রাজশাহী: রাজশাহীর পবা সীমান্তে পদ্মার আগ্রাসী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ জনপদ। ভাঙন রোধে অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা পদ্মানদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরুর ওপর জোর দিচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসন।
এরই মধ্যে পদ্মার ভাঙনে পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি মৌজার শত শত হেক্টর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিলীন হয়েছে বাংলাদেশ-ভারতের সীমানা পিলারসহ বিভিন্ন স্থাপনাও।
পবা উপজেলা প্রশাসন হরিয়ান ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে গত কয়েক বছর ধরে পদ্মার গর্ভে বিলীন হওয়া ভূখণ্ডের সীমানা নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছে।
এর অংশ হিসেবে গত বুধবার (২৭ জানুয়ারি) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ এ ব্যাপারে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন।
তারা গিয়ে দেখেন, পবার হরিয়ান ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চর তারানগর, চরখিদিরপুর, দিয়াড় খিদিরপুর, চর তিতামারি, দিয়াড় শিবনগর, চরবৃন্দাবন, কেশবপুর, চর শ্রীরামপুর ও চর রামপুরের বেশিরভাগ জমিই পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়েছে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চর তারানগরে ২শ’ ঘর-বাড়ি, চারটি মসজিদ, একটি মাদ্রাসা, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দ্বিতল আশ্রয় কেন্দ্র, খানপুর বিজিবি ক্যাম্প এবং ১৬৪ ও ১৬৫ নম্বর আন্তর্জাতিক সীমানা পিলারও।
আর ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চরখিদিরপুরে প্রায় ৪শ’ বাড়ি, একটি বিজিবি ক্যাম্প, একটি পাকা দ্বিতল প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাচটি মসজিদ, দু’টি মাদ্রাসা, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ১৫৯-এর এস-৩, ৪ ও ৫ নদীতে তলিয়ে গেছে।
এ দুই ওয়ার্ডে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস ছিল। ভোটার সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৩০০ জন। বাড়ি-ঘর জমি জমা পদ্মার গর্ভে বিলীন হওয়ায় সব মিলিয়ে এখন দুই হাজার লোক বসবাস করছেন সেখানে।
রাজশাহীর পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেলিম হোসেন জানান, তাদের পুনর্বাসন, নদীগর্ভে বিলীন হওয়া জমি এবং সীমানা পিলারগুলো পুনরায় স্থাপনের লক্ষ্যে তার নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই তদন্ত কমিটি বুধবার ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
পরিদর্শনের সময় উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক এসএম আশরাফুল হক তোতা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কেএম মনজুরে মাওলা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, উপজেলা বিএমডিএ’র সহকারী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান, উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার আসাদুল ইসলাম ও হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম বাচ্চু উপস্থিত ছিলেন।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা দু’টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খানপুর বিজিবি ক্যাম্পের বর্তমান অবস্থানস্থলও পরিদর্শন করেন।
সরেজমিনে সীমানা পিলার স্থাপনে স্থান নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এছাড়াও মধ্যচরে পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণের জায়গা নির্ধারণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
ইউএনও সেলিম হোসেন আরও জানান, ভাঙন রোধের পাশাপাশি চরবাসীর সামাজিক নিরাপত্তা ও শিক্ষার ব্যবস্থাও করা হবে।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুখলেসুর রহমান জানান, ২০১৩ সালের বন্যার পর রাজশাহীর পদ্মানদীর তীর সংরক্ষণের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এটি নিয়ে অনেক চিঠি চালাচালিও হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমানে তীর সংরক্ষণের প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশন হয়ে মন্ত্রণালয়ে আছে। মন্ত্রণালয় একটি কমিটিও গঠন করে। সে কমিটি এলাকা পরিদর্শনও করে গেছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে তীর সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি অবশিষ্ট জনপদও রক্ষা পাবে বলে মনে করেন পাউবোর এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৬
এসএস/এএসআর