ঢাকা: একটার পর একটা যাত্রীভর্তি বাস আসছে। আর সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে।
তিনি প্রিয়ন্তি। রাজধানীর রামপুরার আবুল হোটেলের সামনে কর্মস্থলমুখী বাস ধরার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে। এগিয়ে বাসে উঠতে না পারার প্রসঙ্গ তুলতেই ব্যঙ্গ করে বললেন, ‘বাসে উঠতে গেলে হেলপার বলে- আফা মহিলা সিট নাই, উঠা যাইবো না। ’
কেবল প্রিয়ন্তি নন, রাজধানীর সড়কের স্টপেজে স্টপেজে ‘আফা মহিলা সিট নাই’ শুনে দীর্ঘসময় এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় হাজারো নারী যাত্রীকে। যাতে নষ্ট হয় দেশের অর্থনীতির অন্যতম যোগানদাতা নারীর লাখো কর্মঘণ্টা।
কোটি মানুষের ঢাকায় প্রয়োজনের তুলনায় গণপরিবহন বরাবরই অপ্রতুল। কর্মদিবসে এই অপ্রতুলতা আরও বেশি স্পষ্ট হয়ে পড়ে। আর যখন যানজটের সৃষ্টি হয়, তখন এই অবস্থা ভোগান্তির চরম পর্যায়ে পৌঁছে।
ভোগান্তি পোহাতে হয় নারী-পুরুষ উভয় যাত্রীকেই। বাসগুলোকে কেবল তখন ‘মানুষ ঝোলা’র বাহন মনে হয়। ‘ঝুলে থাকা’র এই প্রতিযোগিতায় নারীরা আরও ছিটকে পড়েন এক শ্রেণির চালক-হেলপার ও যাত্রীদের অসহযোগিতার কারণে।
এ প্রসঙ্গে পল্টন মোড় থেকে কর্মস্থলগামী একাধিক কর্মজীবী নারী ও শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, বাসের চালক গাড়ি চালানো সময় যাত্রী ওঠানোর দিকেই নজর দেন বেশি। যাত্রীরা বাসে উঠতে গেলে ব্রেক না করে চালকই বলে ওঠেন ‘মহিলা উঠাইস না, প্যাসেঞ্জার ঝামেলা করবে। ’
আর একজন নারী যাত্রী উঠলে তার জায়গায় যে দু’জন বা তার বেশি পুরুষ যাত্রী জায়গা নিতে পারেন, সেই ‘চরম ব্যবসায়িক’ চিন্তাও থাকে হেলপার-চালকদের।
এই কথাই বলছিলেন রামপুরা রোডে যাতায়াতকারী চাকরিজীবী সীমা রানী, ‘একজন নারীর পরিবর্তে তিন জন পুরুষ যাত্রী বাসের ভেতর দাঁড়াতে পারে, এমন যুক্তিতে বাসের হেলপার-কন্টাক্টররা নারীকে ওঠায় না।
প্রিয়ন্তি-সীমা রানীসহ রাজধানীর নারী যাত্রীদের ক্ষোভ, এসব বিষয়ে কর্তা ব্যক্তিদের দেখার সময় নেই। দেশের উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করার কথা থাকলেও সেসব কেবল বুলিই থাকছে। অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করার কোনো পদক্ষেপ নেই।
তারা দাবি করেন, ‘আফা মহিলা সিট নাই’ কথাটা যেন শুনতে না হয়, সে পদক্ষেপ নিতে হবে কর্তৃপক্ষকে। পাশাপাশি দুর্ঘটনার ফাঁদ হয়ে ওঠা ‘ঝোলাঝুলি’ বন্ধেও পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৬
এফবি/এইচএ