নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের আলোচিত পাঁচ খুন মামলার অন্যতম আসামি ভাগ্নে মাহফুজ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে নিয়েছেন। আদালতে ১৬৪ ধারায় নিজের দোষ করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি।
জবানবন্দিতে তিনি একাই একে একে পাঁচজনকে হত্যা করেছেন বলে লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইদুজ্জামান শরীফের আদালতে এ জবানবন্দি দেন মাহফুজ।
মাহফুজ হত্যাকাণ্ডের শিকার পাঁচজনকেই ঘরে থাকা শিলপাটার শিল দিয়ে আঘাত ও শ্বাসরোধ করে নিজেই হত্যা করেন বলেও স্বীকার করেন।
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে জবানবন্দি প্রদানের সত্যতা স্বীকার করেছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির এসআই আবুল খায়ের জানান, আদালতে মাহফুজ নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেছেন। এতে কিভাবে তিনি ৫ জনকে হত্যা করেছেন তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।
দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের ওই বর্ণনা তুলে ধরেন জেলা পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদউদ্দিন।
জবানবন্দির উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, নিহত তাসলিমার স্বামী শফিকুল ইসলাম ও লামিয়ার স্বামী শরীফুল ইসলাম সাধারণত শুক্রবার বাসায় থাকেন। কিন্তু ঘটনার দিন (১৫ জানুয়ারি) এ দু’জন বাসায় ছিলেন না। সেটা নিশ্চিত হয়েই ওইদিন মাগরিবের নামাজের আগে খুব সম্ভবত বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে দরজা খোলা থাকায় বাসায় প্রবেশ করেন মাহফুজ। মাগরিবের নামাজের পর ঘরে ঢুকে লামিয়ার ঘরের খাটের নিচে ফ্যানের পাশে অবস্থান করেন মাহফুজ। কিন্তু ওই ঘরে লামিয়া না ঘুমিয়ে রাতে টিভি দেখে পাশের ঘরে তাসলিমার ঘরে গিয়ে দুই সন্তানের সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়েন।
এসপি জানান, রাতে লামিয়ার ঘরের বিছানায় ঘুমিয়ে পড়েন মোর্শেদুল মোশাররফ। দিনগত রাত আড়াইটার দিকে মোর্শেদুল মোশাররফ বাথরুমে যাওয়ার সময়ে ঘরে শব্দ পেয়ে মাহফুজের উপস্থিতি টের পেয়ে যান। পরে মোর্শেদুল মোশাররফ ঘুমিয়ে পড়লে রাত ৩টা কিংবা সোয়া ৩টার দিকে রান্নাঘর থেকে শিলপাটার শিল (পোতা) এনে মোর্শেদুল মোশাররফকে ঘুমন্ত অবস্থায় মাথায় আঘাত করে হত্যা করেন মাহফুজ।
ফজরের আজানের পরে দ্বিতীয় খুন করা হয় তাসলিমাকে। এর কিছুক্ষণ পর লামিয়া এগিয়ে এলে তার সঙ্গে ধস্তাধস্তি ঘটে মাহফুজের। তখন লামিয়াকে হত্যার চেষ্টা করলে তিনি প্রতিহত করার চেষ্টা করেন।
ওই সময় মাহফুজ একটি কাপড় দিয়ে লামিয়াকে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করেন। এ সময় পাশে থাকা শিলপাটার পাটা (পোতা) হাতে নিয়ে মাহফুজকে আঘাত করতে নিক্ষেপ করেন লামিয়া। কিন্তু সেটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে শিশু সুমাইয়ার শরীরে পড়লে সে মারা যায়।
এসপি জানান, ৪ খুনের পর শান্ত স্কুলে চলে যায়। সকাল সোয়া ৭টার দিকে শান্ত বাসায় প্রবেশ করে। তখন রক্ত দেখে চিৎকার করতে থাকলে শান্তকে প্রথমে দেয়ালে আঘাত ও পরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন মাহফুজ।
হত্যাকাণ্ডের পর টিভির সামনে থাকা তালা চাবি নিয়ে বাইরে থেকে তালা মেরে পালিয়ে যান মাহফুজ। আর চাবিটি ফেলে দেন বাড়ির রিজার্ভ ট্যাংকে। ওই চাবিটি ও শিলপাটা ইতোমধ্যে জব্দ করা হয়েছে। সকাল সোয়া ৭টা কিংবা ৭টা ২০ মিনিটেই পালান মাহফুজ।
গত ১৬ জানুয়ারি রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের ২নং বাবুরাইল খানকা মোড় এলাকার একটি ফ্ল্যাট বাসায় একই পরিবারের পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলেন- গৃহবধূ তাসলিমা (৩৫), তার ছেলে শান্ত (১০) ও মেয়ে সুমাইয়া (৫), ছোট ভাই মোরশেদুল (২২) ও তাসলিমার জা লামিয়া (২৫)।
এ ঘটনায় পরে মাহফুজসহ দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ।
ঘটনার পরদিন সকালে নিহত তাসলিমার স্বামী শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ভাগ্নে মাহফুজ, ঢাকার কলাবাগানের নাজমা ও শাহজাহানের নাম উল্লেখ করে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওইদিন রাতেই মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
অন্যদিকে ১৯ জানুয়ারি গ্রেফতার হন ১২ লাখ টাকা ঋণদাতা ঢাকার কলাবাগান এলাকার নাজমা আক্তার। তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৬
এমআইকে/এএসআর