ঢাকা: তর্ক-বিতর্ক ও বাক-বিতণ্ডায় টানা সোয়া ৪ ঘণ্টার বৈঠক শেষে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানালেন নৌযান শ্রমিকরা। মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) সচিবালয়ে নৌ-মন্ত্রণালয়ের অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
এরমধ্যে নৌযান শ্রমিকদের নিয়োগপত্র ও সামাজিক নিরাপত্তায় মালিকপক্ষের ঐক্যমত, কল্যাণ ফান্ড চালুতে ডিজি শিপিং-এর নেতৃত্বে উদ্যোগ নেওয়া, মজুরির বিষয়ে মালিক-শ্রমিক দ্বি-পক্ষীয় আলোচনা ও জাতীয় পে-স্কেলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মজুরির বিষয়ে একটি কমিটি কাজ করবে। এ পর্যায়ে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা হয় বলে জানিয়েছে বৈঠক সূত্র।
সূত্র জানায়, শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে একটি সেফটি কমিটি গঠন করা হবে। নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন মেরিন কোর্টে মামলার লিখিত প্রস্তাব দিলে সে আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়।
পাইপলাইনে জ্বালানি তেলের বিষয়ে ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হবে। শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে ব্যবস্থা এবং সুরমা ও অন্যান্য নৌ-খননে বিআইডব্লিউটিসি ব্যবস্থা নেবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পরে বৈঠকের শেষের দিকে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করতে শ্রমিক নেতাদের আহ্বান জানান মন্ত্রী। কিন্তু ‘প্রত্যাহার’ না করে ‘স্থগিত’ করার সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চান তারা। এ বিষয়ে বেশ কিছুক্ষণ তর্ক-বিতর্ক চলে। নানা আলোচনার পর শেষ পর্যন্ত কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণায় একমত হন শ্রমিক নেতারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের ১৫ এবং বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের ৩৫ দাবি রয়েছে। এর মধ্যে ১০ দফা দাবিতে একমত ছিলেন তারা।
এর আগে বেলা ৩টার দিকে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন নৌমন্ত্রী। এতে উপস্থিত ছিলেন-মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. ছায়েদুল হক এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তবে বিকেলে সাড়ে ৩টার দিকে বেরিয়ে যান বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।
আর শ্রমিকদের পক্ষে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহ আলম ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম, লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ঈসা মিয়া, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাদাত হোসেনসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র বলছে, নৌ-যান মালিকরা জ্বালানি তেলের দাম কমানোর দাবি তুলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাস চান। অন্যথায় ভাড়া বাড়ানোর কথাও জানান তারা। জবাবে প্রতিমন্ত্রী সেভাবে কোনো আশ্বাস না দিয়ে ‘আমি এখন ক্ষুধার্ত, একটু খেতে হবে’ বলে বের হয়ে যান।
বৈঠকের শুরুতে উভয় সংগঠনকে রাখেননি নৌমন্ত্রী। লাইটারেজ ইউনিয়নকে নিয়ে বৈঠক করেন পৌনে ৪টা পর্যন্ত; এরপর বসেন নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে।
এর আগে ১৫দফা দাবিতে ২৭ জানুয়ারি থেকে টানা কর্মবিরতি পালন করছিলেন শ্রমিকরা। এরমধ্যে নিয়োগপত্র/পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক, সামাজিক নিরাপত্তা, সর্বনিম্ন মজুরি ১০ হাজার, আহত হলে চিকিৎসা ব্যয়, দুর্ঘটনায় বা কর্মস্থলে নিহত হলে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ উল্লেখযোগ্য।
আর লাইটারেজ শ্রমিকদের ৩৫ দাবির মধ্যে সার্ভিস বুক ও নিয়োগপত্র, নতুন পে-স্কেলের সঙ্গে মূল মজুরির সামঞ্জস্যতা, ১০০ ভাগ খোরাকি ভাতা, বাড়ি ভাড়া বৈষম্য দূর, প্রথম তিন ক্যাটাগরির জন্য ১৫শ টাকা করে চিকিৎসা ভাতা, ৬০০ টাকা ধোলাই ভাতাসহ সামগ্রী সরবরাহ, দায়িত্ব ভাতা সর্বোচ্চ ২০০০ টাকা অন্যতম।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৬, আপডেট: ১৯৪৮ ঘণ্টা
এসকেএস/এমএ