ঢাকা: বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হচ্ছেন আলোচিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের। ইতোমধ্যে তার পক্ষ থেকে হাজির হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
‘ডেথ ফোবিয়া’সহ (মৃত্যু আতঙ্ক) কয়েকটি রোগ উল্লেখ করে গত ১২ জানুয়ারি মুসা জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনমাস পেছাতে দুদক চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছিলেনমুসা বিন শমসের। তার এ আবেদন আমলে না নিয়ে ২৮ জানুয়ারি বেলা ১১টায় হাজির হতে নোটিশ পাঠান দুদকের পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী।
দুদকের এ নোটিশে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনি হাজির হচ্ছেন বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন ড্যাটকো প্রাইভেট লিমিটেডের উপ-মহা ব্যবস্থাপক এটিএম মাহবুব মোর্শেদ।
বুধবার (২৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় তিনি বলেন, ‘যদিও স্যার (মুসা বিন শমসের) অসুস্থ, তবুও নির্ধারিত সময়ের আগেই দুদকে হাজির হবেন’।
গতবারের মতো বড় প্রটোকল নিয়ে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে আসবেন কি-না জানতে চাইলে তিনি সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘আসলেতো দেখতে পাবেনই। স্যারের নিরাপত্তায় যা প্রয়োজন তা হবে’।
গত ১৩ জানুয়ারি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে মুসা বিন শমসেরকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা থাকলেও এর একদিন আগেই তিনি 'ডেথ ফোবিয়া'সহ একাধিক রোগ দেখিয়ে সময়ের আবেদন জানান। সময়ের আবেদনে কপি দুদক চেয়ারম্যান, দুই কমিশনার, অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগের মহাপরিচালক, পরিচালক এবং অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী বরাবর দেন তিনি।
তার এমন আবেদনের প্রেক্ষিতে দুদক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু সে সময় বলেছিলেন, ‘তার চাহিদা অনুযায়ী জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনমাস পেছানো সম্ভব নয়। ১০ কর্মদিবসের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে দুদকে হাজির হতে হবে’।
১০ কর্মদিবস ২৮ জানুয়ারি শেষ হবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা তার আবেদন যাচাই-বাছাই করে এ সময় ঠিক করেছি। তিনি আবেদনপত্রে জিজ্ঞাসাবাদের সময় পেছাতে যে কারণগুলো উল্লেখ করেছেন সেজন্য তাকে এতোদিন সময় দেওয়া যায় না’।
এরপর ২৮ জানুয়ারি হাজির হতে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা তাকে নোটিশ পাঠান।
সুইস ব্যাংকে অর্থ আছে কি-না তা যাচাই করতে গত ৪ জানুয়ারি ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরকে পুনরায় তলব করেছিল দুদক। দুদকের পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী স্বাক্ষরিত একটি নোটিশে তাকে ১৩ জানুয়ারি বেলা ১১টায় সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছিল। এ নোটিশের প্রেক্ষিতে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিনি সময়ের আবেদন জানান।
২০১৪ সালের ১৯ মে তার বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করে দুদক। ওই বছরের শেষের দিকে মুসার সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক।
এর পর ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর মুসাকে প্রথমবার জিজ্ঞাসাবাদ করে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি। ওই জিজ্ঞাসাবাদে সুইস ব্যাংকে তার ১২ বিলিয়ন ডলার অর্থ রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। ২০১৫ সালের ৭ জুন দুদকে সম্পদ বিবরণী জমা দেন মুসা বিন শমসের। সম্পদ বিবরণীতেও তিনি সুইস ব্যাংকে তার ১২ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি প্রায় ৯৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, প্রতি ডলার ৭৮ টাকা হিসেবে) জব্দ অবস্থায় থাকার কথা উল্লেখ করেন।
সুইস ব্যাংকে ৯০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের (বাংলাদেশি প্রায় ৭০০ কোটি টাকা) অলঙ্কার জমার তথ্যও দিয়েছেন তিনি। এছাড়া দেশে তার সম্পদের মধ্যে গুলশান ও বনানীতে দু’টি বাড়ি, সাভার ও গাজীপুরে এক হাজার ২০০ বিঘা জমির কথাও সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ রয়েছে।
ওই জিজ্ঞাসাবাদে হীরার জুতা থেকে শুরু করে আপাদমস্তক মূল্যবান অলঙ্কারে সজ্জিত হয়ে হাজির হন মুসা। সঙ্গে ছিল নারী-পুরুষের অর্ধশতাধিক এক দেহরক্ষী বহর।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৬
এডিএ/এএসআর