ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পর্যটন পেশায় অবহেলিত কক্সবাজারের বাসিন্দারা

তুষার তুহিন, স্টাফ করেসপন্ডেট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৬
পর্যটন পেশায় অবহেলিত কক্সবাজারের বাসিন্দারা

কক্সবাজার: পর্যটন নগরী কক্সবাজার। পর্যটন শিল্পকে ঘিরে এ জেলায় গড়ে উঠেছে প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল-কটেজ।

যার মধ্যে রয়েছে ১০টিরও বেশি তারকা মানের হোটেল। আর এসব হোটেল মোটেলে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় অর্ধ লক্ষ মানুষের।  

কিন্তু পর্যটন পেশায় প্রত্যাশা অনুযায়ী অংশগ্রহণ নেই পর্যটন নগরীর মানুষের।   জেলার মাত্র পাঁচ শতাধিক মানুষ পর্যটন শিল্পে কর্মরত রয়েছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার কারণেই তাদের পর্যটন পেশায় নিয়োগ দেয় না হোটেল মোটেলগুলো। ফলে পর্যটন শিল্পে অবহেলিত থেকে যাচ্ছে জেলার স্থানীয় বাসিন্দারা।

কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের হিন্দু পাড়ার মৃত রনজি‍ৎ চন্দ্র ধরের ছেলে প্রকাশ চন্দ্র ধর। কক্সবাজার সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেছেন ২০১২ সালে। সেই থেকে চলতি বছর নাগাদ শহরের কলাতলী রোডের কমপক্ষে দুই ডজন আবাসিক হোটেলের রিসেপশনিস্ট পদে ইন্টারভিউ দিয়েছেন। কিন্তু চাকরি হয়নি।

অভিযোগ করে প্রকাশ বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা সত্বেও আমার চাকরি হয়নি।   কিন্তু আমার সঙ্গে বিভিন্ন ইন্টারভিউতে অংশ নেওয়া অনেক কম শিক্ষিত যুবকেরও চাকরি হয়েছে। যাদের চাকরি হয়েছে তারা সবাই জেলার বাইরের বাসিন্দা। স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ার কারণেই আমার চাকরি হয়নি।

এ বিষয়ে কক্সবাজার হোটেল ম্যানেজার ইউনিয়নের সমন্বয়ক কলিম উল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, পর্যটন শিল্পে কক্সবাজারের ৫ শতাংশ লোকেরও অংশগ্রহণ নেই। আর স্থানীয়দের অংশদারীত্ব না থাকায় পদে পদে হয়রানি হচ্ছে পর্যটকরা। এদিকে স্থানীয় জনগণের মধ্যে দিন দিন পর্যটনের ওপর বিরুপ ধারণা তৈরি হচ্ছে। এ থেকে উত্তোরণের জন্য পর্যটনে স্থানীয়দের অংশগ্রহণ জরুরি।

কক্সবাজার যুব ইউনিয়নের সভাপতি শংকর বড়ুয়া রুমি বলেন, কয়েক বছর আগে থেকেই হোটেল মোটেলে ৭৫ ভাগ স্থানীয় লোকজন নিয়োগের দাবি করে আসছি আমরা। কিন্তু সেই দাবি এখনো উপেক্ষিত রয়ে গেছে।
 
তবে হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, বর্তমানে আবাসিক হোটেলে প্রায় হাজারখানেক স্থানীয় যুবক কর্মরত রয়েছে। তবে ৩০ ভাগ স্থানীয় শিক্ষিত যুবকদের চাকরি দিতে প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় যুবকদের ভাষাজ্ঞান সমৃদ্ধ না হওয়ায় অনেকক্ষেত্রেই চাকরি হচ্ছে না তাদের।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি) কক্সবাজার জেলা শাখার আহবায়ক অনিল দত্ত বলেন, হয়তোবা ভাষার বৈষম্যর কারণে স্থানীয় শিক্ষিত যুবকরা পিছিয়ে রয়েছে। কিন্তু হোটেল মোটেল মালিকরা চাইলেই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন স্থানীয়দের।

স্থানীয় যুবকদের অংশগ্রহণ বাড়াতে পর্যটন ব্যবসায়ীদের আগ্রহ রয়েছে জানিয়ে হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি ওমর সুলতান কোম্পানি বলেন, সমস্যা হলো যুব সমাজ প্রশিক্ষিত নয়। জেলার যুব সমাজ এখনো পর্যটনের সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য নিজেদের তৈরি করতে পারেনি। পাশাপাশি তাদের মানসিক বিকাশও পর্যটন সংশ্লিষ্ট নয়। এছাড়া জেলায় আয়ের অনেক উৎস থাকায় স্থানীয়রা পর্যটন শিল্পে চাকরি করতে চায় না। এর পাশাপাশি উন্নত বিশ্বের ন্যায় এখনো কক্সবাজারের ছাত্রছাত্রীরা পর্যটন শিল্পে পার্টটাইম চাকরি করতে এগিয়ে আসেনি।

এদিকে কক্সবাজার পর্যটন করপোরেশনের ম্যানেজার স্রীজান বিকাশ বড়ুয়া বাংলানিউজকে জানান, স্থানীয়দের অংশগ্রহণ বাড়াতে পর্যটন করপোরেশন সম্প্রতি কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, কক্সবাজার জেলার যুব সমাজকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ শিল্পে সংশ্লিষ্ট করতে শহরের মোটেল প্রবালের জমিতে নির্মিত হবে পর্যটন ইনস্টিটিউট। এছাড়া গ্রহণ করা হয়েছে নানা সচেতনতামূলক কার্যক্রম।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৬
টিটি/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।