ঢাকা: কাগজ-কলমের ব্যবহার শেষ, তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে গেছে বিদ্যালয় পরিদর্শন কার্যক্রম। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে পরিদর্শনের ছক পূরণ করে কেন্দ্রীয় সার্ভারে আপলোডের পর এক ক্লিকেই চলে আসছে বিদ্যালয়ের সব তথ্য।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ই-ইন্সপেকশনের ফলে পরিদর্শন কার্যক্রম সহজ হচ্ছে। পাশাপাশি শিক্ষকদের উপস্থিতির সঙ্গে পড়ালেখার মানসহ অন্যান্য সূচকে ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
একটি পাইলট প্রকল্পের আওতায় তিন জেলায় পাঁচ উপজেলায় বিদ্যালয় পরিদর্শনে ই-ইন্সপেকশন কার্যক্রম মূল্যায়নে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর আরও দাবি করছে, এতে অর্থ ও সময়ের অপচয় রোধ এবং সমস্যার সমাধানে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ ‘স্ট্রেংথনদেন স্কুল মনিটরিং সিস্টেম’ বা ‘স্কুল পরিদর্শন জোরদার’ প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে গাজীপুরের কাপাসিয়া ও কালিয়াকৈর, মানিকগঞ্জের ঘিওর ও সাটুরিয়া এবং মেহেরপুর সদর উপজেলায় ই-ইন্সপেকশন পরিচালনা করছে।
পাঁচ উপজেলার ৪৫৫টি স্কুলে এ কার্যক্রম পরিচালতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অধিদফতরের পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের গবেষণা কর্মকর্তা ও প্রকল্প সংক্রান্ত কমিটির সদস্য সচিব আব্দুল মান্নান।
সনাতন পদ্ধতিতে ‘প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন প্রতিবেদন’ এর চার পৃষ্ঠার ফরমে ১৮টি ঘরে স্কুলের অবকাঠামো, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সার্বিক চিত্র, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, আনুসঙ্গিক চিত্র মিলে শতাধিক তথ্য হাতে লেখা হয়। এরপর প্রয়োজনে তা বিভিন্ন দফতরে পাঠাতে হয়।
অধিদফতরের গবেষণা কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, ইন্সট্রাকটর ও সহকারী ইন্সট্রাকটররা বিদ্যালয় পরিদর্শনের তথ্য সংগ্রহ করেন।
গবেষণা কর্মকর্তা বলেন, এখন এসব উপজেলায় কাগজের ফরম নাই। স্কুল পরিদর্শন করে সেখানেই ট্যাবের নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে তথ্য ইনপুট দেওয়া হয়। আর তা জমা হয় কেন্দ্রীয় সার্ভারে। পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ক্লিক করেই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও প্রতিবেদন-ফলাফল দেখতে পান।
সনাতন পদ্ধতিতে পরিদর্শন প্রতিবেদন পরবর্তী দফতরে পাঠানো আয়াসসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ ছিল বলে মূল্যায়ন করেছে প্রকল্পের কমিটি। মাস শেষে পরিদর্শন প্রতিবেদন পাওয়ার পর মূল্যায়ন করে মান যাচাই ও ফিডব্যাক দেওয়া অনেক সময় অসম্ভব হয়ে পড়ে। আর নতুন পদ্ধতিতে সহজে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন তাৎক্ষণিক পরবর্তী দফতরে পাঠানো ও ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
সনাতন পদ্ধতিতে তাৎক্ষণিক বাস্তব অবস্থা জানার সুযোগ কম। এখন সকল পর্যায়ে তাৎক্ষণিক বাস্তব অবস্থা জানার সুযোগ অবারিত।
জিপিএস প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়ার সুযোগ থাকায় পরিদর্শকের লোকেশন জানার সুযোগ রয়েছে বলেও জানান কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন স্কুলগুলোতে শিক্ষকদের ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, ক্লিক করলেই পুরো মাসের রিপোর্ট কম্পিউটারের পর্দায় চলে আসছে। এতে উপস্থিতি ও সময়ানুবর্তিতা বেড়েছে।
এ প্রকল্পের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে তারা মনে করছেন, প্রত্যন্ত এলাকার সব স্কুলে সার্ভারের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না বলে অনেক সময় তথ্য ইনপুট দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে আগামীতে তা আর থাকবে না।
ই-ইন্সপেকশনের ফলাফল সম্পর্কে অধিদফতরের উপ-পরিচলক কাওসার ছাবিনা বাংলানিউজকে বলেন, ফলাফল ভালো, সঙ্গে সঙ্গে রিপোর্ট দেখতি পাচ্ছি। শিক্ষকদের উপস্থিতি বাড়ছে। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে যেকোনো সময় যেকোনো বিদ্যালয়ের পরিদর্শনের চিত্র দেখে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক পরামর্শ/নির্দেশনা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
সেভ দ্য চিলড্রেনের সহায়তায় গ্রামীণফোন এ কার্যক্রমে ট্যাব এবং সিমকার্ড দিয়ে সহায়তা করছে।
তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার স্টাফ দিয়ে স্কুল পরিদর্শন সম্ভবপর হয়ে ওঠে না বলে জানিয়ে সেভ দ্য চিলড্রেনের সিনিয়র ম্যানেজার (আইসিটি অ্যান্ড এডুকেশন) রোকসানা হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এ প্রকল্পে সময় ও ব্যয় দু’টোই কম লাগছে। সরকারি সব স্কুলে সরকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে আরও ভালো হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, এক বছরব্যাপী পাইলট প্রকল্পের আওতায় এ কার্যক্রম আগামী ফেব্রুয়ারিতে শেষ হবে। দ্বিতীয় ধাপে মার্চ থেকে নয় জেলার প্রায় ৬০টি উপজেলায় এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার কথা রয়েছে।
মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, শেরপুর, মেহেরপুর, নাটোর, নীলফামারী, লক্ষ্মীপুর ও মৌলভীবাজার জেলায় প্রকল্প বাস্তিবায়িত হবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা।
অধিদফতরের উপ-পরিচালক কাওসার ছাবিনা বলেন, দ্বিতীয় ধাপের ফলাফল ভালো হলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পিডিপি-৪ এর আওতায় অন্তর্ভুক্তির জন্য উপস্থাপন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৬
এমআইএইচ/এএসআর