রাজশাহী: রাজশাহীতে মাঘের প্রথমভাগেই শুরু হয়েছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তাই আগের তুলনায় শীতের তীব্রতা দ্বিগুন বেড়েছে।
প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে বেশ দুর্বিষহ দিন পার করছেন অনেকেই।
বেশ কয়েক দিন থেকেই রাত ও দিনের তাপমাত্রা ওঠা-নামা করছে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) থেকে হঠাৎ করে দিনের তাপমাত্রা কমে আসতে শুরু করে।
ওই দিন রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরদিন শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আর শনিবার (২৩ জানুয়ারি) তা নেমে এসেছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
‘এসবই হচ্ছে রাজশাহীর চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে গত ২০ ডিসেম্বর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস,’ বলছিলেন রাজশাহী আবহাওয়া পর্যাবেক্ষণাগারের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রাজিব খান।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এর মধ্যে রাজশাহী অঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়ে গেছে। যা কদিন চলতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে রাজিব খান জানান, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে। এটি মাঝারি শৈত্যপ্রবাহেও রূপ নিতে পারে। ফলে তাপমাত্রা আরও কমবে। এছাড়া সন্ধ্যা ও ভোরে ঘন কুয়াশাও পরতে পারে।
এদিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হওয়ায় দিনের বেলায়ও তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। সন্ধ্যা হতে না হতেই ঘন কুয়াশায় ছেয়ে যাচ্ছে আকাশ। সকাল থেকেই মেঘাচ্ছন্ন অবস্থা বিরাজ করছে আকাশে।
শনিবার দুপুরে সূর্যের দেখা মিললেও তার তেজ ছিল না। ছিন্নমূল মানুষগুলোকে খড়-খুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে।
শীতের দাপট থেকে বাঁচতে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো ভীড় জমাচ্ছেন মহানগরীর পুরাতন কাপড়ের মার্কেটে। কম দামে শীতবস্ত্র নিচ্ছেন নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য। তবে সেখানেও সস্তি নেই। এবার শীতের কাপড়ের দাম অনেক বেশি বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা।
মহানগরীর গণকপাড়া এলাকায় শীতবস্ত্র কিনতে আসা গৃহিণী মমতাজ বেগম বলেন, এখানে আগে বিদেশি কাপড়ের বেল্ট (বিভিন্ন কাপড়ের গাইড) ভাঙার পর অনেক কম দামে ভালে ভালো শীতবস্ত্র পাওয়া যেতো। এখনও পাওয়া যাচ্ছে তবে দাম বেশি। তিনশ' থেকে পাঁচশ' টাকার নীচে ভালো কোনো সুয়েটার বা জ্যাকেট পাওয়া যাচ্ছে না।
তবে মহানগরীর গণকপাড়া কাপড়পট্টির ব্যবসায়ী শাহীন হোসেন বলেন, এবার বাইরে থেকে আসা বেল্টের দামই বেশি। এর উপর বেল্ট ভেঙে বাছাই করার পর ভালো কাপড় বের হচ্ছে কম। এরমধ্যে যেগুলো ভালো মিলছে সেগুলোই দাম ধরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
‘লাভ তো দূরে থাক পুঁজিও থাকছে না’ বলে দাবি করেন এই ব্যবসায়ী।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আরিফুল হক জানান, শনিবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর মধ্যে শীতজনিত কারণে রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে।
‘বিশেষ করে হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে জন্ম নেওয়া নবজাতক শিশুরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। জন্ম নেওয়ার পরপরই তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নবজাতক ওয়ার্ডে শিফট করতে হচ্ছে। ’
তিনি জানান, হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যা বেশি। আক্রান্তদের বেশিরভাগই ডায়ারিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, হৃদরোগ, অ্যাজমাসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন।
এক্ষেত্রে শিশু ও বয়স্কদের স্বাস্থ্য পরিচর্যায় বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৬
এসএস/এমএ