ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নিঝুম দ্বীপ থেকে আসাদ জামান

‘শ্রম কিনাঙ্ক কঠিন যাদের নির্দয় মুঠি তলে’

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৬
‘শ্রম কিনাঙ্ক কঠিন যাদের নির্দয় মুঠি তলে’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নিঝুম দ্বীপ (হাতিয়া) থেকে: নামের বাজার থেকে নিঝুম দ্বীপ সমুদ্র সৈকতে নামার পথে সিসিএপি (ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাডাপটেশন প্রজেক্ট) লেখা লাল রংয়ের অ্যাপ্রন পরা ৩০ জন নারী শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেলো। মনে পড়লো মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত কবিতার দু’টি লাইন- ‘‘শ্রম কিনাঙ্ক কঠিন যাদের নির্দয় মুঠি তলে/ ত্রস্তা ধরণী নজরানা দেয় ডালি ভরে ফুল-ফলে’’।


 
উপকূলের মানুষগুলো স্বভাবত সংগ্রামী, পরিশ্রমী ও সাহসী হয়-বিষয়টি আগে থেকেই জানা ছিল। কিন্তু মা-মাসিদের বয়সী এসব নারী শ্রমিকের মাথায় ৩০/৫০ কেজি ওজনের মাটির ঝাঁকা বহন করতে দেখে থমকে দাঁড়ালাম। জানার চেষ্টা করলাম বিষয়টি সম্পর্কে।
 
একাডেমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত এসব নারী শ্রমিক বিষয়টি গুছিয়ে বলতে না পারলেও তাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনায় যেটা বোঝা গেল, তা হলো- ড্যানিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (ডানিডা) তাদের সিসিএপি’র আওতায় উপকূলীয় এলাকায় রাস্তাঘাট ও বেড়িবাঁধ নির্মাণ করছে।
 
তারই অংশ হিসেবে নিঝুম দ্বীপ নামে বাজার থেকে সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার মূল রাস্তাটির কাজ করছে ডানিডা।
 
প্রায় ৪শ’ ৩০ মিটার দীর্ঘ এ রাস্তাটি নির্মাণে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এই অর্থের পুরোটাই ওই ৩০ জন নারী শ্রমিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দুই ধাপে জমা হবে। এখানে কোনো মধ্যস্বত্ত্বভোগী নেই। কাজ শেষ করতে হবে কাজ শুরুর তিন মাসের মধ্যে।
 
কাজ যত দ্রুত শেষ করতে পারবে, দিন প্রতি পারিশ্রমিকও তত বেশি করে পড়বে। বিষয়টি মাথায় রেখেই নিজের সক্ষমতার অধিক বোঝা মাথায় তুলে নিচ্ছেন নানা বয়সী এসব নারী শ্রমিক।
 
মাটি কাটা ও বহনের কাজে ব্যস্ত থাকা এই নারী শ্রমিক ইউনিটের সভাপতি পরাণী বেগম ও সেক্রেটারি জুলিয়া বেগম কথা বলেন বাংলানিউজের সঙ্গে।
 
তারা দু’জন জানান, ৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকার এ প্রকল্প শেষে ৩০ জন নারী শ্রমিকের প্রত্যেকেই ১৩ হাজার টাকা করে পাবে। কাজটি যদি ২৬ দিনে শেষ করতে পারে প্রতি দিন ৫০০ টাকা করে পড়বে। আর ৫২ দিনে শেষ করলে প্রতি দিন ২শ’ ৫০ টাকা করে পড়বে।
 
এ কারণে সবাই তাদের কাজের প্রতি সিরিয়াস। কোনো ফাঁকিঝুকি দিচ্ছে না কেউ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সবাই কাজে হাজির হয়। প্রতিদিন সবার হাজিরা খাতা মেইনটেইন করা হয়।
 
সভাপতি-সেক্রেটারি সাধারণ সদস্যদের থেকে বেশি বেতন পায় কি না?- জানতে চাইলে পরাণী বেগম বলেন, ওই সিস্টেম নাই। এখানে সবার বেতনই সমান। তবে কেউ যদি কোনো কারণে অনুপস্থিত থাকে, তার বেতন থেকে সেদিনের টাকা কেটে নেওয়া হয়।
 
ডানিডার এ ধরনের প্রকল্পে নারী শ্রমিকদের কেন সম্পৃক্ত করা হয়েছে, জানতে চাইলে সিসিএপি’র সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার আবু মো. রায়হান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ড্যানিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (ডানিডা) কয়েকটি মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে। এর মধ্যে অন্যতম হল, জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার উপকূলীয় মানুষগুলোকে প্রটেকশন দেওয়া এবং অনগ্রসর নারী সমাজ বা পিছিয়ে পড়া নারীদের স্বাবলম্বী করা।
 
সেই চিন্তা থেকেই সিসিএপি প্রকল্পে ডানিডা নারী শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পৃক্ত করে। তা ছাড়া নারী শ্রমিকরা পুরুষ শ্রমিকদের চেয়ে কাজের প্রতি বেশি সিরিয়াস-বলেন আবু মো. রায়হান চৌধুরী।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৬
এজেড/জেডএম

** ‘মগু অ্যাটা হটু তোলেন’
** ঘাসিয়ার চরে মানুষের বসত
** ‘জান‍ালার কাছে ডেকে গেছে এক পাখির মতন সকাল’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।