ঢাকা: সম্প্রতি দেশের প্রতিটি পাসপোর্ট অফিসের নির্ধারিত কক্ষে সিসিটিভি বসানো বাধ্যতামূলক করেছেন বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান। শুরুতেই বিষয়টিকে বিলাসিতা মনে করা হলেও, এই সিসিটিভিই পাসপোর্ট জালিয়াতি চক্রের বিরুদ্ধে এক দারুণ সাফল্য এনে দিয়েছে।
জানা যায়, সম্প্রতি এই সিসিটিভিতেই পাসপোর্ট জালিয়াতির সময় হাতে নাতে ধরা পড়ায় চাকরিচ্যুত করা হয়েছে ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের চারজন কর্মচারীকে। একই ব্যক্তির নামে একাধিক পাসপোর্ট তৈরিতে ভুয়া আঙুলের ছাপ দেওয়ার সময় নির্দিষ্ট কক্ষে থাকা সিসিটিভিতে ধরা পড়ে বিষয়টি। ভয়াবহ অপরাধের এ চিত্র দেখেই তাদেরকে হাতেনাতে আটক করেন আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের একজন পরিচালক।
পরে অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে তাদেরকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র। চাকরিচ্যুতরা হলেন- অফিস সহকারী আশরাফুল আমিন, মাহমুদুল হাসান, লিখন দাস ও রাশিদা খাতুন। অন্যজন হলেন রাশিদার স্বামী ও পাসপোর্ট অফিসের গাড়িচালক মহসীন। এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরেই এ কাজের সঙ্গে জড়িত বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন।
সূত্র জানায়, মূলত বাইরে থেকে গ্রাহক সংগ্রহের কাজ করতো মহসীন। আর সেসব গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী পাসপোর্ট দিতে সাহায্য করতেন ওই তিন অফিস সহকারী। মোট এগারোটি জাল পাসপোর্ট তৈরিতে সাহায্য করছিলেন তারা।
প্রসঙ্গত, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বা এমআরপি এমন একটি পাসপোর্ট যাতে আবেদনকারীর ব্যক্তিগত তথ্য জলছাপের মাধ্যমে ছবির নিচে লুকানো থাকে। একইসঙ্গে এতে একটি মেশিন রিডেবল জোন (এমআরডেজ) থাকে, যা পাসপোর্ট বহনকারীর ব্যক্তিগত তথ্য ও বিবরণী ধারণ করে। এমআরজেড লাইনে লুকানো তথ্য কেবল নির্দিষ্ট মেশিনের মাধ্যমে পড়া যায়। ফলে ভ্রমণ ডকুমেন্টের নিরাপত্তা বাড়ে। এই এমআরজেড লাইন দ্রুততম সময়ে পড়া যায় ফলে বহিরাগমন প্রক্রিয়াকরণে সময় কম লাগে। এমআরপি কম্পিউটারে মুদ্রিত।
এই এমআরপি তৈরিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির হাতের চার আঙুলের ছাপের প্রয়োজন পড়ে। এক্ষেত্রে একই ব্যক্তির নামে একাধিক পাসপোর্ট তৈরি করতে গেলে হাতের আঙুলের ছাপ দিলে বিষয়টি ধরা পড়ে যায়। এ কারণে এক ব্যক্তির নামে একাধিক পাসপোর্ট তৈরির সময় এই কর্মচারীরা ভিন্ন ব্যক্তির আঙুলের ছাপ দিতে সাহায্য করছিলেন। পাসপোর্ট প্রতি ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে এই ভয়াবহ অপরাধ করছিলেন তারা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই কর্মচারীদের কেউ কেউ মাত্র কয়েক বছর আগে চাকরিতে ঢুকেছেন। আর চাকরি পেতে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হয়ে যাওয়ায় অবৈধ উপায়ে টাকা উপার্জনের চেষ্টা করেছিলেন তারা।
গাড়িচালক মহসীন জানান, ২০১৩-১৪ সালে তার স্ত্রী রাশিদাকে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে অফিস সহকারীর পদে চাকরির ব্যবস্থা করেন।
এদিকে, আগারগাঁও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সিসিটিভিতে ওই ঘটনা ধরা পড়ার পরে দেশের সব পাসপোর্ট অফিসের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়ে আরও সিসিটিভি লাগানোর বিষয়টি ভাবছে কর্তৃপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাসুদ রেজওয়ান বাংলানিউজকে বলেন, শুধু সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহারের ফলে এতো বড় একটা অন্যায় ধরা পড়েছে। কোনোভাবেই এ ধরনের অন্যায় ও অন্যায়কারীকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি পাসপোর্ট অফিসের ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়ার কক্ষে সিসিটভি বসানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কারণ, এটি সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয়। প্রতিমুহূর্তে সিসিটিভি মনিটরিং করা হচ্ছে। সুতরাং অপরাধ করলেই তাকে ধরা পড়তে হবে এবং কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
জানা যায়, পাসপোর্ট জালিয়াতির কাজে ওই চার কর্মচারীর সঙ্গে বাইরের কিছু দালালও যুক্ত রয়েছেন। তবে তাদেরকে ধরতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, আশাকরি এই চক্রের সঙ্গে জড়িতরাও ধরা পড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৬
জেপি/এসএনএস