ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আগের রায়গুলো বাতিল হবে না

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৬
আগের রায়গুলো বাতিল হবে না প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার

সিলেট: অতীতে চললেও এখন থেকে অবসরে যাওয়ার পর আর কোনো বিচারপতিকে রায় লিখতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা। সংবিধানের সংশোধনী প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘যেটা ডিক্লেয়ার হয়ে গেছে, সেটা কোর্টের ডিসিশন।

এগুলো বাতিল হবে না। ’

গত বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) রাতে মৌলভীবাজার পৌর জনমিলন কেন্দ্রে জেলা আইনজীবী সমিতির বার্ষিক নৈশভোজ সভা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।

অন্যদিকে শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) সকালে নিজের বিদ্যাপীঠ সিলেটের মদন মোহন কলেজের হীরক জয়ন্তী উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘পৃথিবীর সেরা ১০ জন সরকারপ্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধানের একজন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মডার্ন সিঙ্গাপুরের জনক লি কুইন, মডার্ন মালয়েশিয়ার জনক ড. মাহাথির মোহাম্মদ- এই নেতাদের একই তুলনায় আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে তুলনা করা হচ্ছে। ’

মৌলভীবাজারের অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘একজন বিচারক সাংবিধানিকভাবে আইন সংরক্ষণের জন্য শপথ নেন। বিচারক যখন অবসরে যান, তখন তার আইন রক্ষা করার সাংবিধানিক ক্ষমতা নেই। প্রধান বিচারপতি তো অনেক ওপরে। কারণ তিনি আইন ও সংবিধান রক্ষা করার জন্য শপথ নিয়ে এই পদে ঢোকেন। অতীতে কিছু বিচারক কাজে ভুল করেছেন। তারা জানতেন না বা জেনেও প্রধান বিচারপতি যেটা চাপিয়ে দিয়েছেন, সেটা করেছেন। প্রধান বিচারপতি নিজেও সেটা করেছেন। আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে সাবেক প্রধান বিচারপতি ও বিচারপতিদের কাছে আবেদন করব, আপনারা যদি আইন ভঙ্গ করেন তাহলে সাধারণ মানুষ কী করবে? আইন ভঙ্গ করবেন না। ’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘অবসরে যাওয়ার পর বিচারপতিদের আর কোনো রায় লিখতে দেওয়া হবে না। আমরা আজব দেশে বাস করি। বিশ্বের অন্যান্য দেশে বিচারকরা অবসরে যাওয়ার পর আর কোনো মামলার রায় লিখতে পারেন না। আমাদের দেশে অতীতে এ রকম রায় দিলেও এখন থেকে আর এ সুযোগ দেওয়া যাবে না। আইন ও সংবিধান রক্ষায় আমাদের সংশোধিত হতে হবে। দেশে এখন গণতন্ত্র আসছে, সংবিধান আছে। এখন আমরা আইনে চলব। সেই সামরিক আইনে চলব না। আইনকে সুসম্মত রেখে চলব। আইন ও সংবিধান পরিপন্থী কোনো কাজ হতে দেওয়া হবে না। ’

প্রধান বিচারপতি আইনজীবীদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা হলেন সমাজের বিবেকবান মানুষ, আইন পেশাকে রাজনীতিতে ব্যবহার করবেন না। বর্তমানে আমরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় দেখতে পাই বারের নির্বাচনেকে সভাপতি ও কে সেক্রেটারি হবেন, এটা রাজনীতিবিদরা নির্ধারণ করে দেন। এসব বিষয় আমাকে খুব বেশি পীড়া দেয়। ’

তিনি সারা দেশের আইনজীবীদের প্রতি আকুল আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘বিচারকদের সঙ্গে আপনাদের মনোমালিন্য হলে কোর্ট বয়কট করবেন না। প্রয়োজনে বিষয়টি প্রধান বিচারপতি হিসেবে আমাকে জানাবেন। আমি সমাধান করতে ব্যর্থ হলে আপনারা কোর্ট-পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। ’

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আইনজীবী আব্দুল মোছাব্বিরের সভাপতিত্বে এবং আইনজীবী আনোয়ারুল ইসলাম জাবেদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক শফিকুল ইসলাম, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের জেলা জজ মোতাহের আলী, জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল, অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান মুজিব, অ্যাডভোকেট শান্তি পদ ঘোষ, অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান প্রমুখ।

সিলেটের অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ সাফল্যকে সুদৃঢ়করণে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। ’ তিনি বলেন, ‘১৬ কোটি মানুষকে উন্নয়নের স্বাদ দিতে হলে তাদের ভেতর আদর্শগত, স্বার্থগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্রোধ এবং বিভেদকে সংকুচিত করা প্রয়োজন। সবাই যদি পরস্পরের প্রতি ঘৃণা, প্রতিহিংসা ও প্রতিপক্ষ নিশ্চিহ্ন করার মতো স্বার্থকেন্দ্রিক কাজে লিপ্ত থাকে তাহলে এই বিভেদের সুযোগ নেবে দেশি ও বিদেশি স্বার্থান্বেষীরা। ’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও মদনমোহন কলেজের শিক্ষার্থী মো. শাহাব উদ্দিন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার আমিনুল ইসলাম, সিলেট জেলা ও দায়রা জজ মনির আহমদ পাটোয়ারী, সিলেট জেলা বারের সাবেক সভাপতি এমাদউল্লাহ শহীদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে কলেজের পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতিকে বিশেষ সম্মাননা জানানো হয়।

নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমার জীবনে আজ একটা স্মরণীয় দিন। স্মরণীয় দিন এ কারণেই নয় যে আমাকে এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এই কলেজ আমাকে যে শিক্ষা দিয়েছে সেই শিক্ষা না পেলে আমি প্রধান বিচারপতি হতে পারতাম না, সেই কারণেও নয়। আমার জীবনে স্মরণীয় এই কারণে-আপনারা হয়তো জানেন, আমি যে কলেজে লেখাপড়া করেছি সেই কলেজে প্লাটিনাম জুবিলি উপলক্ষে এসেছিলেন পৃথিবীর সেরা ১০ জন সরকারপ্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধানের একজন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী। ’

এস কে সিনহা বলেন, ‘আপনারা জানেন কি না জানি না, পৃথিবীর ১০ জন রাষ্ট্রনেতার মধ্যে তার (শেখ হাসিনা) নাম চলে আসছে। মডার্ন সিঙ্গাপুরের জনক লি কুইন, মডার্ন মালয়েশিয়ার জনক ড. মাহাথির মোহাম্মদ-এই নেতাদের একই তুলনায় তাকে তুলনা করা হচ্ছে। উনি আমার এই কলেজে পদার্পণ করেছেন সেই কারণে। ’ সম্মাননা গ্রহণ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা যে উদারতা প্রদর্শন করেছেন সে জন্য আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। ’

কলেজের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধান অতিথি বলেন, আত্মস্বার্থে নিমগ্ন মানুষ যথার্থ মানুষ নয়। পরের কল্যাণে অর্পিত জীবন-এ কথা বিবেচনায় রেখে ছাত্রজীবনে দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোলার দায়িত্ব পালন করতে পারলে ব্যক্তি ও জাতি উভয়েরই কল্যাণ। তাই শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয় বরং বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়ন ও অসাম্প্রদায়িক জীবনবোধ ও গভীর দেশপ্রেম জাগ্রত করার একমাত্র উপায় হচ্ছে মানসম্মত শিক্ষা। বিশ্বজনীন মনুষ্যত্ববোধসম্পন্ন জাতি গঠনে বিদ্যালয়গুলোকে ভূমিকা রাখতে হবে। শিক্ষার সঙ্গে আনন্দের সংযোগ ঘটাতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৬
জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।