ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নারীর জন্য সংসদের এক-তৃতীয়াংশ আসন চায় মহিলা পরিষদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৬
নারীর জন্য সংসদের এক-তৃতীয়াংশ আসন চায় মহিলা পরিষদ ছবি: পিয়াস- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: জাতীয় সংসদসহ সকল নির্বাচনে এক-তৃতীয়াংশ আসন নারীদের জন্য বরাদ্দ রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। একই সঙ্গে সংরক্ষিত আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে তাতে সরাসরি নির্বাচনের জন্যও বলেছে সংস্থাটি।



শনিবার (২৩ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত ‘বর্তমান জাতীয় পরিস্থিতি ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির বক্তব্য’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটি এ দাবি জানায়।

লিখিত বক্তব্যে সংস্থাটির সভাপতি আয়শা খানম বলেন, নারীর রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যথার্থ প্রতিনিধিত্ব গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অন্যতম শর্ত। কিন্তু জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়নি এবং সরাসরি নির্বাচনেরও বিধান রাখা হয়নি। উপরন্তু সংরক্ষিত আসন বাড়ানো হয়েছে- যা নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ইচিবাচক ভূমিকা রাখতে অপারগ।

তিনি বলেন, শুধু প্রতীকী অর্থে নারীর ক্ষমতায়ন নয়, স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে প্রয়োজন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ। এজন্য দলগুলোর অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা, দলের নীতিনির্ধারণী সকল পর্যায়ে এক-তৃতীয়াংশ নারী নেতৃত্ব, নির্বাচনে এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন প্রদান, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে মনোনয়ন প্রক্রিয়া নারী ক্ষমতায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

সরকার, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন সকলকেই এ বিষয়ে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে।
 
তিনি বলেন, ধারাবাহিক আন্দোলনের ফসল হিসেবে আজকে জাতীয় সংসদে নারীরা অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু নারী সংসদ সদস্যরা এখনও পর্যন্ত মর্যাদা ও অধিকারের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।

আয়শা খানম বলেন, সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিক্স এর তথ্য অনুযায়ী, গৃহে ৮৭ শতাংশ নারী স্বামীর দ্বারা নির্যাতনের শিকার। আর ৮২ শতাংশ নারী স্বামীর দ্বারা মানসিক নির্যাতনের শিকার। এছাড়া ধর্ষণ, নিপীড়নসহ নারীর প্রতি সহিংসতা স্কুল, কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্মস্থল, রাস্তাঘাটসহ সবখানেই জনসম্মুখেই হচ্ছে। তাই নারীর অধিকার বাস্তবায়নে তিনি ১৯ দফা দাবি উত্থাপন করেন।

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-অবিলম্বে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসসে সরাসরি নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া এবং আসন সংখ্যা বাড়িয়ে এক-তৃতীয়াংশে বৃদ্ধি করা। স্থানীয় সরকারের ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ হ্রাস, দল থেকে নির্বাচনে ৩৩ শতাংশ নারীকে মনোনয়ন প্রদান, সকলের নিরাপত্তার জন্য অধিকতর প্রয়োজনী পদক্ষেপ গ্রহণ, সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ।

এছাড়াও প্রশাসনকে দল নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন, অপরাধীকে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেওয়া, ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করা, সিডিও সনদের ধারা ২ এর ১৬-১ (গ) ধারা থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার, জবাবদিহিতামূলক রাজনীতি নিশ্চিতকরণ, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিতকরণ, সহিংস রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় বিচার নিশ্চিতকরণ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জবাবদিহিতা বৃদ্ধির দাবিও রয়েছে।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, প্রশাসনকে অবশ্যই উপরের চাপ থেকে মুক্ত হতে হবে। এটা সেই অনেক আগে থেকে ধারাবাহিকভাবে হয়ে আসছে। কাজেই নারী নির্যাতনকারীকে রাজনৈতিক প্রশ্রয় দেওয়ার এই সংস্কৃতি বন্ধ করা দরকার।

তিনি বলেন, নারীরা আগের চেয়ে সকল ক্ষেত্রে অনেক বেশি প্রতিনিধিত্ব করছে। কিন্তু তারা তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। বরং আরো বেশি ‘ভালনারেবল’ এবং নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। কাজেই তাদের দায়িত্ব তাদেরকেই পালন করার সুযোগ ও পরিবেশ দিতে হবে।
 
এ সময় তিনি ধর্ষণ আইনেরও পরিবর্তন আনার দাবি জানান। মালেকা বানু বলেন, এই আইনটি অনেক পুরনো। যেভাবে ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয় তাও সেকেলে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সংস্থাটির সহ-সভাপতি রেখা চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাখী দাশপুর কায়স্থ, সীমা মোসলেম, আন্দোলন সম্পাদক কাজী সুফিয়া আখতার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৬
ইইউডি/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।