ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কিশোরীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে শিক্ষক আটক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৬
কিশোরীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে শিক্ষক আটক ছবি: ফাইল ফটো-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

আদুরী খাতুন (ছদ্মনাম)। বয়স ১৪ বছর। বাবা নাসির উদ্দিন। মা জাহানারা বেগম। দুই ভাই এক বোন।

বগুড়া: আদুরী খাতুন (ছদ্মনাম)। বয়স ১৪ বছর।

বাবা নাসির উদ্দিন। মা জাহানারা বেগম। দুই ভাই এক বোন। ভাই-বোনের মধ্যে আদুরী বড়। প্রায় চার বছর আগে বাবা মারা যান। মা বিয়ে করে অন্যের সঙ্গে সংসার বাধেন। এরপর ঘোর অন্ধকার নেমে আসে আদুরীর জীবনে। ছোট দুই ভাইকে নিয়ে মহাবিপাকে পড়ে যায় এই মেয়েটি।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের কাশিয়াবালা গ্রামের বাসিন্দা আদুরী। বাবা মারা যাওয়ার পর কিছু দিন চলে যায় এভাবে। আর সেই অন্ধকারে আলোর দিশারী হয়ে হাজির হন শিক্ষক মাসুদ রানা। আদুরীকে তার বাসায় কাজের জন্য নিয়ে যান এই শিক্ষক। শেরপুর পৌরশহরের শান্তিনগর এলাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করেন তিনি। মাসুদ রানা ভীমজানি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক।  
 
দীর্ঘসময় মেয়েটি বাসায় কাজ করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকের লোলুপ দৃষ্টি পড়তে থাকে মেয়েটির ওপর। প্রায় ৩ মাস আগের ঘটনা। সেই থেকে জোরপূর্বক মেয়েটির ওপর যৌন নির্যাতন চালাতে থাকেন শিক্ষক মাসুদ রানা। রাজি না হলে তার ওপর শারীরিক নির্যাতনও চালাতেন ওই শিক্ষক।
 
বৃহস্পতিবার (০৮ ডিসেম্বর) রাত অনুমান ১০টার দিকের ঘটনা। কাজের মেয়েকে যৌন নির্যাতন করা নিয়ে স্ত্রী শিল্পীর সঙ্গে স্বামী মাসুদ রানার মনোমালিন্য চরম আকার ধারণ করে।
 
তাদের মধ্যে প্রচণ্ড ঝগড়া বেধে যায়। এরপর বাসার দরজা-জানালা বন্ধ করে শিল্পী ও তার স্কুল পড়ুয়া মেয়ে মিলে আদুরীকে মারধর করতে থাকেন।
 
পরে তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে যান। বাসার দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। মেয়েটিকে উদ্ধার করে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সঙ্গে যৌন নির্যাতনকারী শিক্ষককে আটক করে থানায় খবর দেন।
 
খবর পেয়ে শুক্রবার (০৯ডিসেম্বর) ভোর রাতে পুলিশ যৌন নির্যাতনকারী শিক্ষককে আটক ও মেয়েটিকে উদ্ধার করে থানায় হেফাজতে নিয়ে যায়।
 
শুক্রবার (০৯ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার দিকে শেরপুর থানা হেফাজতে থাকা আদুরী তার ওপর চালানো শিক্ষক মাসুদ রানার দীর্ঘ যৌন ও শারীরিক নির্যাতনের বর্ণনা দেন।
 
আদুরীর বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, শিক্ষকের স্ত্রী শিল্পী একটি দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। তাদের একমাত্র মেয়ে স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়েন। ফলে বাসা বেশির ভাগ সময় ফাঁকা থাকে। এ সুযোগ কাজে লাগান এই শিক্ষক। অনেক দিন স্কুল থেকে সবার আগেই বাসায় চলে আসেন তিনি। আবার অনেক দিন স্কুলে যান না।
 
আদুরী আরো জানায়, শিক্ষক মাসুদ রানা সুযোগ পেলেই দিন-রাতের যে কোনো সময় তার ওপর যৌন নির্যাতন চালাতেন। অস্বীকৃতি জানালে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। জোরপূর্বকভাবে তার ওপর যৌন নির্যাতন চালাতেন এই শিক্ষক।
 
থানা হাজতখানায় আটক শিক্ষক মাসুদ রানা তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। কাজের মেয়েটি অন্যের সঙ্গে প্রেম করে। এ কাজে বাধা দেওয়ায় সে আমাকে ফাঁসাতে আমার বিরুদ্ধে যৌন ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছে।
 
শেরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বুলবুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, স্থানীয়দের সহায়তায় যৌন নির্যাতনকারী শিক্ষককে আটক করা ও যৌন নির্যাতনের শিকার কাজের মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা নেওয়া হবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৬
এমবিএইচ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।