ময়মনসিংহ : ২০ ফুট উচ্চতার কাঠের দেয়ালের চারপাশে বিরামহীন ঘুরছে মোটরসাইকেল। আবার চলছে প্রাইভেটকার।
ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদের জেগে উঠা বালুচরের দু’টি মেলায় টিকিট কেটে রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনায় বুঁদ হয়ে দর্শকরা উপভোগ করছেন মৃত্যুকূপে ডেঞ্জার শো। কিন্তু গোলাকার এ মৃত্যুকূপের ভার সামলাতে নগরীর থানার ঘাট এলাকার মেলায় ব্যবহার করা হচ্ছে শক্তিশালী জিআই পাইপ। আবার কাচারিঘাট এলাকার অন্য মেলায় এ মৃত্যুকূপ দাঁড় করাতেই পাইপের বদলে ব্যবহার করা হয়েছে শুধু বাঁশ!
এতে মৃত্যুকূপ ভেঙে যে কোনও মুহুর্তে বড় দুর্ঘটনা’র আশঙ্কা করছেন অনেকেই। জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ওই মৃত্যুকূপের চালকরাও আনাড়ি। তাদের নেই প্রদর্শনীর লাইসেন্সও। ফলে তাদের ‘অনভিজ্ঞ’ হিসেবে চ্যালেঞ্জ করে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন রংপুরের কারবাইক রেসার মো. রাশেদ।
মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) বিকেলে নগরীর থানার ঘাট এলাকার মুক্তিযোদ্ধা বিজয় মেলায় আলাপ হচ্ছিল রাশেদের সঙ্গে। ২০০৩ সাল থেকে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরের ইসলামবাগ এলাকার গোলাম রব্বানীর ছেলে রাশেদ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মৃত্যুকূপ খেলার প্রদর্শনী করে আসছেন।
২০১৫ সালের ঢাকা আন্তজার্তিক বাণিজ্য মেলাতেও একই খেলা প্রদর্শন করে দর্শকদের হৃদয় জয় করেছিলেন তিনি। ময়মনসিংহেই বিভিন্ন মেলায় প্রায় ১০ বছর ধরে লাগাতার পারফর্ম শো করা এ যুবকের অভিজ্ঞতার ঝুলিতেও রয়েছে অনেক সম্মাননা ও পুরস্কার। এ খেলা প্রদর্শনের জন্য তিনি ১৯৯৮ সালে লাইসেন্স পেয়েছেন। লাইসেন্স নং-০২/৯৭-৯৮ (রংপুর)।
রাশেদের মোটরসাইকেল মৃত্যুকূপে গিয়ে দেখা যায়, মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার চালানোর মৃত্যুকূপের দেয়াল ধরে রাখতে ব্যবহার করা হয়েছে ৩৬টি জিআই পাইপ। দক্ষ কারিগর দিয়ে এ মৃত্যুকূপ তৈরিতে তার খরচা হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা। মেলায় ২০ টাকা টিকিটে দর্শকরা উচ্ছ্বাস নিয়ে উপভোগ করছেন জনপ্রিয় এ প্রদর্শনী।
তিনি অভিযোগ করেন, খানিক অদূরে নগরীর কাচারিঘাট এলাকার ময়মনসিংহ শিল্প ও বাণিজ্য মেলার মৃত্যুকূপে কার-বাইক প্রদর্শনী’র ডেঞ্জারম্যানরা অদক্ষ ও আনাড়ি। তাদের মৃত্যুকূপের কাঠের দেয়ালের ভারসাম্য রক্ষায় জিআই পাইপের পরিবর্তে সস্তায় কেনা বাঁশ ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
রাশেদের অভিযোগের সূত্র ধরে ওই মেলার নাঈম আশিয়ান মৃত্যুকূপে দিয়ে দেখা যায়, এখানে জিআই পাইপের বদলে ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশ। টিকিটের দামও ১০ টাকা বেশি। টিকিট কাউন্টার থেকেই এ মৃত্যুকূপ দেখার জন্য মাইকে দফায় দফায় হাঁক দিয়ে যাচ্ছেন কামরুজ্জামান নামে একজন।
সেখানেই পাওয়া যায় মৃত্যুকূপে মোটরসাইকেল নিয়ে পারফর্ম করা সুরুজ্জামানকে। বয়স ২৮। এ কাজে নিজের অভিজ্ঞতা দাবি করেন ৪ বছর। লাইসেন্স বা অন্য কোন কাগজপত্র আছে কীনা জানতে চাইলে বিব্রত হয়ে ডেকে আনেন শফিকুল ইসলাম স্বপন নামে এ মৃত্যুকূপ মালিককে।
৭ বছর ধরে কার-বাইক প্রদর্শনীতে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন দাবি করলেও তার ওই শিষ্যের অভিজ্ঞতার কথা জানালেন সাকুল্যে এক বছর। এ প্রদর্শনীর লাইসেন্সের কথা তুলতেই একটু ঘুরিয়ে বলেন, ‘আমার সব কাগজপত্রই গত বছর গাইবান্ধায় নাশকতায় পুড়ে গেছে। ’
এ বিষয়ে কোন থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন, জানতে চাইলে বলেন, ‘জিডি করে কী হবে?’ এরপর আমতা আমতা করে এ নিয়ে লেখালেখি না করার অনুরোধ করে বলেন, ‘সব জেনেই তো মেলা কর্তৃপক্ষ আমাকে প্রদর্শনীর অনুমতি দিয়েছে। ’ তবে পাইপ ব্যবহার না করায় মৃত্যুকূপ খানিকটা ঝুঁকিপূর্ণ বলে স্বীকার করেন তিনি।
মেলা আয়োজকদের একজন এস.জে.আলম বলেন, ‘এটা মোটেও ঝুঁকিপূর্ণ না। আর স্বপনের সব কাগজপত্রই আছে। ’ কিন্তু স্বপন নিজেই সব স্বীকার করেছেন জানালে উত্তর দেন, ‘তাহলে এখনই শো বন্ধ করে দেয়া হবে। ’
এসব ব্যাপারে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মোস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী বলেন, ‘পেশাগত হিংসার কারণে রাশেদ এ অভিযোগ করে থাকতে পারেন। তবে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১২১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৬
জেডএম/