ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এবার ১১৬ অনুচ্ছেদ সরাতে বললেন প্রধান বিচারপতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৬
এবার ১১৬ অনুচ্ছেদ সরাতে বললেন প্রধান বিচারপতি

এবার সংবিধানের ‘দ্বৈত শাসনের’ ১১৬ অনুচ্ছেদ সংবিধান থেকে অতি তাড়াতাড়ি সরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

ঢাকা: এবার সংবিধানের ‘দ্বৈত শাসনের’ ১১৬ অনুচ্ছেদ সংবিধান থেকে অতি তাড়াতাড়ি সরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

শনিবার (১০ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গনের অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদারের আইন পেশায় ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

প্রায় দেড় মাস আগে এক বাণীতে এ অনুচ্ছেদটিকেই ‘বিচার বিভাগের ধীরগতির অন্যতম কারণ’ বলে উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি।

বিচার বিভাগ পৃথককরণের নবম বার্ষিকীতে দেওয়া ওই বাণীতে প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, ‘১১৬ অনুচ্ছেদের ফলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদোন্নতি, বদলি এবং শৃঙ্খলামূলক কার্যক্রম নেওয়া সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে এককভাবে সম্ভব হচ্ছে না। দ্বৈত শাসনের ফলে বহু জেলায় শূন্যপদে সময়মতো বিচারক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না’।

‘এতে বিচারকাজে বিঘ্ন ঘটে এবং বিচার প্রার্থী জনগণের ভোগান্তি বেড়ে যায়’ বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।  

শনিবারের অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের ১১৬ এবং ১১৬ (এ) সংবিধানের প্রিন্সিপালসের সঙ্গে কনফ্লিক্ট করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে এ দুই বিধান সংবিধানের পরিপন্থী। যা আমাদের পবিত্র বই থেকে অতি তাড়াতাড়ি সরিয়ে দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। এটি থাকায় আমাদের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে’।

‘আমি কোনো এক অনুষ্ঠানে বলেছিলাম এদেশে দ্বৈত শাসন চলছে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আইনমন্ত্রী বললেন যে, চলে না। প্রধান বিচারপতি আইনের অভিভাবক। সংবিধানের অভিভাবক হয়ে বলছি, এটি যদি না হয়, তাহলে আজকে আমরা বিচারকদের ডিসিপ্লিন রুলস কে করবেন? সরকার করবে না আমরা বিচারকরা করবো? তাদের কন্ট্রোল, বদলি কোনো কিছুই আমরা করতে পারছি না। তাই এ অসাংবিধানিক প্রভিশনগুলো তাড়াতাড়ি সরিয়ে দেওয়া হবে বলে আমি আশা করি’।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বলা হচ্ছে, আমাদের ফান্ডামেন্টাল রাইটস খর্ব করা হচ্ছে। আমরা সুপ্রিম কোর্ট কারো পক্ষপাতিত্ব করি না। আপনারা যারা আইনজীবী আছেন, তারাও কোনো দলের প্রতিনিধিত্ব করেন না। আপনারা যখন আইনের শাসনের কথা বলেন, ফান্ডামেন্টাল রাইটসের কথা বলেন, আপনারা যখন জনগণের কথা বলেন, আমি বলবো, আপনাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। দেশের প্রতি সরকারের প্রতি কিছু দায়িত্ব আছে’।

সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘বিচার-কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনে রত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল- নির্ধারণ, পদোন্নতি দান ও ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খখলা বিধান রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত থাকিবে এবং সুপ্রীম কোর্টের সহিত পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তাহা প্রযুক্ত হইবে’।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।

এছাড়াও সাবেক প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টে উভয় বিভাগের বিচারপতিসহ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।  

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আইনের পেশা সম্মানের পেশা। ক্রিম অব দ্য সোসাইটি দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। একটি অংশ চলে যায় আইন পেশায়, একটি ক্ষুদ্র অংশ চলে যায় বিচার বিভাগে। তারা দুই ভাগে ভাগ হলেও তাদের প্রত্যেকের উদ্দেশ্য হলো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। সে অর্থে আমরা একই পরিবারের সদস্য। আইনজীবীরা হলেন জাতির বিবেক। বিচারকরাও জাতির বিবেক। কিন্তু তাদের পক্ষে কোড অব কন্ডাক্টের কারণে কথা বলতে পারেন না পাবলিকলি’।

সংবিধানের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এই সংবিধান একটি সোশ্যাল ডকুমেন্ট। এই সংবিধানে বলা আছে,  আমাদের বঙ্গবন্ধু প্রথমেই বলেছেন, এই দেশে এমন একটা সংবিধান হবে, যেখানে কমপ্লিট জাস্টিস থাকবে, রুল অব ল’ মেইনটেইন করা হবে, যাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সংবিধানের সঙ্গে তুলনা করা যায়। আমরা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, আমাদের সংবিধান এ রকমই ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা দেখলাম, এই সংবিধান ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছে। এই সংবিধানে মৌলিক অধিকার রক্ষিত করা হয়েছে। এই সংবিধানে রক্ষিত করা আছে, যারা সমাজে অনুন্নত তাদেরকেও। সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদ প্রটেকশন করে দিয়েছে, জুডিশিয়ারি রিভিউয়ের জন্য আসতে পারবেন যে কেউ’।

তিনি বলেন, ‘আমরা সংবিধানের অসাংবিধানিক প্রবিশনগুলো বাতিল করেছি। কিন্তু আমরা এখনও দেখতে পাচ্ছি, বর্তমানে সংবিধানে যে ১১৬ ধারা এবং ১১৬ (এ), সেগুলোকে যথাক্রমে চতুর্থ এবং পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ১১৬ এবং ১১৬ (এ) সন্নিবেশন করা হয়েছে। এ দুই বিধান থাকার পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু যে ১১৬ রাখার বিধান করেছিলেন,  ইনডিপেনডেন্ট অব জুডিশিয়ারি এবং রুল অব ল’ বলতে আইনের শাসন বলতে কি রকম করতে হবে, সেটিকে আমরা বাদ দিয়ে দিয়েছি। আমরা পঞ্চম সংশোধনী, সপ্তম সংশোধনী,  ত্রয়োদশ সংশোধনী ও ষোড়শ সংশোধনী- প্রত্যেকটি সংশোধনীতে বাতিল করেছি’।

‘পার্লামেন্টের আইন করার যথেষ্ট ক্ষমতা আছে, পার্লামেন্ট সম্পূর্ণভাবে সংবিধানের সংশোধন করতে পারবে। এমনকি সংবিধানকে বন্ধ করে দিতে পারবে। সংবিধান আমাদের সুপ্রিম কোর্টকে বন্ধ করে দিতে পারবে। এটি অলরেডি সেটেল হয়ে গেছে, ভারতের সদানন্দের মামলায়। কিন্তু পার্লামেন্ট একটা জিনিস পারবে না, সেটি হলো, আজকে যদি সরকার বলে দেয় সুপ্রিম কোর্ট থাকবে না, আমাদের কিছুই করার থাকবে না। পার্লামেন্টের এই ক্ষমতা আছে। কিন্তু পার্লামেন্টের এই ক্ষমতা নেই যে, মেইন পিলারস অব দ্য কনস্টিটিউশন। সংবিধানের মেইন পিলার যেটি আমরা পঞ্চম সংশোধনী, ষষ্ঠ সংশোধনীসহ সবগুলোতে বাতিল করেছি যে, বেসিক স্ট্রাকচার অব দ্য কনস্টিটিউশন চেঞ্জ করে কোনো সংবিধান বা কোনো আইন করা যাবে না’।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৬

ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।