দুভাষি জিলানীর বসবাস পৌরসভার কাজীপাড়ায়। কেমন প্রার্থীকে ভোট দেবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কাক ভোট দিবো এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি’।
 
সৈয়দপুর পৌরসভায় মোট ভোটার ৮১ হাজার ৩৬৫ জন। এর মধ্যে ৪০ হাজার ৫১৩ জন নারী ভোটার। মোট ভোটারের  মধ্যে উর্দুভাষি (বিহারি) ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৩৮ হাজার জন।
 
তবে বিহারিরা একেবারে মানবেতর জীবন-যাপন করেন এখানে। তাদের ছেলে-মেয়েরা হাতেগোনা কয়েকজন পড়ালেখা করছে। অধিকাংশই নাপিত, মিস্ত্রি, ক্ষুদ্র ব্যবসা, অটোচালক ও নাপিতের কাজ করে উপার্জন করেন।
 
রোববার (১৩ ডিসেম্বর) প্রবেশ করেছিলাম চামড়াগুদাম বিহারি গিয়ে দেখা গেছে অনেকে উপার্জনের জন্য নানা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসা করছেন। অনেকে কারচুপির কাজে ব্যস্ত।
 
বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দা জাহিদ। একটি সেমাই কারখানায় দিনমজুরের কাজ করেন তিনি। আসন্ন পৌরসভায় কেমন প্রার্থীকে ভোট দেবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হাম জিসকো চাহেঙ্গে! উসিকো ভোট দেঙ্গে’।
 
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মুন্নি। স্বামী অটোবাইক চালান। দু’জনের আয়েও তিনটা ছেলে-মেয়ের পড়াশোনাসহ জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে পড়ে।
 
পৌরসভার ভোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হামকো জিসকো আচ্ছা লাগে গা উসিকো ভোট দেয়েঙ্গে’।
 
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সৈয়দপুর পৌর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক সাখাওয়াৎ হোসেন খোকন নৌকা, বিএনপির প্রার্থী বর্তমান মেয়র বিএনপির রাজনৈতিক জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন সরকার ধানের শীষ, জাতীয় পার্টির প্রার্থী পৌর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন লাঙ্গল ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী দলের সৈয়দপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক হাফেজ নূরুল হুদা হাতপাখা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।

তবে ভোটারদের মতে, মেয়র পদে মূল লড়াই হবে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে।

২২টি ক্যাম্পের বাসিন্দাদের টার্গেট করে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। বিহারিদের অবস্থানের কারণে বাংলার পাশাপাশি উর্দুতেও চলছে প্রচারণা। বিহারি ভোটারদের বাগে আনতে প্রার্থীরা দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।

১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সৈয়দপুর পৌরসভা। ৩৪ বগকিলোমিটার আয়তনের ১৫টি ওয়ার্ডে মিশ্র ভাষাভাষির মানুষ বসবাস করেন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই উর্দুভাষি (বিহারি)।
 
বিহারিদের প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সৈয়দপুর পৌর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক সাখাওয়াৎ হোসেন খোকন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা এখন আর তাদের অবাঙালি মনে করি না। তারা এখন আমাদের মতোই। আওয়ামী লীগ সব সময় বিহারিদের সুরক্ষা করেছে। তাদের উন্নয়নে কাজও করছে’।
 
একই সুর বিএনপির প্রার্থী অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন সরকারের মুখে। বিহারি ভোটার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সৈয়দপুরে অনেক বিহারি আছেন। বিএনপি তাদের সুরক্ষায় নানা কাজ করছে। বিহারিরাও বিএনপিকে ভালোবাসেন। তারা সব সময় আমাদের ভোট দিয়েছেন। এবারও দেবেন বলে আশা করছি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৫
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।