ঢাকা: বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে আসা সব রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেওয়ার খবর সত্য নয় বলে জানিয়েছেন আইন-বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন এজেন্সির সহযোগিতায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এ সেমিনারের আয়োজন করে।
আনিসুল হক বলেন, আমাদের ষোল কোটি মানুষের দেশ। আমরা কতটুকু নিতে পারি, আর কতটুকু নিতে পারি না- সেটা আমাদের বিবেচনা করতে হবে। যেখানে ত্রিশ-পয়ত্রিশ হাজার রোহিঙ্গা নেওয়ার ব্যবস্থা আমাদের ছিল, সেখানে দুই লাখের উপরে আছে।
এখনো যে আমরা ফিরিয়ে দিচ্ছি, তা না। ফিরিয়ে দেওয়ার খবর সত্য নয়। যাদের না নিলে কোনো গতি থাকবে না, তাদেরকে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সব কিছু বিবেচনা করতে হবে। আমাদের রিসোর্স যতটুকু পারমিট করে আমরা ততোটুকু করছি। পাশাপাশি আমরা এটাও চেষ্টা করছি, সারা বিশ্বে যেন বিষয়টি নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয় এবং রোহিঙ্গাদের সাহায্যে যেন সবাই এগিয়ে আসে-বলেন আইন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আয়লান কুর্দির ব্যাপারে সারা দুনিয়া যেমন স্বোচ্চার ছিল, মায়নমারে মুসলমানদের ব্যাপারে তেমন স্বোচ্চার নয়। তবে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার সজাগ আছে। এরইমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মায়নমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ যে কনসার্ন সেটা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মুক্ত আলোচনাপর্ব থেকে উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তরে আনিসুল হক বলেন, আমরা বিশ্বাস করি আইন বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিরাট প্রতিবন্ধকতা। এ ব্যাপারে আমাদের সংবিধানে পরিষ্কার নির্দেশনা রয়েছে। সেটি অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে আমরা বদ্ধ পরিকার। মানবাধিকার রক্ষায় আমাদের চেয়ে বেশি উৎসাহী কেউ নয়। সে কারণে এগুলো আমাদের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে সরকারিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছি। যেখানেই এটার ব্যত্যয় ঘটবে সেখানেই শক্ত হাতে ব্যবস্থা নেবো।
বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন সম্পর্কে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আঠারো বছরের আগে কোনো কন্যাকে ও ২১ বছরের আগে কোনো ছেলেকে বিয়ে দেওয়া যাবে না- এটা হচ্ছে মূল কথা। তবে একটা আইনকে ভালো আইনে পরিণত করতে হলে এর জটিলতা দূর করার জন্য আউট ওয়ে থাকতে হয়। কারণ, হঠাৎ একটা সমস্যা উদ্ভব হলো সেটার সমাধানের জন্য স্পেশাল প্রোভিশন দরকার। আজকের বাস্তবতায় এই আইনে প্রোভিশন রাখা হয়েছে।
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গেলে আইন ও সংবিধান মানবাধিকারমান্ধব হতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের সংবিধান মত মানবতাবান্ধব সংবিধান পৃথিবীতে কম পাওয়া যাবে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর টানা ২১ বছর এই সংবিধান নিয়ে ফুটবলের ন্যায় খেলা হয়েছে। এই সংবিধানে যতগুলো ভালো জিনিস ছিল সেইগুলোর কোনোটাই রাখা হয়নি। এর সব চেয়ে বড় উদাহরণ, বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের ১৭ জন সদস্যকে হত্যার পর ২১ বছরেও একটা এজাহার হয়নি। ওই ১৭ জনের কি মানবাধিকার ছিল না? ১৯৯৬ সালের পর সেই অবস্থার উন্নতি হয়েছে। সামনের দিনগুলো আরো উন্নতি হবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী সংবিধান প্রণেতা ব্যারিস্টার আমির উল ইসলাম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে মানবাধিকারের বিষয়টিকে যতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে পৃথিবীর আর কোনো সংবিধানে ততোট গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। কিন্তু নানা প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতার কারণে সংবিধানে রক্ষিত মানবাধিকার সেভাবে রক্ষ করা যাচ্ছে না। পদে পদে মানবাধিকর লঙ্ঘিত হচ্ছে।
ইসলাম ধর্মের রেফারেন্স টেনে আমির উল ইসলাম বলেন, আদমকে সৃষ্টির পর ফেরেশতাদের নির্দেশ দেওয়া হলো তাকে সেজদা করতে। অর্থাৎ স্রষ্টার পর মানুষের মযর্দা প্রতিষ্ঠিত হলো। তাহলে আমরা কেন মানুষের মযর্দা, মানুষের অধিকার রক্ষা করতে পারবো না।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হকে সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন- ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুখার্জি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মহাসচিব হিরন্ময় বড়াই, সদস্য মো. নজরুল ইসলাম।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৬
এজেড/বিএস