পিরোজপুর: পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় ফাতিমা আক্তার ইতি (১০) নামে একটি শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করার দায়ে দু’জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাদের এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
রোববার (৩১ জানুয়ারি) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মো. গোলাম কিবরিয়া এ রায় দেন।
দণ্ডাদেশ প্রাপ্তরা হলেন-মঠবাড়িয়া উপজেলার বুখইতলা গ্রামের মৃত জাহিদ হোসেনের ছেলে মেহেদী হাসান স্বপন (২২) ও মোস্তফা জমাদ্দারের ছেলে সুমন জমাদ্দার (২১)।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ফাতেমা জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাটিবুনিয়া গ্রামের ফুল মিয়ার মেয়ে। সে একই উপজেলার বুখাইতলা-বান্ধবপাড়ায় নানা বাড়িতে থেকে স্থানীয় হাতেম আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো। ২০১৪ সালের ৫ অক্টোবর সকালে গরুকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য ওই বিদ্যালয়ের মাঠে যায় ফাতেমা। দুপুরেও ঘরে না ফেরায় স্বজনরা তাকে খুঁজতে শুরু করেন। পরদিন দুপুরে বাড়ির পাশের একটি বাগানে তার উলঙ্গ ও ক্ষত-বিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায়।
খবর পেয়ে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পিরোজপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। তদন্তে দেখা যায়, শিশুটিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় শিশুটির বাবা বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস এ ঘটনায় ফাতেমার মামাতো ভাই মেহেদী হাসান স্বপনের সংশ্লিষ্টতা পান। পরে মেহেদী ও তার সহযোগী সুমন জমাদ্দারকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। সুমন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, তিনি ও মেহেদী মেয়েটিকে বাগডাসা দেখানোর লোভ দেখিয়ে বাগানে নিয়ে প্রথমে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি যাতে জানাজানি না হয় সেজন্য পরে তারা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে শিশুটিকে হত্যা করেন।
রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, ফাতেমার বড় বোন বিথিকে ভালোবেসে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন মেহেদী। বিথির পরিবার এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে স্বজনরা মেহেদীকে অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেন। কিন্তু তাতেও বিথির প্রতি আকর্ষণ না কমায় স্ত্রীর ওপর প্রায়ই নির্যাতন করতেন তিনি। একই বাড়িতে থাকায় ফাতেমা তাতে বাধা দিতো। এনিয়ে ফাতেমার ওপর রাগ ছিল তার। একপর্যায়ে মেহেদী তার বন্ধু সুমনকে নিয়ে ফন্দি আঁটেন যে ফাতেমাকে ধর্ষণ করে হত্যা করলে স্বজনরা এনিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। সে সুযোগে বিথিকে অপহরণ করে পালিয়ে যাবেন তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী শিশুটিকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়।
মামলায় ১৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় দেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন পিরোজপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুর রাজ্জাক খান বাদশা।
আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. সিরাজুল হক ও আহসানুল কবির বাদল।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৬
এসআই