খুলনা: শীতের তীব্রতায় শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগে। খুলনা শিশু হাসপাতালে এসব রোগে আক্রান্ত শিশু ভর্তির সংখ্যা বেড়ে গেছে।
নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে খুলনা শিশু হাসপাতালে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী আসছে। পর্যাপ্ত বেড সংখ্যা, জনবল সংকট এবং আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে চিকিৎসা সেবা প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
জানা গেছে, খুলনা বিভাগের ১০ জেলা ছাড়াও পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিনিয়ত রোগী আসে খুলনা শিশু হাসপাতালে। সম্প্রতি শীতের কারণে নিউমেনিয়া, ডায়রিয়া ও কাশিসহ ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালেও রোগীর ভিড় বাড়ছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, চলতি জানুয়ারি মাসে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার অসুস্থ শিশুর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৬ হাজারের অধিক শিশুকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে প্রায় এক হাজার শিশু। এছাড়া গেল বছরের শেষ ৩ মাসে ২৮ হাজার শিশুর চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয় এ হাসপাতালে। এর মধ্যে গত ডিসেম্বরে মোট চিকিৎসা দেওয়া হয় ১০ হাজার ৬৬ জন শিশুকে। নভেম্বরে চিকিৎসা দেওয়া হয় ১০ হাজার ৬শ’ ৩৮ জনকে এবং অক্টোবরে চিকিৎসা দেওয়া হয় ১২ হাজার ১শ’ ৪১ জন শিশুকে।
সূত্র মতে, ২৮০ বেডের শিশু হাসপাতালটি বর্তমনে ২৩ জন মেডিকেল অফিসার, ১০ জন কনসালট্যান্ট ও ৬০ জন নার্সসহ মোট ২৭৮ জন জনবল নিয়ে চলছে। তবে হাসপাতালের রোগীর তুলনায় এ সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উদ্যোগে গড়ে ওঠা এ হাসপাতালটি চলে সরকারি-বেসরকারি অনুদানে। তবে পর্যাপ্ত অনুদানের অভাবে এটি চালিয়ে রাখতে খুবই বেগ পেতে হচ্ছে পরিচালনা পর্ষদকে। আর্থিক সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না।
হাসপাতালে শিশু নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা পশ্চিম রূপসার বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, শিশুবান্ধব এ হাসপাতালটিতে কম খরচে চিকিৎসা সেবা পাওয়ায় অভিভাবকদের এক ধরনের আস্থা তৈরি হয়েছে। যে কারণে শিশুদের কিছু হলেই সবাই এখানে আসে। তবে পর্যাপ্ত বেড না থাকায় অনেক সময় রোগীদের নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। তিনি হাসপাতালটির বেড বৃদ্ধির দাবি জানান।
নার্স মালামী বৈদ্য জানান, ঠাণ্ডান্ডার কারণে আক্রান্ত শিশুর অধিকাংশই নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, সর্দি-কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য আসছে। এসব শিশুদের অনেককেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে।
তার মতে, শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার মূলে রয়েছে পিতা-মাতার অবহেলা। কোনো শিশু অসুস্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে চিকিৎসা না করিয়ে অবহেলা করা হচ্ছে। যে কারণে বেশ জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে শিশুদের ক্ষেত্রে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কামরুজ্জামান জানান, আমরা চেষ্টা করছি মানুষের আস্থা বজায় রাখতে। আর এ কারণেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জটিল ও কঠিন রোগ নিয়ে এ হাসপাতালে রোগী আসে। প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নীরিক্ষাসহ প্রায় সব বিভাগের চিকিৎসাই এখানে দেওয়া হয়। তবে আমাদের আরো অবকাঠামো ও জনবলের প্রয়োজন, যা পরিচালনা পর্যদকে জানানো হয়েছে।
পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম জানান, সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সরকারের অনুদানে এটি পরিচালিত হয়। তবে পর্যাপ্ত অর্থের যোগান না থাকায় আমরা অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ হাসপাতাল সম্প্রসারণের কাজ করতে পারছি না। ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন প্রদানেও বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান জানান, আমরা বর্তমান সরকারের কাছে খুলনা শিশু হাসপাতালের গুরুত্ব তুলে ধরে এর উন্নয়নে আর্থিক অনুদান বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি। আশা করা হচ্ছে খুব শিগিরই সরকারি অনুদানে একটি নতুন ভবনের কাজে হাত দিতে পারবো।
১৯৮০ সালে শিশু ফাউন্ডেশনকে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের দেওয়া ৭৩ শতক জমিতে খুলনা শিশু হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। সেই থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনুদানের টাকায় হাসপাতালটি পরিচালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৬
এমআরএম/এএসআর