ঢাকা: নাসিম উদ্দিন। বুয়েটের (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) ১৯৯১ ব্যাচের শিক্ষার্থী তিনি।
পুরনো বন্ধুদের পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে যান নাসিমউদ্দিন। বন্ধুদের টানে আমেরিকা থেকে উড়ে আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আজকে মনে হচ্ছে বুয়েট ক্যাম্পাস লাইফে ফিরে গেছি। বয়স ২৫ বছর কম মনে হচ্ছে। আনন্দ-অশ্রুর মিলন আজ। অনেক বন্ধুকে দেখে চিনতেও পারছি না। অথচ ২৫ বছর আগে ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে শহিদ মিনার ও নিউমার্কেট এলাকা দাপিয়ে বেড়াতাম।
শুধু নাসিম নয় অনেকেই আবেগে আপ্লুত হয়ে যান। সেমিনারে সুদূর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সিঙ্গাপুর, কুয়েত, কাতার, ওমান, ইংল্যান্ডসহ নানা দেশ থেকে মিলিত হন ‘বুয়েট ৯১ ক্লাবের’ বন্ধুরা।
২৫ বছর আগে অনেকের মাথায় বড় বড় চুল ছিল, আজ হয়তো তার মাথায় টাক পড়েছে। ক্লিন সেভ করে যে বন্ধু ২৫ বছর বুয়েট ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়াতেন সেই বন্ধু আজ হয় তো বড় বড় দাঁড়ি রেখে দিয়েছেন। অনেক বন্ধুকে চেনা ভার। পুরনো এসব বন্ধুদের পেয়ে অনেকেই অশ্রু সিক্ত।
তাদের মধ্যে একজন শহিদ সোহরাওয়ার্দী। ১৮ বছর সিঙ্গাপুরে একটি ফার্মে পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন। পরিচিত অনেক বন্ধুর দেখা পেয়ে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, অনেক বন্ধুকে আজকে কষ্ট করে চিনতে হচ্ছে। অথচ একই হলে চারটি বছর কাটিয়েছি। অনেক বন্ধুকে ২৫ বছর পরে দেখছি। ২৫ বছর আগে আমি ক্লিন সেভ করে ক্যাম্পাসে আসতাম। আমার দাঁড়ি দেখে অনেক বন্ধুর আমাকে চিনতে কষ্ট হচ্ছে। অনেক বন্ধুকে পেয়ে চোখে পানিও এসে যাচ্ছে। তবুও ভালো লাগার কথা বলে বোঝাতে পারবো না। আজ ২৫ বছর আগে চলে গেছি। মনে হচ্ছে এখনও বুয়েটে পড়ি। এমন দিন আগে কোনো দিন আসেনি। ’
অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। বুয়েটের প্রাক্তন ছাত্র ইঞ্জিনিয়ার এম এম হাসান মামুন। বর্তমানে পাওয়ারম্যান বাংলাদেশ লিমিটেড কোম্পানিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কর্মরত। স্ত্রী নিরুপোমা নাজনিন নাহারসহ সঙ্গে এসেছে সন্তান নেহান ও রায়ান। স্বপরিবারে পুরনো বন্ধুদের নিয়ে আড্ডায় মেতে উঠেছেন সবাই।
আনন্দের পাশাপাশি বিষাদও আছে। বুয়েট ৯১ ক্লাবের ১১টি বন্ধু পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন। তাদের স্মরণে বিশেষ একটি আয়োজন করা হয়। সবাই গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন হারানো বন্ধুদের।
অনেক বন্ধু যে স্থানে কর্মরত আছেন সেই বিষয়ে বিশেষ একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করছেন। কেউ সেতু, রেল, সড়ক, বিদ্যুৎ, জাহাজসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে টেকনিক্যাল আলোচনা করেন।
সেমিনারে দেশের অন্যতম বসুন্ধরা সিমেন্ট কেক কাটার আয়োজন করে। কেক কাটেন বুয়েটের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। বুয়েট ৯১ ব্যাচের ছাত্ররা স্যারকে পেয়েও আবেগ আপ্লুত হয়ে যান।
এ সময় ছাত্রদের উদ্দেশ্য জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, আজকের দিনে সবাইকে পেয়ে অনেক ভালো লাগছে। তোমরা ব্যতিক্রমধর্মী একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছো। একদিকে ২৫ বছর পর সবার সঙ্গে দেখা, অন্যদিকে টেকনিক্যাল আলোচনা। বুয়েটকে আমাদের আরও বহুদূর নিয়ে যেতে হবে। আগামী ১৫ বছরের মধ্যে বিশ্বের ১৫তম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হবে বুয়েট।
আমি বুয়েটের ১৯৬৩ সালের ব্যাচের। আমাদের অনেক বন্ধু আজকে ইউরোপ, কানাডা ও আমেরিকায় ভালো অবস্থানে আছে। তাদের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৩২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৬
এমআইএস/আরআই