রাজশাহী: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, উত্তরাঞ্চলের মানুষের চাহিদা খুব বেশি নয়। তারা অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকেন।
বুধবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের গ্রিন প্লাজায় আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী এসএমই মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান।
শাহরিয়ার আলম বলেন, আলাদা কৃষিভিত্তিক শিল্পাঞ্চল ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী পবা উপজেলার খড়খড়ি বাইপাসের পাশে রাজশাহী অঞ্চলে প্রথম একটি শিল্প প্রক্রিয়াজাতকরণ ‘স্পেশাল ইকনোমি জোন’ তৈরির প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। বর্তমানে তার জন্য অর্থ বরাদ্দের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যা কেবল কৃষিভিত্তিক শিল্পই নয়, সার্বিক অর্থে যে কোনো শিল্পের জন্যই সহায়ক হবে। এটি হলে আপনারা এই অঞ্চলের শিল্পকে আরও বড় আকারে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারবেন।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এসএমই হবে মূল চালিকা শক্তি উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমার যতই বড় ইন্ডাস্ট্রিজের কথা বলি না কেনো, দেশের জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের কোনো বিকল্প নেই। তাই প্রধানমন্ত্রী ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ইশতিহারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ওই ইশতিহারে এসএমই শিল্প উদ্যোক্তাদের কথা বলা ছিল। সেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল ‘ক্ষুদ্র এবং মাঝারি উদ্যোক্তা যারা রয়েছেন, প্রান্তিক পর্যায়ে যারা সামান্য পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করেন; তাদের আমরা সহায়তা দেব। ’ এটাকে আরও ব্যাপকভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
‘সেখানে এসএমই শিল্প উদ্যোক্তাদের বৃহত্তর উন্নয়নের জন্য আলাদা অর্থ বরাদ্দ, আলাদা ঋণ, আলাদা সুদ ব্যবস্থা থাকবে। আর যারা ঋণ গ্রহণ করে টাকা ফেরত দিবেন দ্বিতীয় মেয়াদে তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে আর বাড়তি সুবিধা দেওয়া হবে। এজন্য ২০১৫ সালে এসএমই এর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল এক লাখ চার হাজার কোটি টাকা। যা বাংলাদেশের ৪৪ বছরের ইতিহাসে সর্ব বৃহৎ লক্ষ্যমাত্রা। ’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখছে। এখানে কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠলে আপনারা তাই রাজশাহী অঞ্চলে ছোট ছোট শিল্পকে সহযোগিতা করার জন্য ব্যাংক থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রকে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ খুবই আশাবাদী। তবে সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে পরিচালনা করতে হবে। বিশ্বের একেক দেশে একেক রকম শিল্পনীতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই বাংলাদেশের যা আছে, তা নিয়েই উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে হবে।
এসএমই মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজশাহী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ মুনির হোসেন ও রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মনিরুজ্জামান।
পাঁচ দিনব্যাপী মেলায় রাজশাহী অঞ্চলের উদ্যোক্তাদের নিয়ে ৩৫টি স্টল রয়েছে। যেখানে চামড়াজাত পণ্য, পাটজাত পণ্য, হ্যান্ডিক্রাফটস, প্রক্রিয়াজাত কৃষি পণ্য, পোশাক ডিজাইন ও ফ্যাশনওয়্যারসহ অন্যান্য সেক্টরের স্বদেশী পণ্য শোভা পাচ্ছে।
প্রথম দিনেই মেলায় উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। উদ্বোধনের পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিজেই মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন।
এদিকে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে এসএমই ফাউন্ডেশনের আয়োজনে মেলা উপলক্ষে বুধবার সকালে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি সাহেব বাজারসহ বিভিন্ন প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে নগর ভবনের গ্রিন প্লাজায় গিয়ে শেষ হয়।
আগামী ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত মেলা চলবে। দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। প্রবেশ মূল্য ছাড়াই সবাই মেলার স্টল পরিদর্শন এবং প্রতিদিন সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানে মেলার জুরি বোর্ড কর্তৃক মূল্যায়নের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে থেকে শ্রেষ্ঠ স্টলসমূহকে পুরস্কৃত করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৬
এসএস/এমজেএফ