দিনাজপুর: হিমালয় পাদদেশ ঘেঁষা সর্ব উত্তরের জেলা দিনাজপুরে মাঘের শুরুতেই কনকনে বাতাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হাঁড় কাপানো শীতের প্রকোপ। হঠাৎ করে শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় দিনাজপুরে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ।
শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষেরা কাজ-কর্ম করতে না পারায় পড়েছে বিপাকে। হঠাৎ করে রোগীর চাপ বাড়ায় হাসপাতাল গুলোতে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের। রোগীর সংখ্যা অতিরিক্ত হয়ে সিট না থাকায় মেঝেতে জায়গা মিলেছে অনেক রোগীর।
দিনাজপুরের বিভিন্ন হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড গুলোতে গত এক সপ্তাহে ঠাণ্ডাজনিত রোগে প্রায় তিন শতাধিক শিশু ভর্তি হয়েছে। এছাড়া বর্হিবিভাগ থেকে তিন হাজার শিশু চিকিৎসা নিয়ে গেছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
এই প্রচণ্ড শীতে শ্বাসকষ্টসহ পানি বাহিত বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা পেতে পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে ৫৬ জন, দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালে ৪২ ও দিনাজপুর অরবিন্দ শিশু হাসপাতালে ২৮ শিশু ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোতেও ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে দিনাজপুরে ঠাণ্ডাজনিত রোগে দু’জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
এদের মধ্যে দিনাজপুর জেনারেল হাপাসাতালে সদর উপজেলার গাবুড়া গ্রামের নাজমুল হেসেনের ১৮ মাসের ছেলে আজিম ও ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাসনপুর খাজাপাড়া গ্রামের মোফাজ্জল হোসেনের মেয়ে মুরশিদা খাতুন (১)।
দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্দুল ওয়াহেদ বাংলানিউজকে জানান, হঠাৎ করে আবহাওয়া পরিবর্তনের পার্থক্যটা খুব বেশি হওয়ায় অন্যান্য বয়সের তুলনায় ঠাণ্ডাজনিত রোগে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের শিশু ওয়ার্ডে ২৪ শিশু ঠাণ্ডাজনিত কারণে ভর্তি রয়েছে। এছাড়া ডাইরিয়া ও পৃথকীকরণ বিভাগে ২০জন চিকিৎসাধীন রয়েছে যার মধ্যে ১৮ শিশু রয়েছে। চিকিৎসাধীন রোগীদের সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখা হচ্ছে। ঠাণ্ডাজনিত রোগ থেকে রক্ষা পেতে অভিভাবকদের প্রতিনিয়তই পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, অভিভাবকরা একটু সচেতন হয়ে শিশুদের যত্ন নিলেই ঠাণ্ডাজনিত রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
এদিকে প্রচণ্ডশীতে বাড়ি থেকে বের হতে না চাইলেও পেটের ক্ষুদা মেটানোর জন্য কাজের সন্ধান করতে দেখা যায় শহরের বালুয়াডাঙ্গা হঠাৎপাড়া এলাকার দিন মজুর আব্দুল আউয়ালকে।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, শীত যতই বেশি হোকনা কেন একদিন কাজ না করলে পুরো পরিবার না খেয়ে থাকবে। তবে অতিরিক্ত শীত হওয়ায় খুবই কষ্ট করতে হচ্ছে। আমরা গরিব তাই কষ্টের সঙ্গে যুদ্ধ করেই বেঁচে থাকতে হবে বলে বিশ্বাস করি। শীতের কারণে কোনো কাজ নেই সারাদিন বসে আছি। আজ আমার পরিবার দু’বেলা না খেয়ে থাকবে।
দিনাজপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র পর্যবেক্ষক তজিবর রহমান বাংলানিউজকে জানান, দিনাজপুরে লাগাতার শৈত্য প্রবাহের আরো একটি দিন অতিবাহিত হলো। মঙ্গলবার দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো আট দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর বাতাসের আদ্রতা ছিলো একশ শতাংশ।
প্রচণ্ড শীত হওয়ায় জনজীবন অচল হওয়ার পাশাপাশি বোরো ধানের বীজতলা কোল্ডইঞ্জুরির কবলে পড়েছে। বীজতলার ধান গাছগুলো হলুদ বর্ণ হয়ে যাচ্ছে। লাগাতার শৈত্য প্রবাহের কারণে দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকার বীজতলা নষ্ট হয়ে বোরো ধানের চাষাবাদ হুমকির মধ্যে পড়েছে।
দিনাজপুর সদর উপজেলার ৬ নম্বর আউলিয়াপুর ইউনিয়নের ধান চাষি ও চেরাডাঙ্গী এলাকার বাসিন্দা বাবুল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, গত কয়েকদিনের লাগাতার শৈত্য প্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে আমার বীজতলার ধানের গাছগুলো হলুদ বর্ণ হয়ে গেছে। এর থেকে প্রতিকার পেতে অতিরিক্ত খরচ করে স্প্রে করতে হচ্ছে। এতে করে বোরো ধান আবাদে অতিরিক্ত খরচা গুণতে হচ্ছে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে জানান, এরকম লাগাতার শৈত্য প্রবাহ হলে সদ্য রোপনকরা বীজতলার ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। লাগাতার শৈত্য প্রবাহে বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থাকেনা। তবে রোদ উঠলেই সব সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৬
এসএইচ