ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীকে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা নিতে হাইকোর্টের নির্দেশ আগামী ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার বরখাস্তকৃত এসআই মাসুদ সিকদারের বিরুদ্ধে রাব্বীর অভিযোগকেই এজাহার হিসেবে গ্রহণের ওই আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
রাষ্ট্রপক্ষের করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালত বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) এ আদেশ দেন। আগামী ২৫ জানুয়ারি শুনানির জন্য আবেদনটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওইদিন পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত থাকবে।
গত ১৮ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের শুনানি শেষে মামলা নেওয়ার আদেশ দেন বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের বেঞ্চ। মোহাম্মদপুর থানার ওসিকে আদালতের এ আদেশ পালন করতে বলা হয়।
আদালত এসআই মাসুদকে অপরাধী বলে তার বিরুদ্ধে রাব্বীর ১১ জানুয়ারি দেওয়া অভিযোগ এজাহার হিসেবে নেওয়ার নির্দেশ দেন। এছাড়াও গোলাম রাব্বীকে নির্যাতন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং রাব্বীর অভিযোগ এজাহার হিসেবে কেন নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলেন।
পরে এ আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
পরে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, চেম্বার আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, এসআই মাসুদের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ অবস্থায় তার বিরুদ্ধে এফআইআর নেওয়ার আদেশ আইনগতভাবে অচল।
মাহবুব উদ্দিন খোকন আরও বলেন, আদালতে বলেছি, অ্যাটর্নি জেনারেল একজন বিচারপ্রার্থীর বিচার বন্ধ করতে এসেছেন। বিভাগীয় ব্যবস্থা এক জিনিস আর ফৌজদারি অপরাধ আরেক জিনিস। রাষ্ট্রপক্ষের এ আবেদন দেখে আমি আশ্চার্যান্বিত হয়েছি।
এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি নির্যাতনের ঘটনায় তিন কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদনটি করেন ঘটনার দিন রাব্বীকে উদ্ধারকারী তার বন্ধু সাংবাদিক জাহিদ হাসান এবং দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান ও এস এম জুলফিকার আলী জুনু।
রিট আবেদনে গোলাম রাব্বীকে নির্যাতন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, রাব্বীর অভিযোগ এজাহার হিসেবে কেন নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং এসআই মাসুদ সিকদারকে কেন গ্রেফতার করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়।
একইসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা জজের নিচে নয় এমন সমমানের একজন বিচারককে দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে তাও জানতে চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়।
এছাড়াও রাব্বীকে নিরাপত্তা দেওয়া এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিন কোটি টাকা দেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়।
রিটে বিবাদী করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার, তেজগাঁও জোনের উপ-কমিশনার, মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মোহাম্মদপুর থানার এসআই মাসুদ সিকদার ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
গত ০৯ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক গোলাম রাব্বীকে আটক করেন মোহাম্মদপুর থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ শিকদারসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। ইয়াবা ব্যবসায়ী-সেবনকারী বানানোর ভয় দেখিয়ে পাঁচ লাখ টাকা আদায়ের চেষ্টা করেন তারা। এরপর রাত ৩টা পর্যন্ত তাকে নিয়ে মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরে বেড়ান এবং মারধর করেন। এমনকি তাকে বেড়িবাঁধে নিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকিও দেন।
পরদিন সকালে এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন রাব্বী। সেটি এখনও মামলা হিসেবে রুজু করেনি থানা।
ব্যাংক কর্মকর্তা রাব্বীকে এসআই মাসুদের নির্যাতন এবং যাত্রাবাড়ীতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিদর্শককে ওই থানা পুলিশের মারধরের ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত ডিআইজি ব্যারিস্টার হারুন অর-রশিদকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে পুলিশ সদর দফতর।
গোলাম রাব্বীকে নির্যাতনের ঘটনা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এসআই মাসুদকে গত ১৬ জানুয়ারি সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এর আগে ১১ জানুয়ারি সকালে তাকে মোহাম্মদপুর থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৬
ইএস/এএসআর