ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী নিজামীর ফাঁসি বহাল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১৬
বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী নিজামীর ফাঁসি বহাল মতিউর রহমান নিজামী

ঢাকা: বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ একাত্তরে গণহত্যা ও ধর্ষণের দায়ে আলবদর বাহিনীর সুপ্রিম কমান্ডার মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে করা জামায়াতের আমির নিজামীর আপিল আবেদন আংশিক খারিজ করে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।



একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নিখিল পাকিস্তানের সভাপতি হিসেবে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী কিলিং স্কোয়ার্ড আলবদর বাহিনীর সুপ্রিম কমান্ডার ছিলেন নিজামী। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা ছাড়াও সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটি (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) হিসেবে আলবদর বাহিনী ও ছাত্রসংঘের অপরাধের দায়ও নিজামীর বিরুদ্ধে প্রমাণিত হয়েছে রায়ে।  

বুধবার (০৬ জানুয়ারি) সকাল নয়টায় দেশের এই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার সংক্ষিপ্ত আকারে চূড়ান্ত এ রায় দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ। অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

নিজামীকে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং হত্যা-গণহত্যা ও ধর্ষণসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) প্রমাণিত ৮টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে ৪টিতে ফাঁসি ও ৪টিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ৩টিতে ফাঁসি ও ২টিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। অন্য তিনটিতে চূড়ান্ত রায়ে দণ্ড থেকে খালাস পেয়েছেন নিজামী, যার মধ্যে একটিতে ফাঁসি ও দু’টিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ ছিল ট্রাইব্যুনালের রায়ে।     

ট্রাইব্যুনালে নিজামীর বিরুদ্ধে মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ৮টি অর্থাৎ ১, ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৮ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছিল ট্রাইব্যুনালের রায়ে।
 
প্রমাণিত চারটি অর্থাৎ সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়িসহ দু’টি গ্রামে প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে গণহত্যা ও প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ (২ নম্বর অভিযোগ), করমজা গ্রামে ১০ জনকে গণহত্যা, একজনকে ধর্ষণসহ বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ (৪ নম্বর অভিযোগ), ধুলাউড়ি গ্রামে ৫২ জনকে গণহত্যা (৬ নম্বর অভিযোগ) এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (১৬ নম্বর অভিযোগ) দায়ে নিজামীকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছিল।

এর মধ্যে ৪ নম্বর অভিযোগের দায় থেকে নিজামীকে খালাস দিয়ে বাকি তিনটিতে ফাঁসি বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

অন্য চারটি অর্থাৎ পাবনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা কছিমুদ্দিন হত্যা (১ নম্বর অভিযোগ), মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে পাকিস্তানি সেনা, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র (৩ নম্বর অভিযোগ), বৃশালিখা গ্রামের সোহরাব আলী হত্যা (৭ নম্বর অভিযোগ) এবং রুমী, বদি, জালালসহ সাত গেরিলা যোদ্ধা হত্যার প্ররোচনার (৮ নম্বর অভিযোগ) দায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল।

এর মধ্যে ১ ও ৩ নম্বর অভিযোগের দায় থেকে চূড়ান্ত রায়ে খালাস পেয়েছেন নিজামী। বাকি দু’টিতে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ বহাল রয়েছে।

এ নিয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ফাঁসির তৃতীয় চূড়ান্ত রায় দিলেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। যার মধ্যে একাত্তরের আলবদর প্রধান ইসলামী ছাত্রসংঘের পূর্ব পাকিস্তান প্রধান আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে। অন্য একটি রায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বুদ্ধিজীবী হত্যার দুই ঘাতক জামায়াত নেতা আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দিন পলাতক থাকায় কাদের দণ্ড কার্যকর করা যায়নি।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি আনোয়ারুল হক ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন নিজামীকে।

এ রায়ের বিরুদ্ধে ২৩ নভেম্বর আপিল করেন নিজামী। ছয় হাজার ২শ’ ৫২ পৃষ্ঠার আপিলে মোট ১শ’ ৬৮টি কারণ দেখিয়ে ফাঁসির আদেশ বাতিল করে খালাস চেয়েছিলেন তিনি।

তবে সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় আপিল করেননি রাষ্ট্রপক্ষ।

নিজামীর মামলাটির মাধ্যমে সর্বোচ্চ আদালতে চূড়ান্ত রায় হতে যাচ্ছে ৬ষ্ঠ আপিল মামলার। ট্রাইব্যুনাল থেকে আপিল বিভাগে আসা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলোর মধ্যে এর আগে ৫ জনের মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে।
 
এর মধ্যে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আর গত বছরের ১১ এপ্রিল জামায়াতের অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং ২১ নভেম্বর জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।
 
তবে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির দণ্ডাদেশ কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ। গত বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হওয়ার পর রোববার (০৩ জানুয়ারি) ট্রাইব্যুনাল হয়ে রায়সহ সাজা পরোয়ানা পৌঁছেছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। আইন অনুসারে এর ১৫ দিনের মধ্যেই সর্বোচ্চ সাজা পুনর্বহালের আরজিতে রাষ্ট্রপক্ষ আর খালাস চেয়ে আসামিপক্ষ রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন জানাবেন বলে জানিয়েছেন দুই পক্ষ।
 
এদিকে ৭ম হিসেবে ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর আপিল মামলার শুনানি শুরুর দিন ধার্য হতে যাচ্ছে। বুধবার সকালে এ দিন ধার্য করবেন আপিল বিভাগ।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৬
ইএস/এএসআর

** রায় ঘিরে সুপ্রিম কোর্টে ব্যাপক নিরাপত্তা
** নিজামীর চূড়ান্ত রায় কিছুক্ষণের মধ্যেই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।