ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘ডাক্তার তো হতে পারলো না, লাশ হয়ে গেলো’

আবাদুজ্জামান শিমুল ও শেখ জাহাঙ্গীর আলম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৬
‘ডাক্তার তো হতে পারলো না, লাশ হয়ে গেলো’ সাবিহা আক্তার সোনালী

ঢাকা: ‘যা হারিয়েছি তা কোনো কিছুতেই পূরণ হবে না। আমি দরিদ্র, স্বল্প আয়ে দুই সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবো বলে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি’।

 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিহত ছাত্রী সাবিহা আক্তার সোনালীর (১৪) বাবা জাকির হোসেন এভাবেই আক্ষেপ করে বলছিলেন।

রাজধানীর মৎস্য ভবনের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় অকালেই প্রান হারালো মেধাবী ছাত্রী সোনালী।

নিহতের বাবা জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মেয়ে আমার শিল্পী। বিভিন্ন ছোট অনুষ্ঠানে গানও করতো। মেয়ের ইচ্ছা ছিলো, বড় ডাক্তার হবে। আমার মেয়ে বলতো, বাবা আমি অনেক লেখাপড়া করবো। ডাক্তার হয়ে গরিব মানুষদের চিকিৎসা দেবো।

‘ডাক্তার তো আর হতে পারলো না, লাশ হয়ে গেলো। এটা যে কি কষ্ট তা আমি বোঝাতে পারবো না’।

‘জেএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস পেয়েছে সোনালী। আমার আয় কম, তাই আমার মেয়ে আমাকে বলতো, ‘বাবা আমি সরকারি স্কুলে ভর্তি হবো, সেখানে বেতন কম। তোমার ওপর চাপ পড়বে না’।

‘মা’গো তোমার মৃত্যুতে বুকে যে কষ্টের চাপ পড়েছে তা কখনই কাটবে না’ –বললেন সোনালীর বাবা।

‘ওই সরকারি স্কুলে ভর্তি হতেই যাচ্ছিলো। আজ আমার মেয়ে তেজঁগাও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য বাসা থেকে সকালে বের হয়। কিন্তু রাস্তায় ঘাতক বাস আমার মেয়ের প্রাণ কেড়ে নিলো’।

জাকির হোসেন বলেন, ‘গণপূর্ত ভবনের কোয়ার্টারে একটি মেসে আমরা ভাড়া থাকি। ঘটনার সময় আমি গোসল করছিলাম। এক লোক দৌঁড়ে এসে বলে, আপনার মেয়ে অ্যাকসিডেন্ট করেছে। দ্রুত ছুটে গিয়ে দেখতে পাই, মেয়ে আমার রক্তাক্ত অবস্থায় লাশ হয়ে পড়ে আছে রাস্তায়। এটা যে কতো বেদনাদায়ক, কতো কষ্টের, যে সন্তান হারিয়েছে অকালে সেই বাবাই একমাত্র বুঝতে পারবে’।

বেগম রহিমা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (সেগুনবাগিচা) থেকে সোনালী জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় গোল্ডেন এ-প্লাস পেয়েছে।

নিহত ছাত্রী সোনালীর বাবা জাকির হোসেন বিভিন্ন জায়গায় রংয়ের কাজ করে সংসার চালান। মা শারমিন আক্তার কুলসুম বনশ্রী প্রভাতী বাস সার্ভিস অফিসে পিয়নের কাজ করেন। ভাই সাজ্জাদ হোসেন সৈকত নরসিংদীর পলিটেকনিক্যাল কলেজে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশোনা করেন।

নিহত সোনালীর সহপাঠী ফারজানা আক্তার কবিতা বাংলানিউজকে জানায়, বেগম রহিমা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সোনালী সব সময় প্রথম স্থানেই ছিলো। ও খুব ভালো ছাত্রী ছিলো। ভালো গানও গাইতো, বিভিন্ন সময় কবিতা লিখতো। আমরা সবাই সোনালীকে খুব পছন্দ করতাম।  

ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ মৃতা ছাত্রী সোনালীর ময়না তদন্ত সস্পন্ন করেন। তিনি বাংলানিউজকে জানান, ওই ছাত্রীর মাথাও ‍ওপর দিয়ে গাড়ির চাকা যাওয়ার কারণে মাথা থেঁতলে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।    

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বাংলানিউজকে জানান, বার কাউন্সিল সংলগ্ন রাস্তা পারাপারের সময় প্রেসক্লাব থেকে শাহবাগগামী ৮ নম্বর একটি যাত্রীবাহী বাস ওই স্কুলছাত্রীকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

বাসটি আটক করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।   

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পথচারীরা দুই পাশের রাস্তাই অবরোধ করে রেখেছিলেন বলেও জানান তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৬
এজেডএস/এসজেএ/এএসআর

** রাজধানীতে বাসচাপায় স্কুল ছাত্রী নিহত, ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ
** রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নবম শ্রেণির ছাত্রী নিহত

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।