ঢাকা: কী আছে তার বাঁশিতে? এতো সুর কোথা থেকে আসে? বার বার হৃদয়ে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে সে সুর। ঢেউ তুলছে পরতে পরতে।
মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) রাতে শিল্পকলার সঙ্গীতশালায় লোকসঙ্গীতের গানের তালে তালে বংশীবাদক রফিক যতোবারই বাঁশিতে সুর তুলছেন, ততোবারই যেনো এমনটিই মনে হচ্ছে উপস্থিত সবার।
অনুষ্ঠানটি লোকসঙ্গীতের হওয়ায় সুর তোলার সুযোগ যেনো তার বাঁশিতেই জুড়ে বসেছিলো। যেনো রাখালিয়া বাঁশিও হার মেনেছে তার কাছে। তার বাঁশিতে বিধাতা হয়তো নিজেই সুর তুলে দিয়েছেন। সে কারণেই মুগ্ধ হয়েছেন সবাই।
পাগল করা বাঁশির সুরে পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে ছিলো অন্যরকম আবহ। ছিল দর্শককে ধরে রাখার জাদুও। যখন সুর তুলছেন তখন নিজেই যেনো হারিয়ে যাচ্ছেন।
কতটা ডুবে গেলে তোলা সম্ভব সেই সুর! না শুনলে, না দেখলে তো বিশ্বাসই করা সম্ভব নয়। তবে যারা শুনেছেন, দেখেছেন তারাই কেবল বিশ্বাস করেছেন। কী সুর, কতো দীর্ঘ সেই সুরের লয়, হৃদয় ছুয়ে যায়- না শুনলে অনুভব করা সত্যিই দুরহ।
গানের সঙ্গে সঙ্গে চলছিলো বাঁশির সুর। কিন্তু বাঁশির সুর একটু কম হলেই দর্শকরা চিৎকার করে বলে উঠছেন, সাউন্ড কম কেন? আরও জোরে বাজান বাঁশি।
উতলা দর্শকরাতো বলেই চলেছেন, আহা, আহা, কী দারুণ সুর।
বাঁশির সুর যখন উঠছে তখন পুরো হল জুড়ে পিনপতন নীরবতা। গানের শিল্পীরাও গাইছেন। তাদের গান সবাইকে নিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ফেলে আসা স্মৃতিতে।
মাটি ও মায়ের গান। গানে রয়েছে নিজেকে হারানোর লয়ও। এ গান দেশের, মানুষের হৃদয়ের গান। এ কারণে লোক সঙ্গীতের এ আয়াজনে কেউ বাদ গেলো না- গাইলেন তরুণ- তরুণী, প্রবীণরাও।
মঞ্চে যখন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী দিপংকর রাজবংশী তার গান পরিবেশন করছিলেন, তখন তিনি কিন্তু নিজে গান গাইতে চাইলেন না। মঞ্চে ডাকলেন তার বাবাসহ আরেক লোকসঙ্গীত শিল্পীকে। তারা তো মঞ্চে উঠেই মাতিয়ে দিলেন সবাইকে।
যখন তাদের ডাকা হলো মঞ্চে তখন লোকশিল্পী আকরামুল ইসলাম তো কেঁদেই ফেললেন। চশমার ফাঁক গলে পড়ছে সেই পানি। ঠিক তখনই ভারী হয়ে উঠলো পুরো হলের পরিবেশ।
নিস্তব্ধতা ছোঁয় প্রতিটি প্রাণে। তিনিও বুঝতে পারলেন, পরিবেশটা গুমট হয়ে উঠছে। সঙ্গে সঙ্গে সামলে নিলেন নিজেকে। চোখ মুছলেন রুমালে।
শুরু করলেন, ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’। তার সঙ্গে হারমোনিয়ামে সুর তুলে দিচ্ছিলেন আরেক খ্যাতিমান লোক সংগীত শিল্পী অধ্যাপক ইন্দ্র মোহন রাজবংশী।
আকরামুল ইসলাম এরপর আরও একটি গান গাইলেন। তার সঙ্গে থাকা লোকসঙ্গীতের আরেক প্রবীণ শিল্পী ইন্দ্র মোহন রাজবংশী ধরলেন হারমোনিয়াম।
মঞ্চে বিভিন্ন শিল্পীই আসছেন কিন্তু সবার গানেই দর্শকরা রফিকের বাঁশির লহরী শোনার জন্য অধির আগ্রহে তাকিয়ে ছিলেন প্রতিমুহূর্ত। পুরো অনুষ্ঠানে একাই গানের তালে তালে সুর তুলেছেন রফিক।
বাংলাদেশ লোকসঙ্গীত পরিষদের ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত হয় এ অনুষ্ঠান। সঙ্গীতের আগে আলোচনায় অংশ নেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক ও ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. কাউয়ুম পারভেজ, লোকসঙ্গীত শিল্পী ও গীতিকার হামিদুল ইসলাম এবং লোকসঙ্গীত শিল্পী ও সুরকার আকরামুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ইন্দ্র মোহন রাজবংশী। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সদস্য লুৎফুন্নাহার মনিরা।
বাংলাদেশ সময়: ০১০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৬
এমআইকে/এসএস