ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৩০ হাজার টাকায় সন্তান বিক্রি, অতঃপর চুরির নাটক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৬
৩০ হাজার টাকায় সন্তান বিক্রি, অতঃপর চুরির নাটক ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ফেনী: অর্থের লোভ গ্রাস করছে পৃথিবীকে। কেড়ে নিচ্ছে মানবতা, ভালোবাসা, মমত্ববোধ।

তাই বলে মাতৃত্ববোধও? কিছু কিছু ক্ষেত্রে টাকার লোভ মাতৃত্ববোধকেও হার মানায় বৈকি!

এমনই ঘটনা ঘটেছে ফেনী জেলায়। মাত্র ৩০ হাজার টাকার লোভে নিজের বুকের সন্তানকে বিক্রি করে দিয়ে বাচ্চা চুরির নাটক সাজিয়েছেন মুরছেনা বেগম
নামে এক নারী। তিনি ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার মোহাম্মদ সেলিম নামে এক ব্যক্তির কাছে আট মাসের ছেলে মেহেদী হাসানকে বিক্রি করে দেন।
মুরছেনা একই উপজেলার পাঠান নগর ইউনিয়নের মধ্যম শিলুয়া গ্রামের হোটেল ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিনের স্ত্রী।

মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১২টার দিকে ছাগলনাইয়া ও ফেনী মডেল থানা পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় ছাগলনাইয়ার নাছিরা দিঘী এলাকার সেলিম নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। এর আগে সোমবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে শিশুটি চুরি হয় বলে অভিযোগ করেন মুরছেনা। এসময় তার চিৎকার শুনে পুলিশ এসে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে একেক সময় একেক রকম তথ্য দেওয়ায় পুলিশের সন্দেহ হয়। এর ওপর ভিত্তি করে মুরছেনার মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে বাচ্চা চুরির আসল রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ।

প্রকৃত ঘটনা হলো, বাচ্চাটি চুরি হয়নি, মা মুরছেনা বেগমই ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে বাচ্চাটিকে সেলিমের কাছে বিক্রি করে চুরির নাটক সাজান। মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) রাতে ছাগলনাইয়ার নাসিরা দিঘী এলাকা থেকে সেলিমকে আটক করে তার কাছ থেকে বাচ্চাটি উদ্ধার করে পুলিশ।

আটক সেলিমের বাড়ি ছাগলনাইয়া উপজেলার শান্তির হাট এলাকায়। তিনি ছাগলনাইয়া পৌর শহরের নুর আহম্মদ ফিলিং স্টেশনে কাজ করেন।

পুলিশ জানায়, সেলিম জানিয়েছেন তার চার মেয়ে, তাই ছেলে না থাকায় তিনি কোনো শিশুপুত্রকে দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ঘটনাক্রমে জসিম নামে এক হোটেল কর্মচারী ‍ও তার স্ত্রী মুরছেনা বেগমের সঙ্গে সেলিমের পরিচয় হয়। সেলিমের ছেলে না থাকার আক্ষেপের কথা শুনে মুরছেনা নিজ সন্তানকে দত্তক হিসেবে সেলিমকে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

সেলিম আরো জানিয়েছেন, মুরছেনার আরো এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সংসারে তার অভাব-অনটনও রয়েছে। মুরছেনা মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ছাগলনাইয়া হাসপাতাল থেকে সেলিমের কোলে শিশু মেহেদীকে তুলে নেন। এ সময় মুরছেনা তাকে অনুরোধ করেন, মেহেদীকে দত্তকের বিষয়টি যেন তার স্বামীকে  যেন না জানানো হয়, তিনি স্বামীকে জানাবেন হাসপাতাল থেকে ছেলে চুরি হয়ে গেছে।

তবে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মা মুরছেনা বেগম অন্যান্য  ঘটনা স্বীকার করলেও ছেলেকে বিক্রি করেননি বলে দাবি করেছেন।

ফেনী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) শাহীনুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, সেলিম বলছে বাচ্চাটি তিনি কিনেছেন। আর শিশুটির মা মুরছেনার দাবি, তিনি বাচ্চা বিক্রি করেননি। তাকে প্রলুব্ধ করে সেলিম বাচ্চাটি নিয়ে গিয়েছিলেন।

ওসি আরো জানান, জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তের পর এ বিষয়ে আরো অনেক তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৬/আপডেট: ১৫১৮ ঘণ্টা
এসআই/এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।