ঢাকা: ঢাকা-কলকাতা রুটে 'মৈত্রী এক্সপ্রেস' এর যাত্রীদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে আসনের জন্য আর হা-পিত্যেশ করতে হবে না।
আসছে বছরের প্রথম দিন ঢাকা-কলকাতা রুটের 'মৈত্রী এক্সপ্রেস' যাত্রীদের জন্য বড় সুখবর বয়ে আনছে।
বাংলাদেশ রেলের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে সোমবার (ডিসেম্বর ০৫) জানান, বর্তমানে সাত বগি নিয়ে ঢাকা-কলকাতা 'মৈত্রী এক্সপ্রেস' চলাচল করছে। এসি/ননএসি মিলিয়ে এর যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৪১০ জন। জানুয়ারি থেকে দশ বগি নিয়ে ঢাকা-কলকাতা রুটে 'মৈত্রী এক্সপ্রেস' চলাচল করবে সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হয়ে। যাত্রী ধারণ ক্ষমতা থাকবে ৫০০ জন।
পাশাপাশি সুখবর আসছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় খুলনা-বরিশাল বিভাগবাসীদের জন্যও। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে পয়লা জানুয়ারি থেকে খুলনা ও কলকাতার মধ্যে আরও একটি 'মৈত্রী এক্সপ্রেস' চলাচল করবে।
বৃটিশ শাসনামলে খুলনা-কলকাতার মধ্যে সরাসরি রেল যোগাযোগ চালু হয়। ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের পরও এ রেল যোগাযোগ বহাল ছিল। যাত্রী সুবিধার দিকে লক্ষ্য রেখে রেলের মধ্যেই ইমিগ্রেশন-কাস্টমস সারা হতো। বাড়তি কোন সময় ব্যয় হতো না। যাত্রীরা দ্রুততার সঙ্গে গন্তব্যে যাতায়াত করতে পারতেন। কিন্তু ১৯৬৫ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের কারণে খুলনা-কলকাতার মধ্যে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেসে ইমিগ্রেশন-কাস্টমস ব্যবস্থার অভাবে যাত্রীদের ঘণ্টা তিনেক অযথা ব্যয় হয়ে যায়। এ নিয়ে যাত্রী অসন্তোষ রয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ ট্রেনের মধ্যেই রেলেই ইমিগ্রেশন-কাস্টমস সম্পূর্ণ করার চিন্তা-ভাবনা করছেন বলে জানা গিয়েছে।
যাত্রীদের দাবির মুখে একমাস আগে গত নভেম্বরে ঢাকা-কলকাতা রুটে সপ্তাহে চার দিন 'মৈত্রী এক্সপ্রেস' চালু হয়েছে। ১১ নভেম্বর সকালে ভারতের রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু দিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কলকাতা-ঢাকা চতুর্থ মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রার সূচনা করেন। অপরদিকে ১২ নভেম্বর সকাল ৮টা ১০ মিনিটে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে চতুর্থ মৈত্রী এক্সপ্রেস উদ্বোধন করেন।
চতুর্থ মৈত্রী এক্সপ্রেসটি প্রতি শুক্রবার কলকাতা থেকে ও শনিবার ঢাকা থেকে চলছে। বর্তমানে মৈত্রী এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে প্রতি সপ্তাহের বুধ, শুক্র ও রোববার কলকাতার চিৎপুর স্টেশনের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। আর শনি, সোম ও মঙ্গলবার সকালে কলকাতা থেকে ছেড়ে যায় ঢাকার গন্তব্যে।
উভয় দেশে বেশ ঘটা করেই ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রা শুরু হয়। প্রথম দিকে যাত্রীর অভাবে প্রায় বন্ধ হতে বসেছিলো ট্রেনগুলো। ক্রমাগত লোকসান গুনতে থাকায় দু’পক্ষই মৈত্রী নিয়ে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন।
এখন মৈত্রীতে আশাতীত যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। চাহিদার দিনে অনেক সময় টিকিট পান না যাত্রীরা। আর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আসনের টিকিট পক্ষকালের আগে পাওয়া যায় না। সেজন্য যাত্রীরা দীর্ঘদিন ধরেই সপ্তাহে ছয়দিন মৈত্রী চালানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
এখন প্রতি মৈত্রী এক্সপ্রেস থেকে বাংলাদেশ দুই কোটি টাকা আয় করে। অর্থাৎ চার মৈত্রী এক্সপ্রেস থেকে বাংলাদেশের আয় হবে আট কোটি টাকা। এ আয়ে উদ্বুদ্ধ বাংলাদেশ রেল কর্তৃপক্ষ।
আকাশপথ বা স্থল পথের মতো মৈত্রী এক্সপ্রেস এর সিংহভাগ যাত্রী বাংলাদেশের মানুষ। শিক্ষা, চিকিৎসা, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ছাড়াও বহুজনই ভ্রমণের জন্য বেছে নেন কম খরচের হাতের কাছের কলকাতাকেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৬
এসএস/আরআই