ঢাকা: গত বছরে সারাদেশে ছোট-বড় ছয় হাজার ৫৮১ সড়ক দুর্ঘটনায় আট হাজার ৬৪২ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ২১ হাজার ৮৫৫ জন।
শনিবার (৯ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এক রিপোর্ট উপস্থাপন করে এ তথ্য জানায়। ‘বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন-২০১৫’ শীর্ষক এ রিপোর্ট তুলে ধরেন সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আহতদের মধ্যে হাত-পা হারিয়েছেন বা অন্য কোনো অঙ্গ হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন এক হাজার ৩০৫ জন। এসব দুর্ঘটনায় সিংহভাগ পরিবারেরই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি শিকার হয়েছেন, তাতে দারিদ্র্যের কাতারে নেমেছে পরিবারগুলো।
মোজাম্মেল হক বলেন, ২০১৫ সালে এক হাজার ১৮৫টি বাস, এক হাজার ৫৬টি ট্রাক-কার্ভার্ড ভ্যান, ৮৭২টি হিউম্যান হলার, ৮৫২টি প্রাইভেট কার-মাইক্রোবাস, এক হাজার ৬৭৮টি অটোরিকশা, এক হাজার ৭৭১টি মোটরসাইকেল, এক হাজার ৭১টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও এক হাজার ৩৩টি নসিমন-করিমন দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
‘এসব দুর্ঘটনায় এক হাজার ৮০ জন শিক্ষার্থী, ৩০৫ জন শিক্ষক, ১৩৩ জন সাংবাদিক, ১০৯ জন ডাক্তার, ১২৪ জন আইনজীবী, ১০৬ জন প্রকৌশলী, ৫৩৫ জন পরিবহন শ্রমিক ও ৫১৯ জন চালক, ২৮০ জন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ৮০১ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, দুই হাজার ২৪১ জন পথচারী, ২৬১ জন সহকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, এক হাজার ৬৭৭ জন নারী এবং অন্যান্য এক হাজার ১২২ জন সাধারণ মানুষ শিকার হয়েছেন। ’
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, জিডিপি’র দেড় থেকে দুই শতাংশ এ সড়ক দুর্ঘটনার কারণে ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে। অথচ পুলিশের কাছে সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ বা মামলা করেও ভিকটিম প্রয়োজনীয় আইনগত সহায়তা পায় না। দেশের বিত্তবানরাও সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির পাশে দাঁড়ান না। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন মেধাবী ও কর্মক্ষম জনসম্পদ হারিয়ে যাওয়ায় দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরামের মহাসচিব খাইরুজ্জামান কামাল, নিরাপদ সড়ক চাই’র যুগ্ম-মহাসচিব গণি মিয়া বাবুল, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সমন্বয়ক মহিউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম-বোয়াফ’র সভাপতি কবীর চৌধুরী তন্ময়, কাজী আরেফ ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মাসুদ আহমেদ প্রমুখ।
সমিতির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী সংবাদ সম্মেলনে সড়ক দুর্ঘটনার চিহ্নিত কারণগুলো তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো- ফুটপাত দখল, ওভার টেকিং, ওভার স্পিড ও ওভার লোড, হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, রাস্তা-ঘাটের নির্মাণ ক্রটি, গাড়ির ক্রটি, যাত্রীদের অসতর্কতা, ট্রাফিক আইন না মানা, গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ক্রসিংয়ে জেব্রাক্রসিং না থাকা ও জেব্রাক্রসিং গাড়িচালক কর্তৃক না মানা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার করা, মহাসড়কে স্বল্পগতি ও দ্রুতগতির যান একইসঙ্গে চলাচল, মাদক সেবন করে গাড়ি চালানো এবং মহাসড়ক ক্রসিংয়ে ফিডার রোডের যানবাহন।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সমিতির পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ করা হয় এসময়। সেসব হলো- ট্রাফিক আইন ও মোটরযান আইন সম্পর্কে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এবং মসজিদ, মন্দির, গির্জায় ব্যাপক প্রচার ও প্রসারের ব্যবস্থা করা। টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্র সমূহে সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা। জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ থেকে হাটবাজার অপসারণ করা, ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা। রোড সাইন (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা। জেব্রাক্রসিং অংকন করা। চালকদের প্রফেশনাল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা। তাদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও কর্মবিরতির সুযোগ দেওয়া। বিদ্যমান মোটরযান আইন যুগোপযোগী করা এবং গাড়ীর ফিটনেস দেওয়ার পদ্ধতি ডিজিটাল করা।
সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হারিয়ে যারা ছিন্নমূল ও দারিদ্র্যের কাতারে নেমে যাচ্ছে তাদের ভরণ-পোষণের দায়-দায়িত্ব সরকারকে নেওয়ারও প্রস্তাব করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। এছাড়াও জাতীয় মহাসড়কে স্বল্পগতি ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্থাপিত ট্রমা সেন্টারগুলো দ্রুত চালুর ব্যবস্থা করার প্রস্তাবনা দেওয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৬/আপডেট ১৭০৯ ঘণ্টা
জেপি/এমআইএইচ/এইচএ