ঢাকা: রাজধানীর হাজারীবাগে অভিযান চালিয়ে ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে মুরগি ও মাছের খাবার তৈরির অপরাধে সাতজনকে দণ্ড দিয়েছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ অপরাধে তিনটি কারখানা সিলগালাও করে দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত হাজারীবাগের কালোনগর এলাকার শিপন ফিড মিল, শোয়েব এন্টারপ্রাইজ এবং খলিলের মাছের আঁইশ কারখানায় এ অভিযান চালানো হয়। এ তিনটি কারখানাই সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- তিন কারখানার মালিক জয়নাল আবেদিন (৩২), গোলাম সারোয়ার (৪২) ও নাসির উদ্দিন (৫৫) এবং কর্মী সাঈদ শেখ (৩০), মোহাম্মদ কালাম (৩৬), মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর (২০) ও আবুল কালাম আজাদ (৪০)।
এরমধ্যে জয়নাল ও সারোয়ারকে তিন মাস করে কারাদণ্ড এবং নাসিরকে পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর সাঈদকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড, কালামকে বিশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদণ্ড এবং জাহাঙ্গীর ও আজাদকে পাঁচ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে তিন দিন করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন ৠাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল উদ্দিন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে বিষাক্ত পোল্ট্রি ফিডের রমরমা ব্যবসা। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাড়তি মুনাফার লোভে অবৈধভাবে ভেজাল পোল্ট্রি ফিড ও ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় আনার জন্যই এ অভিযান চালানো হয়।
জয়নাল, সারোয়ার ও নাসির র্যাবকে জিজ্ঞাসাবাদে জানান, ট্যানারি থেকে চামড়ার বর্জ্য এনে সেখানে সিদ্ধ করে ছাদে শুকিয়ে শুটকি বানান তারা। এ ভেজাল শুটকি ১৭ টাকা কেজি হিসেবে পাইকারি বিক্রি করেন এবং নিজেরাই এ শুটকি গুঁড়ো করে ফিড তৈরি করেন। তাদের কাছ থেকে কথিত এ শুটকি কিনে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গিয়ে অন্যরাও ক্ষতিকর ফিড তৈরি করছে।
কারখানার শ্রমিকরা জানান, কয়েক বছর যাবত এখানে এভাবে বিষাক্ত ফিড তৈরি করা হচ্ছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, উন্নতমানের একশ’ কেজি ফিডের মূল্য সাড়ে ৪ হাজার টাকা হলেও ট্যানারির বর্জ্যমিশ্রিত বিষাক্ত ফিড মাত্র ৩ হাজার টাকা।
শুটকির গুঁড়ো এবং আমদানিকৃত মিটবন্ড ব্যবহার করে সাধারণত ফিড তৈরির কথা থাকলেও এগুলোর দাম বেশি হওয়ায় বিকল্প হিসেবে চামড়ার বর্জ্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
এসব বিষাক্ত খাদ্য খেয়ে বৃদ্ধি পাওয়া মাছ, হাঁস-মুরগি বা ডিম খেলে মানবদেহে ক্যান্সার, টিউমার, চর্মরোগ, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ দেখা দেয়।
অভিযানকালে ছিলেন র্যাব-২ এর উপ-পরিচালক ড. দিদারুল আলম ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ডা. লুৎফর রহমান।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল উদ্দিন জানান, কারখানা তিনটি বন্ধ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৬
এনএইচএফ/এইচএ